এক নজরে

আরও কঠিন রাস্তার সামনে পাকিস্তান

By admin

February 10, 2024

পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের ভোট শেষ হওয়ার ৪8 ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কিন্তু সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আরও ১৪টি আসনের ফলাফল ঘোষণা বাকি রয়েছে।গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে সাধারণ পরিষদের ভোট হয়। এরও প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল থেকে ফলাফল ঘোষণা শুরু করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন(ইসিপি)। শনিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে যাদের প্রায় সবাই পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের(পিটিআই)সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়েছে।

পাকিস্তানে এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে ১৩৪টি আসনে জিততে হবে। ইসিপির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত ২৫১টি আসনের মধ্যে ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা, এরপর নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭১টি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি) ৫৪টি ও এমকিউএম ১৭টি আসনে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জোট সরকার গড়ার জন্য ঐক্যমতে পৌঁছেছে নওয়াজের পিএমএল–এন ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি।

ধারণা করা হচ্ছিল, সেনাবাহিনীর ‘আশীর্বাদপুষ্ট’নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ এবার সহজেই সরকার গঠন করতে পারবে, কিন্তু তেমনটা যে হচ্ছে না সেটা ভোটের ফলাফল থেকেই বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু এটা ঘটনা পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বড় চমক দেখিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান–সমর্থিত প্রার্থীরা। পাকিস্তানে জোট সরকার হওয়ার সম্ভবনাও প্রবল। কিন্তু সেটা হলে দেশটিকে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে জাতীয় বিষয়ে জোট সরকারের এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে না। এই মুহুর্তে পাকিস্তান নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটি স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। যে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শক্তিশালী জনসমর্থন থাকতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান বর্তমানে আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। বিদেশি ঋণদাতা ও বিনিয়োগকারীরা যাতে পাকিস্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিরাপদ অনুভব করেন, সে জন্য একটি স্থিতিশীল সামাজিক পরিস্থিতি প্রয়োজন হবে।

তবে পাকিস্তানে যে–ই সরকার গঠন করুক, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়তে হবে। প্রথমত, পাকিস্তানের অর্থনীতি দীর্ঘ দিন ধরে ‘কাঠামোগত সমস্যায়’ভুগছে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার একেবারে ভাল নয়। কর সংগ্রহের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশগুলির একটি পাকিস্তান। যারা পাকিস্তানে সরকার পরিচালনা করেছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই শক্তিশালী ব্যবসায়ীদের ভয়ে বড় ধরনের কর আরোপ করে নি। তাই নতুন সরকারকে কর বাড়াতে হবে। সেটা করতে হবে ঋণ পরিস্থিতির কারণেই।

করোনা, লকডাউন, ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি একাধিক কারণে বিশ্বের অধিকাংশ জায়গাতেই মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের দুর্দশাও বেড়েছে৷ কিন্তু পাকিস্তানের মতো করুণ পরিস্থিতি খুব বেশি জায়গায় দেথা যাচ্ছে না৷ সে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি৷ সরকারি হিসেবেই প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে৷ রাষ্ট্রীয় ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৭২ শতাংশ ছুঁয়েছে৷ আমেরিকান ডলারের সঙ্গে পাকিস্তানের মুদ্রার বিনিময় মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমদানির সমস্যা রয়েছে৷ তার উপর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা সেই পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে৷

আপাতত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জরুরি আপাতত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জরুরি ঋণের উপর নির্ভর করে পাকিস্তান কোনোরকমে টিকে রয়েছে৷ তাই যে সরকারই পাকিস্তানের হাল ধরুক না কেন, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সামাল দেওয়া তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অন্যান্য যে কোনো নীতির মতো অর্থনীতির প্রশ্নেও সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া নতুন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এক পা ফেলা সম্ভব হবে না৷ তার উপর এক দিকে মরিয়া জনগণ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলির সংস্কারের চাপ সামলে বাজারের আস্থা অর্জন করাও পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য কঠিন কাজ হবে৷