এক নজরে

গণপতির খোলা চিঠি

By admin

August 22, 2020

শ্রীচরণেষু মা,সময় মতো পৌঁছে গেছি নির্বিঘ্নে। কিন্তু এর পর কী কী দেখতে হবে কে জানে! মুম্বইতে খুব বৃষ্টি। বলছে নাকি আরও পাঁচ দিন চলবে। তা হোক, তুমি চিন্তা কর না। এ বার মনে হচ্ছে লাফালাফি একটু কমই হবে। ফলে আমি একটু হাত পা ছড়িয়ে থাকতে পারব।ও, ইনস্টায় দেখেছ তো, সবাই নাকি বাড়ি বাড়ি বাপ্পা মূর্তি বানাচ্ছে। বিশেষত টিভি-স্টারেরা। সে এক জ্বালা মাগো! কী যে ছিরি হবে শেষ পর্যন্ত কে জানে! অদ্ভুত মানুষগুলো সব। আবার লিখেছে, ‘এ বার তো বাড়িতে অতিথিরা কেউ আসবেন না, পুজোর আয়োজনও কম। তাই নিজে হাতেই বানিয়ে ফেললাম গণপতি মূর্তি।’কী বিপদ! এদের সব কিছু লোক দেখানো মা গো! বাড়িতে লোকে আসে দেখতে, তাই বড় বড়, চকচকে মূর্তি কিনে আনত এতদিন। এ বার সে সব নেই, ব্যস— বামুন গেছে ঘর তো লাঙল তুলে ধর। আরে যে মানুষগুলো সারা বছর বসে থাকে এই পুজোর দিনগুলোর জন্য, মাটি লেপেই যাদের জীবন চলে, তাদের কী হবে? আমি জানি না মা। এ সব আমার ভাললাগে না! আচ্ছা, কলকাতার কী অবস্থা তুমি একটু খবর নিও। তবে ওখানে মনে হয় না এমন হবে।হেঁ হেঁ এই জন্যই তো পাঁচজনে মিলে যাওয়া। বাড়িতে বানিয়ে ফেলতেই পারবে না। তবে এ বার দুর্গা পুজোতেও একটু হাত পা ছড়িয়ে বাঁচা যাবে। সেই আগের মতো। না মা? মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছে, বেশি উঁচু প্রতিমা হবে না। প্যান্ডেল ঢাকা-চাপা দেওয়া হবে না।বাব্বাঃ, সেই ছোটবেলার মতো পুজো হবে এ বার মনে হয়। মাথার উপর চাঁদোয়া, বাঁশের খুঁটির গায়ে নকশা করা। একচালা কি পাঁচচালায় আমরা পাঁচজন। তখন কী ভাল লাগত পুজোর দিনগুলো। কাশী বোস লেন, বিডন স্ট্রিট, সিমলা ব্যয়াম সমিতি, মহম্মদ আলি পার্ক, কলেজ স্কোয়্যার থেকে বালিগঞ্জ কালচারাল, সিংহী পার্ক, একডালিয়া… এ সব পুজোর কথা তো মানুষ ভুলেই যাচ্ছিল। সব যেন আদিখ্যেতার ভিড়! ভাঁড়ের প্যান্ডেল, বাঁকা চোখ, ট্যাঁরা নাক। আমার এ সব কোন কালে ভাল লাগে না মা, তা তো তুমি জানই। এ বার আবার সেই ছোটবেলার মতো হবে, মামার বাড়ি ভারী মজা! তাই না?

ও তোমাকে তো বলাই হয়নি! মজা হবে কি আদৌ! দেশের যা অবস্থা! মানুষ নাকি পরিবেশ নিয়ে খুব ভাবছে! কিন্তু মা গো ওদের ভাবনাগুলো গরুতে শুরু আর গোবরে শেষ হয়ে যাচ্ছে জানো! একখানা হিন্দি পোর্টালে খবর পড়লাম উত্তর প্রদেশের গ্রামীণ মহিলাদের দিয়ে নাকি এ বার গোবরের গণপতি মূর্তি বানানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি সে মূর্তি পুজো হবে। তারপর গামলায় বিসর্জন। ধুয়ে মুছে গোবর গামলা। ব্যাটারা বলছে, অতি পবিত্র পঞ্চগব্যের অন্যতম গোবর দিয়ে তৈরি গণপতি। হেসো না মা। তুমি বাঙালির কথা ভেবে হেসো না। খবরটা লক্ষ্মীকে দিয়ে এসো। কারণ, এ সব শুধু যে আমার জন্য তা নয়। দীপাবলিতে আসবে না, তোমার প্রিয় লক্ষ্মী? হুঁ হুঁ, তার জন্যও একই ব্যবস্থা করে রেখেছে এরা।মন্দির টন্দিরে তো এ বার লোক ঢুকতে দেবে না। তাই বিশেষ সম্প্রচারের ব্যবস্থা হচ্ছে মা, ইন্টারনেটে। আমি শুধু দেখব, এই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংটা এরা কী করে মেনে চলে! কলকাতায় তো তোমার জন্য রুপোর মাস্ক বানিয়েছে। আমার জন্য বোধহয়, সে সব থাকবে না। আমি তো আলাদা রকম। আমার হাতির মাথা, তাই ভাইরাসের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।সে দিন তোমার কাছে খুব অভিমান করে বলেছিলাম, আমরা মন্দির পাব না, পাব না আমরা মন্দির! আসলে আমি মন্দির চাইনি মা। আমার-তোমার এই ভাল। কাঁচা বাঁশের প্যান্ডেল রঙিন কাপড় ছাওয়া। সোনা রুপোর মূর্তি চাই না। আমাদের মাটিই ভাল। যে মন্দির বিভেদ করে, সে মন্দির চাই না। মণ্ডপে যেতে কারও বাধা নেই। আমরা যেন সেই মণ্ডপেই থাকতে পারি। আর বাংলার সেই পুরনো চণ্ডীমণ্ডপ, দুর্গাবাড়িগুলো বেঁচে থাক। যেখানে সারা বছর খড়ের কাঠামোর গায়ে জড়ানো থাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি। তারই সামনে খেলা করে বাচ্চারা। তাস পেটায় উঠতি ছোঁড়া। বুড়োরাও বসে গল্প করে দেশের দশের… সেই মন্দির বেঁচে থাক মা। তুমি দেখো। মানুষগুলো যেন ভাল থাকতে পারে।আচ্ছা আমি এ বার উঠি মা। যাই আমিও দেখি মানুষগুলোর মাথার ভিতর গোবর ছাড়া, আর কিছু পুরে দেওয়া যায় কি না! এ বছর মনে হচ্ছে বুদ্ধিসুদ্ধি একটু বেশি করেই দিয়ে যেতে হবে।প্রণাম নিও।

ইতি,তোমার গণশা