প্রবাসীর ডাইরি

বিদেশে অনেক ভালোর মধ্যেও আমায় টানে দেশের মাটির গন্ধ

By admin

August 30, 2020

ঐশ্বর্যা সরকার, মেলবোর্ন।ছবি: প্রতিবেদক

আবার আইন-শৃঙ্খলার দিক দিয়েও বেশ কড়া ধাতের দেশ কিন্তু অস্ট্রেলিয়া। এখানে লোকে আইন মেনে চলে, আবার বলা যেতে পারে যে, এখানে লোকে আইন মানতে বাধ্য। কারণ আইনভঙ্গের শাস্তি হিসেবে যে পরিমাণে জরিমানা দিতে হয়, তাতে একটা গাড়ি কেনা হয়ে যেতে পারে। ভারতে ট্র্যাফিক নিয়মকানুন ভাঙলে ১০০ -২০০ টাকার কড়কড়ে নোটেই কেস মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু এখানে শুধু স্পিড লিমিট অতিক্রম করার মানেই কমপক্ষে ৫০০ ডলারের গচ্ছা। ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ড্রাইভ কেস হলে তো কথাই নেই, লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল হয়ে যেতে পারে। আবার ট্র্যাফিক সিগনাল ভাঙতেও চোখে পড়েনি খুব একটা। ব্যস্ততার মধ্যেও লোকে এখানে নিজেদের সংযত রাখে, নিয়ম মেনে চলে।

বর্তমানে এই অতিমারীর জন্য সরকার নয়া বিধিনিষেধ আনছে, যেমন মাস্ক না-পড়লেই ২০০ ডলার ফাইন। আবার মাস্ক পড়ে বেরোতে হবে, অকারণে বেরোনো চলবে না। একবার এখানে খবরে দেখেছিলাম, লকডাউনের সময় এক ব্যক্তি ৩০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে এক রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনতে গিয়েছিলেন। পরে সেই ব্যক্তিকে ১৭০০ ডলার ফাইন দিতে হয়েছিল।দেশে থাকাকালীন অনেকবারই শুনেছিলাম, বিদেশে ছেলে-মেয়েরা বড় হলেই মা-বাবার থেকে আলাদা থাকা শুরু করে, নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজেই নেয়। চাকরি করে, অর্থ উপার্জন করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালায়। এখানে এসেও তাই-ই লক্ষ্য করেছিলাম। এখানে কোনও কাজকেই ছোট মনে করা হয় না। আমিও এখানে চাকরি ও পড়াশোনা দুই-ই করি। নিজের আয়ের টাকায় শখ পূরণ করতে বেশ ভালোই লাগে। আবার ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোনও তফাৎই করা হয় না। ট্রাম, বাস, ট্যাক্সিতে মহিলা চালকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। লক্ষ্য করেছি, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ৯-৫ টা অফিস আওয়ার মেনে চলে সকলে। নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশিক্ষণ অফিসে থাকলে মেলে অতিরিক্ত টাকা। অফিস ও পরিবারের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে চলে এখানে সকলে।তবে যে ব্যপারটি একদম ভালো লাগে না, সেটি হল, সকলেই এখানে আত্মকেন্দ্রিক। নিজেরটা নিয়েই বেঁচে থাকা সকলের লক্ষ্য। এখানে কেউই কারও খোঁজ রাখে না। এ কারণেই হয়তো বিদেশ এসে আমি কলকাতার আরও কাছে এসেছি। মা-বাবাকে আরও ভালোবাসতে শুরু করেছি। এখানে সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেই মা-বাবা তাঁদের খুব একটা খোঁজখবর রাখে না। কিন্তু আমাদের দেশের মা-বাবারা পারলে বুড়ো বয়স পর্যন্ত আমাদের আগলে রাখবেন। মুখে না-বলা কথাগুলি কোন যাদুমন্ত্রে আমার মা এতকাল বুঝে এসেছে, তা এখনও আমার কাছে রহস্য। এখানে এসে এমন গা ছাড়া ভাব দেখে সব সময় ভেবেছি, যেমনই হোক, আমার দেশ, দেশের মানুষই আমার চোখে সেরা। তারাই আমায় টানে।

(শেষ)