এক নজরে

জট কাটেনি পেঁয়াজের

By admin

September 17, 2020

কলকাতা ব্যুরো: প্রায় ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার প্রতীক্ষায় এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকশো ট্রাক এবং মালগাড়ি। যদিও বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার চার দিন পরেও সে ব্যাপারে নতুন করে কোন আশার আলো দেখতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় এখনও কত পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বা আরো কত নষ্ট হবে তা নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ীরা। অনেকেরই আশা, বাংলাদেশ বুধবার চিঠি দিয়ে দ্রুত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করার জন্য অনুরোধ করায়, কিছু একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় সরকার।

ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি দু-একদিনের মধ্যে রপ্তানি শুরু হয়, সে ক্ষেত্রে ওপারে ট্রাক পৌঁছনোর পর তা আনলোড করে কত পেঁয়াজ নষ্ট হলো তার হিসেব দিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইবেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। সেই ক্ষতি পূরণ করতে বাধ্য এপারের ব্যবসায়ীরা। ফলে এমন একটা দ্রুত পচনশীল খাদ্য সামগ্রী এমন হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্দ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সংগঠন গুলো।

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, প্রায় ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ বিভিন্ন সীমান্তে এবং ওয়াগানে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন একটা পচনশীল সামগ্রী এইভাবে হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পরবেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক সংস্থা। করোনার মধ্যেই পুজোর আগে পেঁয়াজ রপ্তানির এই ডামাডোলে এ রাজ্যের আর একটা বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

খুচরো বাজারে কিলো ৪০ টাকা

রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে সীমান্তে গুলিতে হাজার হাজার টন পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাতেও কেননা বাজারে পেঁয়াজের দাম 40 টাকা কিলো দরে বিকজ বহু খুচরো ব্যবসায় দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ রাখতে পারছেন না এই অবস্থায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোতে কত পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে পচে যাচ্ছে তা ভেবে কূলকিনারা পারছেন না ব্যবসায়ীরা হলে দাবি উঠছে যদি রপ্তানি না করায় হয় সে ক্ষেত্রে কেন সেই ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হবে না ইতিমধ্যেই নবান্নের তরফে এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে খারাপ প্রভাবের আশঙ্কা

ওয়েস্টবেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারন সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অঞ্চল এর অধীন ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেনকে। তাদের সংগঠনের বক্তব্য, এভাবে হঠাৎ করে পেঁয়াজের মতো একটি দ্রুত পচনশীল সামগ্রী রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি খেলাপ হবে। এর জন্য খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার সমস্যাই নয়, এতে বাণিজ্যের নিয়ম নীতিও লংঘন হচ্ছে। যদিও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতাবস্থায় রাখতে কেন্দ্রের নজর দেওয়াকে অবশ্য ইতিবাচক বলে মনে করছে সংগঠন।

বাংলাদেশে কি অবস্থা

শুধু চিঠি দিয়ে দ্রুত পেঁয়াজ রপ্তানি বাড়ানোর অনুরোধ নয়, বাংলা দেশে রপ্তানি আটকে যাওয়ায় হু হু করে সেখানে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত কয়েকদিন ধরে কিলো প্রতি ৭০ টাকা থেকে এখন তা কিলো প্রতি ১১০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অবস্থায় সেখানকার ব্যবসায়ী থেকে প্রশাসনিক কর্তারাও মনে করছেন, শুধুমাত্র ভারতের ওপর আগামী দিনে পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য ভরসা করে থাকা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর।

সেই সেপ্টেম্বর

কারণ ঘটনাচক্রে গত বছর প্রায় একই সময়ে ভারত হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। পুরনো নথি বলছে, গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে সে বছর পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশ কিলো প্রতি আড়াইশো টাকা হয়েছিল। আর এ বছর ১০ সেপ্টেম্বরে আবার রপ্তানি বন্ধ করে দিলো ভারত।বাংলাদেশ ২.৪ মিলিয়ন পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে ১.১ মিলিয়ন পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভারত। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চাহিদা বাড়ে। তারপরেই বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু পেঁয়াজ উৎপাদন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।

বিকল্পের খোঁজে বাংলাদেশ

এই পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে চাষীদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দেওয়া হোক। একই সঙ্গে শুধু ভারতের উপর ভরসা না করে, পেঁয়াজের জন্য অন্য কোন ও দেশের সঙ্গে চুক্তির দাবি তোলা হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকদের তরফ থেকে।