এক নজরে

রাজীবকে সরিয়ে “খেলরত্নে” এবার মেজর ধ্যানচাঁদ

By admin

August 06, 2021

কলকাতা ব্যুরো: খেলরত্ন পুরস্কার থেকে এবার সরে গেল রাজীব গান্ধীর নাম ৷ এবার থেকে হকির কিংবদন্তি মেজর ধ্যানচাঁদের নামে নামাঙ্কিত হবে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারের নাম ৷ শুক্রবার টুইট করে একথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৷ এবার থেকে ক্রীড়াক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারের নাম হতে চলেছে ‘মেজর ধ্যানচাঁদ খেল রত্ন অ্যাওয়ার্ড ইন স্পোর্টস অ্যান্ড গেমস’৷ প্রতিবছরই কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া দফতর এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে খেলরত্ন থেকে রাজীব গান্ধীর নাম হটানোর দাবি উঠছিল ৷ এই পুরস্কারে কোনও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের নাম জুড়ে দেওয়ার দাবি ওঠে৷ কুস্তিগীর ববিতা ফোগটও এই দাবি তুলেছিলেন ৷ অবশেষে খেলরত্নের পাশ থেকে উঠে গেলো প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নাম ৷

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্তত ৪ বছর ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে কোণও খেলোয়াড়ের নাম ওই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। পুরস্কারপ্রাপককে দেওয়া হয় একটি পদক, সার্টিফিকেট ও নগদ ২৫ লক্ষ টাকা। প্রধানমন্ত্রী আজ টুইটে লেখেন, “খেলরত্ন পুরস্কারের নাম বদলে মেজর ধ্যানচাঁদের নামে চালু করার প্রচুর অনুরোধ এসেছে আমার কাছে ৷ সাধারণের অনুরোধ রেখে আজ থেকে খেলরত্নের নাম মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন পুরস্কার করা হলো ৷ জয় হিন্দ ৷”

প্রসঙ্গত, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামে ১৯৯১-৯২ সাল থেকে খেলরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। তখন শুধুমাত্র এক বছরের পারফরম্যান্সের নিরিখেই এই পুরস্কার দেওয়া হতো। কিন্তু পরে অ্যাওয়ার্ড সিলেকশন কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে কোণও খেলোয়াড়ের ৪ বছরের পারফরম্যান্স বিচার করা হয়। তবে কোণও খেলা থেকে ২ জনের বেশি নাম গ্রহণ করা হয় না।

তবে হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদের ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রয়েছে৷ ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকসে ১৩টি গোল করেছিলেন ধ্যানচাঁদ ৷ মোট তিনটি অলিম্পিকসে দেশকে সোনার পদক জেতানোর পাশাপাশি ৩৯টি গোল করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর ৷ ২৯ আগস্ট ধ্যানচাঁদের জন্মদিনটি জাতীয় ক্রীড়াদিবস হিসেবে পালিত হয়৷ ওইদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ৷ খেলরত্ন পুরস্কার ছাড়াও অর্জুন ও দ্রোণাচার্য পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ আজও তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁর গোল করার নজির এবং তিনটি অলিম্পিকে (১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৬) হকিতে স্বর্ণপদকের জন্য। ১৯৭৯ সালের ৩ ডিসেম্বর লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

খেলরত্ন পুরস্কার ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান। দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি হিসাবে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে ভারত সরকার। ইতিমধ্যেই শচীন তেণ্ডুলকর, অভিনব বিন্দ্রা, বিশ্বনাথন আনন্দ, পঙ্কজ আডবানী, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ক্রীড়াবিদরা খেলরত্ন পেয়েছেন। প্রথমবার রাজীব গান্ধী খেল রত্ন পুরস্কার পান দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ। ১৯৯১-৯২ সালে তাঁর পারফরম্যান্সের জন্যই খেলরত্ন পান তিনি।

অন্যদিকে, ৪১ বছর বাদে এবছর অলিম্পিক হকিতে পদক এনেছে ভারতীয় পুরুষ দল। মহিলা দলও চার দশক বাদে প্রথমবার অলিম্পিকের সেমিফাইনালে উঠেছে। অলিম্পিকে চতুর্থ হয়েছে মহিলা হকি দল। ঠিক এই সময়ই ধ্যানচাঁদকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে খেলরত্ন পুরস্কার থেকে আচমকা রাজীব গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়ায় রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই।

পর্যবেক্ষকদের মতে ধ্যান চাঁদ ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তাঁর নামে যেকোনো পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাম যেভাবে বাদ দেওয়া হলো তাতে অসম্মানিত বোধ করতেই পারেন কংগ্রেসিরা। শুরু হতে পারে রাজনৈতিক যুদ্ধ। এরই মধ্যে কংগ্রেসের তরফে সাংসদ কে সুরেশ বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখের। রাজীব গান্ধী ভারতকে ২১ শতকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনি যুব সমাজকে খেলাধুলো করতে অনুপ্রেরিত করেছিলেন। গেরুয়া রঙে রাঙাতেই এই পদক্ষেপ বর্তমান সরকারের। তাই অন্য নাম দিয়েছে তারা।’ একেই পেগাসাস নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে যুদ্ধ তারওপর খেলরত্ন পুরস্কার থেকে রাজীব গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়া আলাদা মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।