এক নজরে

প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল সমস্যা: ইহুদি জাতীয়তাবাদ বনাম আরব প্রতি-জাতীয়তাবাদ

By admin

March 17, 2022

তেমনি প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল এমন একটি সমস্যা যার বীজ নিহিত আছে ২০০০ বছর আগে ইহুদীদের নিজেরদের বাসভূমি প্যালেস্টাইন ছেড়ে চলে আসার সময় থেকে। বহুপ্রাচীনকাল থেকে প্যালেস্টাইনকে কে কেন্দ্র করে ইহুদী -খ্রিস্টান-আরব এই তিন ধর্মীয় জাতির মধ্যে টানাপড়েন চলেছে এবং প্যালেস্টাইন কে দখল করা নিয়ে ইহুদী ও আরব এই দুই জাতির মধ্যে যে সংঘর্ষ তা এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা রূপ নিয়েছে। এই সংঘর্ষের স্বরূপ জানতে আমাদের ইতিহাসের পাতা ওলটাতে হবে। বহু প্রাচীনকালে খ্রিস্ট জন্মের পূর্ব থেকে ইহুদীদের প্যালেস্টাইনে বসবাসের অবসান ঘটে রোমান শক্তির প্রবল আক্রমনে ,তখন থেকেই ইহুদীরা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পরে । কিন্তু উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্ কালে ইহুদিরা তাদের ম্যাইথলজিতে বিশ্বাসী হয়ে প্রাচীন আদিভূমি প্যালেস্টাইনে ফিরে আসতে চেষ্টা করে এবং শুরু হয় নব-ইহুদী জাতীয়তাবাদ বা জিয়োনিস্ট আন্দোলন (ZIONIST REVOLUTION)। সেই সময় প্যালেস্টাইন তুর্ক-অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল । ইহুদীদের জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে ইহুদী সমর্থন পেতে ইহুদীদের বাসভূমি দাবিকে গ্রেট ব্রিটেন অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করেছিল ।তৎকালীন ব্রিটেন বিদেশমন্ত্রী বালফোর তার ‘বালফোর ঘোষনা’য় মধ্য প্রাচ্যে ইহুদীদের পৃথক বাসভূমি গঠন করার কথা বলেন ,কিন্তু হায়! যুদ্ধ শেষ আর ঘোষনাও ঘোষনা হয়ে থেকে যায় ব্রিটেন তার কথা রাখেনি । কিন্তু তখন থেকেই ইহুদীরা তাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন জোড়দার করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আগের বেশকিছু ঘটনা ইহুদীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে সচেষ্ট হয় এদের মধ্যে অবশ্যই হিটলার দ্বারা ইহুদী নিধন (HOLOCAUST) একটি । জিয়োনিস্ট আন্দোলনের বিখ্যাত নেতা ডেভিড বেন গুরিয়নের ইহুদীদের আভিবাসনের দাবি মার্কিন সমর্থন পায় । এবং বার বার প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল সমস্যা আন্তজার্তিক সমস্যার সাথে যুক্ত হয়ে যায় ।

২য় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ১৯৪৬ সালের ইহুদী জঙ্গি দ্বারা নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্যালেস্টাইনের বিভাজন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করাই । এরপর আরবদের সাথে যুদ্ধ -সংঘাতের পর ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইনের বিরাট অংশ ইহুদীদের দখলে চলে যায়। যুদ্ধে হেরে যাওয়া আরবদেশগুলি সন্ধি স্থাপন আগ্রহ্য করে ইজরায়লীদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প নেই । ৪টি বড়মাপের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ বারবার পশ্চিম এশিয়ার শান্তি নষ্ট করেছে । ইজরায়েলীয়দের জিয়োনিস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে আরব-জাতীয়তাবাদ ‘ইন্তিফাদা'(INTIFADA) । ধীরে ধীরে এই জাতীয়তাবাদ গোড়া-জঙ্গিবাদী স্বরূপ গ্রহন করে । অন্যদিকে মার্কিন সাহায্য পাওয়ার আশায় আরব প্রধানমন্ত্রী ইয়েসের আরাফাত ১৯৮০ দশকে ইজরায়েলীয় শিবিরে কামান দাগা বন্ধ করেন , কিন্তু প্রতিদানে কোন মার্কিন সাহায্য তিনি পাননি এরফলে আরাফত প্রতিষ্ঠিত “অল্-ফাতাহ্” সংগঠনের ওপর তার ক্ষমতা কমে আসতে থাকে । অচিরেই আরাফত একাধিক উপগষ্ঠিতে বিভক্ত হয়ে যায় । এগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ‘হামাস’। তাই ভেবে দেখতে হয় জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠার পেছনে প্রকৃষ্ট না হলেও প্রচ্ছন্ন ভাবে কোন বড় শক্তির ভূমিকা থাকে যেমন এই ক্ষেত্রে মার্কিন ভূমিকা আছে।

১৯৮২ তে লেবাননে খ্রিস্টধর্মবলম্বী ও মুসলিমদের মধ্যে প্রবল গৃহযুদ্ধ বাঁধে এবং এই যুদ্ধ প্যালেস্টাইন সমস্যাকে আবার বিশ্বরাজনীতির সামনে তুলে ধরে । গাজা ভূখন্ড বা গাজা স্ট্রিপ এ ইহুদীদের অস্থায়ী বসবাস শুরু হয় । তাই বর্তমানে মূল সমস্যা এখন আর প্যালেস্টাইন -ইজরায়েল সহবস্থানের মধ্যে আবদ্ধ নেই এখন প্রশ্নটি ঘুরে গেছে গাজা ও পশ্চিম তীরবর্তী অঞ্চলকে দখল করা নিয়ে। ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন-গাজা এই তিন এলিমেন্ট এখন আন্তর্জাতিক শান্তি কে বার বার বিপাকে ফেলছে । একদিকে ইহুদী জাতীয়তাবাদ জিয়োনিস্ট আন্দোলনের অন্যদিকে আরব জাতীয়তাবাদ ইন্তাফাদা এই দুই মধ্যে পড়ে প্যালেস্টাইন বসবাসকারী সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । তাদের সামাজিক -অর্থনৈতিক জীবন এখন ক্ষমতাশালী শক্তির বন্দুকের নিশানায় ।