%%sitename%%

এক নজরে

শ্রাবণ সংক্রান্তিতেও কী মিলবে ইলিশ, থাকছে প্রশ্ন

By admin

July 27, 2020

কলকাতা ব্যুরো : আষাঢ় পেরিয়ে গিয়েছে আগেই। এখন শ্রাবনেরও প্রায় মাঝামাঝি। বর্ষা মানেই বাঙালির পাতে ইলিশ চাই। ইলিশ ভাজা আর তেল আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে গরম ভাত। ইলিশ এর ডিম ভাজা। সর্ষে ইলিশ। ইলিশের ঝাল, ঝোল দিয়ে গরম ভাত মেখে মেখে ঝির ঝিরে বৃষ্টিতে মধ্যাহ্ন ভোজন। সে কি ভাগ্য জুটবে এ বছর? এখন ঋত্বিকের ভাষায় বলতে হয়, ভাবো বাঙ্গালী ভাবো। ভাবা প্র্যাক্টিস করো। কয়েকবছর ধরে খোকা ইলিশ বাজার থেকে তুলে ল্যাজা-মুড়োও যখন চিবিয়ে কচ করে গিলে নিয়েছিলে! বলি,তখন মনে ছিল ? ঠ্যালা সামলাও এবার। কত বিজ্ঞানী তখন কত করে কাগজ টিভিতে পই পই করে বললেন। মাছগুলো বড় হতে দিন। ডিম পাড়তে দিন। বলি নোলা তো তখন লক লক করছিল। এবার ? বর্ষা আছে কিন্তু কোথায় তোমার সাধের ইলিশ।

ইলিশ গত দেড় দু’দশক ধরেই ৪০ – ৬০ শতাংশ কম ধরা পড়ছে। প্রযত্নে সেই নোলা।যে সমস্ত ট্রলার ১০০০ কিলো ( ১ টন ) ইলিশ নদি আর সমুদ্র থেকে ধরত এক ট্রিপে এখন তারা একবার চক্কর দিয়ে ২০০ কিলোও তুলতে পারছে না। বলছে ভবিষ্যতে আরও কমবে। একে ওকে দুষে লাভ নেই। আঙ্গুল যেন নিজের দিকেই ওঠে।

যথেচ্ছ খোকা ইলিশ ধরা আর খাবার মাশুল তো দিতে হবে বাবা! ৩০০ গ্রাম, ৪০০গ্রাম- যা পেয়েছ কয়েক বছর গিলে নিয়েছ। আরে বাবা ওদের একটু বড় হতে দাও, ডিম পারতে দাও – কে শোনে কার কথা! বাজার গিয়ে – দে তুলে দে – আঁ । তারপর গিন্নীর কাছে রান্নাঘরে বায়না – এখনই চাই – ভাজা, কলিয়া, ঝাল- ঝোল। এবছর আর হবে? কয়েক প্রজন্ম ইলিশ নষ্ট করেছ। এ পাড়ার অমুক দাদার ইলিশ উৎসব তো ও পাড়ার তমুক দাদার নালে-ঝোলে অত গিললে হবে ?

আশা ছিল। লকডাউনে বেশ কয়েক মাস মাছ ধরা বন্ধ ছিল। সবাই ভেবেছিল এবছর খোকাবাবুরা বড়ো হবে, অন্ততঃ এক -দেড় কেজি মতো। ও বাবা।এখন দেখছি সে গুড়ে বালি। পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য বিভাগের এক বড় কর্তা বললেন, ” মমতা যে বছর ক্ষমতায় এলো, ২০১১ সালে ১৭-১৮ হাজার টন মাছ উঠেছিল।আর এখন গত ২০ – ৩০ দিন ধরে মাছ ধরা নৌকা নদী সমুদ্দুর তোলপাড় করে দিচ্ছে। প্রাত্যহিক যে মাছ গত কয়েক দশক আগে উঠত তার ১ শতাংশও উঠছে না। এ বছর অবশ্য আম্ফানে অনেক মাছ ধরার নৌকা ভেঙ্গে চুরে একেবারে একসা হয়ে গেছে।” গঙ্গার ইলিশ , পদ্মার ইলিশের গল্প এবছর কলকাতায় গল্পকথা।

যা পাওয়া যাচ্ছে হাত দিলে ছেকা লাগবে। লেক মার্কেটে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বলে কিনা ৮০০ টাকা আর ৮০০ গ্রাম ১০০০ – ১২০০ টাকা। ভাবা যায়? আবার হাঁক পেরে শুনিয়ে দিলে – নিয়ে যান, নিয়ে যান ।সাপ্লাই না বাড়লে এটাই ১৫০০ – ১৬০০ হবে।” মধ্যবিত্ত বাঙালি তায় করোনার বাজার।ভালো লাগে, বলুন?কলকাতা বিশ্ববিদ্যালযের সমুদ্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন প্রধান অমলেশ চৌধুরীর কথা শুনে এক্কেবারে থ । ইলিশও এখন নাকি খুব চালাক হয়ে গেছে। আগে ঝাঁকে ঘুরত। জাল ফেললে একসঙ্গে অনেক ধরা পড়ত। এখন আর বড়ো ঝাঁকে ঘুরছে না। এখানে একটা ছোটো ঝাঁক তো কয়েক কিমি দূরে আর একটা ছোটো ঝাঁক। বোঝো কাণ্ড!অমলেশ বাবুর মতে, পদ্মায় গভীরতা বেশি বলে ওখানে ইলিশের বংশবৃদ্ধি ও নাকি বেশি হয়। মাছও হয় পেল্লাই সাইজের । বঙ্গোপসাগর থেকে তাই ইলিশ পদ্মায় চলে যায় বংশ বৃদ্ধি করতে। এবারেও হয়েছে তাই। বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ ভর্তি । পশ্চিমবঙ্গ আঙ্গুল চুষছে । তাছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এলেম আছে বটে। ইলিশ ধরা তো বেশ কয়েক মাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন । প্ৰতি বছর নিয়ম করে দু’ মাস বন্ধ থাকছে ইলিশ ধরা। কত ক্ষোভ বিক্ষোভ জেলেদের। কিন্তু হাসিনার না তো না। ২০১২ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ – ২০০৫ বাংলাদেশ ২০০০ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল ভারতে। ২০১১ এ ৬০০০ টন। ব্যাস ওই শেষ। হাসিনার সাফ কথা, দেশে মাছ থাকলে তবে তো রপ্তানি। অবশ্য গত বছর দুর্গাপূজায় ৫০০ টন ইলিশ ছেড়েছে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে। কিন্তু এবছর সত্যিই বেহাল দশা। তবু বলব, কিছুটা আশা এখনও আছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আর পূবালী হাওয়ায় ইলিশের দয়া হলেও হতে পারে।