এক নজরে

ঘরে নয় গোটা গ্রামে একটাই লক্ষ্মী পুজো

By admin

October 26, 2023

বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রাম লক্ষ্মীর গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এই গ্রামে গৃহলক্ষ্মী পুজো পান না।মূর্তিতে বা ঘটে কিছুতেই নয়। যদিও গ্রামটির নাম ঘোষ গ্রাম কিন্তু গোটা গ্রামে একজনও ঘোষকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই গ্রামে রয়েছে কামদেব ব্রহ্মচারী প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীর দারুমূর্তি।আছে লক্ষ্মীর মন্দির। সেই মন্দিরেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন পুজো দেবে গোটা গ্রামের মানুষ। অনুমান অন্তত পাঁচশো বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। কেবলমাত্র ঘোষ গ্রাম নয়, দুই সীমান্তবর্তী জেলার ৫১টি গ্রামের সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো হয় বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরে। কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে এখানে কোনও বাড়ি থেকে শাঁখ বাজার শব্দ ভেসে আসে না। কেউ নিজের বাড়িতে লক্ষ্মীর ঝাঁপিও রাখেন না। এই গ্রামে বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করা নিষিদ্ধ। বারো মাস গ্রামের সর্বজনীন লক্ষ্মী মন্দিরে পুজো হয়।

???????????????????????????????????????????

কথিত আছে, প্রায় পাঁচশো বছর আগে এই গ্রামে এসেছিলেন পূর্ববঙ্গের এক পরিব্রাজক সন্ন্যাসী কামদেব ব্রহ্মচারী। তিনি এই গ্রামের একটি নিম গাছের তলায় আশ্রয় নেন। ওই গাছতলাকে সাধনার স্থল হিসাবে চিহ্নিত করে থাকতে শুরু করেন। তখন এই গ্রামে গোয়ালা জাতির বসবাস ছিল সব থেকে বেশি। একদিন এই গ্রামের বাসিন্দা দয়াল চন্দ্র ঘোষ ভাদ্র মাসে গ্রাম লাগোয়া কাঁদরের (চাষের জমি লাগোয়া খাল) ধারে জমিতে চাষ করছিলেন। দয়াল ঘোষের ছোট ছেলে বাবাকে মাঠে খাবার দিতে এসে দেখলো কাঁদরের জলে একটি পদ্ম ফুল ভেসে যাচ্ছে। ফুল নেবার জন্য বাবার কাছে বায়না ধরে ছেলেটি। কাঁদরের বয়ে যাওয়া জলে পদ্ম ফোটে না। তবু ছেলের আবদার মেনে দয়াল কাঁদরে পদ্মফুল তুলতে নেমে পড়েন। কিন্তু পদ্মের নাগাল পেলেন না দয়াল ঘোষ। ওই রাতেই দয়াল ঘোষ মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান যে ওই কাঁদরের জলে নিরাকার রূপে দেবী অবস্থান করছেন। পরদিন কাঁদরের জলেই একটি নিম কাঠ ভাসতে দেখেন দয়াল। সেই কাঠ তুলে এনে দেবীর নির্দেশ মতো গ্রামে নিম গাছ তলায় কামদেব ব্রহ্মচারীর কাছে নিয়ে যান। তিনিই ওই নিম কাঠ থেকে লক্ষ্মী মূর্তি গড়ে তোলেন। দেবী মুর্তি প্রতিষ্ঠা হয় গ্রামেই।

জানা যায়, ব্রহ্মচারীর আকর্ষণেই কান্দির মহারাজা লালাবাবু লক্ষ্মীদেবীর মন্দির নির্মাণ করেন। এই বাংলায় সেই অর্থে আর কোথাও এত প্রাচীন লক্ষ্মী মন্দির নেই।‌ কথিত আছে, লক্ষ্মীর বসত ভূমি এই গ্রাম। তাই ঘোষ গ্রামে এক সময় ধান নয়, সরাসরি চাল ধরত। দীর্ঘদিন দেবীর হাতে তাই চালের শীষ শোভিত হত বলে জানান গ্রামবাসীরা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে এই গ্রামে প্রচুর ধুমধাম হয়। কয়েক হাজার মানুষের ঠিকানা হয়ে ওঠে এই লক্ষ্মীগ্রাম। অন্যদিকে পৌষ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার এই মন্দিরকে ঘিরে বসে কড়ি মেলা। তবে, এই কড়ি মেলার বৈশিষ্ট্য আলাদা। এই মেলায় অধিকাংশ দোকানিরা দুধ কড়ি, ফুল কড়ি, তিল কড়ি, বুজ কড়ি ও শ্বেত কড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের কড়ির পসরা সাজিয়ে বসেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মেলা চলে। বীরভূম ছাড়াও লাগোয়া মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও ঝাড়খণ্ড থেকে বহু মানুষ লক্ষ্মীপুজোর পাশাপাশি মেলায় কড়ি কিনতে ভিড় জমান।জনশ্রুতি আছে, কড়ি মায়ের চরণে ছুঁইয়ে বাড়িতে রাখলে অভাব দূর হয়। তাই নতুন ধান সহ কড়ি দিয়ে লক্ষ্মীর পুজো দেন অনেকে।আগে কড়ির বিনিময়ে ধান কেনাবেচা চলত। টাকা-পয়সা চালু হওয়ার পর কড়ি বিলুপ্তির পথে। হয়তো কড়িকে বাঁচিয়ে রাখতেই অনাদিকাল থেকে এই মেলা হয়ে আসছে।