এক নজরে

Abhishek Banerjee: বিভিন্ন জেলায় কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ, নাম নেই অভিষেকের

By admin

February 08, 2022

কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে যখন পুরভোট নিয়ে তৃণমূল শিবিরের চাপানউতোর তুঙ্গে, সেই সময় ফলতার যুব তৃণমূল সভাপতি তথা তৃণমূলের দাপুটে যুব নেতা জাহাঙ্গীর খানের ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করল নবান্ন। জেলায় জেলায় তৃণমূল যুব সভাপতিদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করছে পুলিশ। সেই তালিকা থেকে বাদ গেলো না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীরও। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর রবিবার রাতে গ্রেফতার হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত কালচিনি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাশাং লামা। সূত্রের খবর, এই পাশাং লামাকে দলে নিয়োগ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।  অভিযোগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল থেকে কাঠ চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন পাশাং লামা।

তবে অভিষেক ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীর খানের নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া ও পাশাং লামার গ্রেফতার নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এছাড়া আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে সোমবার ফের গোয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি তাঁর সফর আপাতত বাতিল করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে সোমবার গোয়ায় গেলেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? সেই বিষয়টি এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অনিবার্য কারণবশতই তিনি গোয়া সফর বাতিল করেছেন বলে খবর। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ায় ভোট। সে রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের জন্য কবে তিনি উড়ে যাবেন কিংবা আদৌ যাবেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। তবে ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে কিছুটা হলেও যে যুবরাজ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন তা এই দুই ঘটনায় কিছুটা হলেও পরিষ্কার।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আশাতীত ফল করতে পারেনি তৃণমূল। বিজেপির উত্তরণ হয়েছিল লোকসভায়। দুই থেকে বেড়ে ১৮টি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল তারা। তারপরই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়োগ করা হয় পরামর্শদাতা হিসেবে। প্রশান্ত কিশোর তাঁর সংস্থা আই প্যাককে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে সাফল্যের সরণিতে নিয়ে আসেন। আর আইপ্যাককে কাজে লাগিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তাই প্রথম থেকেই অভিষেক-প্রশান্ত সুসম্পর্ক দলের অন্দরে কারও অজানা নয়। তবে তাল কাটলো ১০৮ পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই। ধীরে ধীরে প্রকট হতে শুরু করেছে বিচ্ছেদের লক্ষণরেখাও। সাধারণতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তবে সেই ’জোট’ কি এবার তবে ভাঙতে চলেছে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা পুরভোটের জন্য যে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছিলেন, তার সঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রার্থী তালিকার মিল না থাকা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পুরো দায় ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাকের ঘাড়ে চাপিয়েছে তৃণমূলের একাংশ ৷ আর এর জেরেই আইপ্যাক ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল চওড়া হতে শুরু করেছে। তবে বিষয়টা দলের সবার অজানা থাকলেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ের কিছুই জানেন না, এটা মেনে নিতে পারছেন না দলের একাংশ।

পুরভোটের প্রার্থীতালিকা প্রত্যাশামতো না হওয়ায় বিস্তর অসন্তোষ তৃণমূলে। তার বহিঃপ্রকাশও দেখা গিয়েছে নানা জায়গায়। কোথাও কোথাও দলত্যাগের মতো অনভিপ্রেত ঘটনাও ঘটেছে। এবার এই বিভ্রাট সামলাতে আসরে নামলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সমস্ত বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টা করলেন তিনি। বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী দায়িত্বে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করে দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, প্রার্থী তো একজনই হবেন। দলীয় পতাকার পিছনে এক হয়ে সবাই দাঁড়াবেন। তবে কোনও জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি অভিষেককে। আর দলের এমন সিদ্ধান্তের পর কিছুটা হলেও “ব্যাকফুটে” যুবরাজ। তবে আইপ্যাক ও দলের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সোমবার মমতাকে বিমানবন্দরে প্রশ্ন করা হলে তিনি একটা শব্দও ব্যায় করতে চাননি।

সূত্রের খবর, ১০৭টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা নিয়ে আইপ্যাকের উপর ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ । অন্যদিকে আবার আইপ্যাক ক্ষুব্ধ কিভাবে নির্দিষ্ট নীতি ঘোষণা করেও সেই নীতির বাইরে গিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে । গত দু’-তিন দিন ধরে প্রার্থীতালিকা ঘিরে যে বিক্ষোভ হচ্ছে ৷ আর যেভাবে বারবার আইপ্যাকের দিকে আঙুল উঠছে, তাতে তাদের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলে ওই সংস্থা মনে করছে।

যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি এই মুহূর্তে তৃণমূল দ্বিধাবিভক্ত। একটা সময় তৃণমূল বনাম যুব তৃণমূলের যে দ্বন্দ্ব ছিল, তাই এখন প্রকট হচ্ছে আদি এবং নব্য তৃণমূল। অভিষেক অনুগামী তৃণমূলের একাংশকে এবারের তালিকায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা সুব্রত বক্সীর তৈরি তালিকায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পুরনোদের নাম। তাই এই দ্বন্দ্বে মাঝখানে চক্ষুশূল হচ্ছে আইপ্যাকের মতো সংস্থা। কয়েকদিন আগেই দলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয় অভিষেকের। পরে দলের হস্তক্ষেপে তা মেটে। সেই বিষয় মিটলেও প্রার্থী তালিকায় এমন চরম ভুল শাসকদলের মুখ পুড়িয়েছে। আর যার জন্য কিছুটা হলেও অভিষেককে কাঠগড়ায় তুলছেন দলের একাংশ। আর সেই কারনেই কি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন যুবরাজ? জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।  

তবে সোমবার প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ দমনে আসরে নামলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল মহাসচিবের বক্তব্য, প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও জায়গাই নেই। এত বড় নির্বাচন, মিনি বিধানসভা। তাতে অনেকেই দাঁড়াতে চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়ন করেছেন, তার ভিত্তিতে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে। কিন্তু প্রার্থী একজনই হয়। যাঁদের অসন্তোষ হয়েছে, তাঁদের বলব – নেত্রী এক, পতাকা এক। আমি বলব, চিহ্নও এক। তাই দলকে যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দাঁড় করিয়েছেন, মানুষের আস্থা পেয়েছেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তালিকায় অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁকেই সমর্থন করবেন।

তিনি আরও জানান, সংশোধিত তালিকা জেলা সভাপতিদের পাঠানো হয়েছে। সেটাই চূড়ান্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি দলের সকলের কাছে আবেদন জানান, গতবারের থেকে বেশি আসনে জেতাতে হবে। জেলায় জেলায় নির্বাচন সংক্রান্ত সমন্বয় রাখার জন্য তিনি আলাদা করে কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করে দিলেন। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্বে পুলক রায়। উত্তর ২৪ পরগনার সকলের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করবেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পার্থ ভৌমিক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে শুভাশিস চক্রবর্তী, অরূপ বিশ্বাস। ফিরহাদ হাকিম দেখবেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর। কোচবিহার ও পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে সুব্রত বক্সী। ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া মলয় ঘটকের হাতে। আলিপুরদুয়ার দেখবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মলয় ঘটক। জলপাইগুড়িতে থাকবেন সৌরভ চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুরের ভার অজিত মাইতি ও মানস ভুঁইয়্যার হাতে। দক্ষিণ দিনাজপুরে শশী পাঁজা, দার্জিলিয়ে গৌতম দেব, নদিয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায় ও ব্রাত্য বসু।
আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথার রেশ টেনে এদিনই উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী যে তালিকা তৈরি করেছেন সেটাই চূড়ান্ত। কোনওভাবেই তালিকায় কোনও বদল যে হবে না।