পৃথিবীতে কোন শহর সব থেকে প্রাচীন, এই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ইতিহাসবিদরা তাদের নিজেদের ব্যাখা থেকে নানা যুক্তি দিয়েছেন। তবে যুক্তি দিয়ে কোন শেষ নেই কারোণ, সেই বিতর্ক আজও শেষ হয়নি। মানুষের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল ৬ হাজার বছর আগে। তবে কোন প্রাচীন শহর পৃথিবীতে প্রথম ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে দেখা গিয়েছে পৃথিবীতে এমন বহু শহর ছিল যেগুলো সঠিক ভাবে হয়ত শহরের মর্যাদা পায়নি। তবে সেখানে বহু মানুষ বসবাস করতেন।
বহু ইতিহাসবিদের মতে, জনসংখ্যা এবং জনবসতি এই দুই নিয়েই শহরের ব্যাখা দেওয়া হয়। প্রাচীন শহরের বিভিন্ন ঘরবাড়ি, মন্দির, স্থাপত্য শিল্পের ওপর ভিত্তি করে সেই শহরকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দেওয়া হয়। কারণ পৃথিবীর বুকে এমন বহু শহর ছিল যেগুলি একই সময় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করলেও তাদের প্রাচীনত্ব নিয়ে আজও রয়েছে ধোঁয়াশা।
যীশুর জন্মের ৩০০ বছর আগে ৫ হাজার মানুষের জনবসতি নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই শহরটি। তবে অন্য একটি সূত্রে জান গিয়েছে, সেই সময় মেক্সিকোতে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ বাস করতেন। তবে শহরগুলি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট সংগ্রাম করেছিল। খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান করাই ছিল তাদের প্রধান সংগ্রাম। এর পাশাপাশি ভূমিকম্প, ভূমিধসের মতো ঘটনা তখনকার মানুষকে বিব্রত করেছিল। প্রাচীন বোস্টন শহরকে তাই তৈরি করা হয়েছিল সমস্ত নিয়ম মেনেই।
অনেক পুরাতত্ত্ববিদরা মনে করেন, সেই যুগে শহরের প্রাচীনত্ব তাদের ধর্মের ওপরেও অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। শহরে মানুষের বসবাসের প্রধান আকর্ষণ হিসাবে সেটাও ছিল অন্যতম একটি কারণ। মনে করা হয়, ইন্দুস ভ্যালি যা বর্তমানে পাকিস্তান বলে পরিচিত এবং ভারতবর্ষের জন্ম হয়েছিল ৩ হাজার বছর আগে। সমসাময়িক বয়স হিসাবে ধরা হয় এই দুই দেশের প্রতিবেশী দেশ চীনকেও। তবে এদের সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, যা ১০ হাজার বছরের পুরনো। এখানকার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ইতিহাসবিদদের সেই প্রমাণই দিয়েছে। সেই সময় এখানে প্রায় দু’হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার বাসিন্দা বসবাস করতেন। সেটা ছিল এখন থেকে প্রায় ৯ হাজার বছর আগে।
ক্যাটালহউক- যা বর্তমানে তুর্কি দেশে রয়েছে সেখানেও হাজার হাজার মানুষের বাসস্থানের নিদর্শন মিলেছে। সেই সময় বাজারের পাশাপাশি দ্বিতল বাড়ির নিদর্শনও পাওয়া গিয়েছে। তাদের শহরগুলিকে তারা এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যাতে বহু মানুষ একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। ব্রোঞ্জযুগে টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদী যা বর্তমানে ইরাকে রয়েছে তাকে কেন্দ্র করেও তৈরি হয়েছিল প্রাচীন সভ্যতা। সেখানেও তখন ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন।
তবে পৃথিবীর প্রাচীন শহরের খোঁজে আজও প্রত্নতত্ত্ববিদরা তাদের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই তালিকায় দামাস্কাস এবং জেরুজালেমকেও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাই অনেক সময় প্রশ্ন ওঠে, প্রাচীন শহরের তকমা কাকে দেওয়া উচিত? প্রাচীনত্ব না দীর্ঘতম। কে এই লড়াইয়ে এগিয়ে। এই তর্ক থাকবেই, সঙ্গে থাকবে ইতিহাসের সেরা হয়ে ওঠার লড়াইও।
মেক্সিকোর লিখিত ইতিহাস তিন সহস্রাব্দেরও বেশি বিস্তৃত।১৩,000 বছরেরও বেশি আগে প্রথম জনবহুল, মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকো (মেসোআমেরিকা বলা হয়) জটিল আদিবাসী সভ্যতার উত্থান এবং পতন দেখেছিল। মেক্সিকো পরে একটি অনন্য বহুসংস্কৃতির সমাজে বিকশিত হবে। মেসোআমেরিকান সভ্যতাগুলি বিজয় এবং শাসকদের রাজনৈতিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গ্লিফিক লেখার পদ্ধতি তৈরি করেছিল। ইউরোপীয় আগমনের পূর্বের মেসোআমেরিকান ইতিহাসকে প্রাক হিস্পানিক যুগ বা প্রাক-কলম্বিয়ান যুগ বলা হয়।১৮২১ সালে স্পেনের কাছ থেকে মেক্সিকোর স্বাধীনতার পর, রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। ফ্রান্স, মেক্সিকান রক্ষণশীলদের সহায়তায়, দ্বিতীয় মেক্সিকান সাম্রাজ্যের সময় ১৮৬০-এর দশকে নিয়ন্ত্রণ দখল করে, কিন্তু পরে পরাজিত হয়। ১৯ শতকের শেষের দিকে শান্ত সমৃদ্ধ বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য ছিল কিন্তু ১৯১০ সালে মেক্সিকান বিপ্লব একটি তিক্ত গৃহযুদ্ধ নিয়ে আসে।১৯২০ সালে শান্তি পুনরুদ্ধার করার সঙ্গে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্রুত ছিল।
সময়টা নেহাত কম নয়। অন্তত বেশ কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে যাওয়াই যায়। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, মানুষের হাত ধরে জন্য নিয়েছে অজস্র শহর। সময়ের গর্ভে হারিয়েও গিয়েছে অনেকগুলিই। আবার এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, এমন শহরের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। ইতিহাস সেখানে থমকে থেমে নেই। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। একইসঙ্গে জড়িয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া উপাদানদেরও।