সুমনা আদক, স্কটল্যান্ড
ইতিহাসের পাতা জুড়ে যেমন রয়েছে স্কটল্যান্ড,এর নাম তেমনই ছড়িয়ে রয়েছে তার একাধিক বিবরণে। মাঝে মধ্যে মনে হয় ভারতবর্ষের টুকরো ছবি কোথাও যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে এই দেশের মানচিত্রের সাথে। এখানকার ঘর -বাড়ি, রাস্তা- ঘাট স্কটিশদের এডুকেশন সিস্টেম অনেকটাই মিলে যায় আমাদের সাথে। শান্ত দেশ, সরল প্রকৃতি সবই ছিল তবুও হঠাৎই কোনো এক অজানা ভাইরাসের কবলে পড়ে নিমেষেই কেমন অস্থির হয়ে গেল দেশটা। এতদিন ধরে বসবাস করে যে দেশটার জলহওয়ার সাথে মিশে গিয়েছিলাম, তার এমন এলোমেলো করুন অবস্থায় খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল মনটা। এখানে যারা বসবাস করেন তারা কখনোই ভাবেননি তাদের প্রিয় দেশটা বিচলিত হবে কোনো এক অদৃশ্য ভাইরাসের প্রভাবে। করোনার কবলে গোটা পৃথিবী যখন টলোমলো, স্কটল্যান্ড তখনও ছিল প্রাণবন্ত,উচ্ছল। সবেমাত্র বসন্তের আগমন তখন এ দেশের আনাচে কানাচে, প্রকৃতির রূপের পরিবর্তন ঘটেছে ধীরে ধীরে, থোকা থোকা চেরিফুল সদ্য পসার সাজাতে বসেছে গাছে গাছে, সেই মুহূর্তেই করোনা মহামারি ঢেকে দিলো স্কটল্যান্ডের পরিপাটি করে সাজানো বসন্তের নীল আকাশটাকে। একসাথে ৪৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু দেখলো ব্রিটেন। কাজেই এবারের বসন্তটা একেবারেই বেরঙিন হয়ে গেল।
এতদিন কলকাতা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পরিচিতরা ভাবতেন, এদেশে এসে আমরা হয়তো ভালোই আছি। মোটা ‘ অঙ্কের স্যালারি ‘ পারফেক্ট ‘লাইফস্টাইল ‘ এর বেশি কি চায় মধ্যবিত্ত বাঙালি? আসলে মানুষের যাবতীয় চাওয়ার সাথে চিরকাল অমিলই থেকে যায় পাওনার ব্যাতিক্রমগুলো তাই ঝকঝকে জীবনও থমকে গেল এক লহমায়। পৃথিবীর মৃত্যুযুদ্ধ পুরীতে সামিল হলো আরেকটা নাম ব্রিটেনের স্কটল্যান্ড। বাকিদেশ গুলোর মতোই কোনও এক অজানা সূত্রে বাঁধা পড়ে গেল কলকাতা থেকে স্কটল্যান্ড।
মোটা ‘ অঙ্কের স্যালারি ‘ পারফেক্ট ‘লাইফস্টাইল ‘ এর বেশি কি চায় মধ্যবিত্ত বাঙালি? আসলে মানুষের যাবতীয় চাওয়ার সাথে চিরকাল অমিলই থেকে যায় পাওনার ব্যাতিক্রমগুলো তাই ঝকঝকে জীবনও থমকে গেল এক লহমায়।
করোনার প্রাক্কালে এদেশের রাস্তায় হাঁটলে মনে পড়তো কলকাতার অনেক পুরোনো দিনের কথা। মনে হতো, স্কটল্যান্ড এমন একটা দেশ যার অলিতে গলিতে কোথাও ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের বঙ্গ সংস্কৃতির টুকরো টুকরো কোলাজ। আমাদের শহরের পুরোনো বাড়ি, রাস্তার ফুটপাথ, স্ট্রিট ল্যাম্প, কোথাও কোথাও আবার পুরানো বাড়ির দেওয়ালের কোঠোরে পায়রার বাসা এবং তাদের গুনগুনানি সবই মনে করাতো কলকাতার স্মৃতিগুলোকে। তখন একবারের জন্যও মনে হতো না, নিজের দেশ থেকে সাড়ে চার হাজার মাইল দূরে রয়েছি অচেনা এক ভিনদেশে। করোনার দিনগুলোতে একটাই চিন্তা বারে বারে মনে ঘুরে বেড়াতো এই দুর্যোগটা হয়তো শুধুই আজকের জন্য, কাল আবার পৃথিবীর নতুন দিন শুরু হবে আগের মতন করেই। সেদিন যেমন ভারতবর্ষ ভাবতো ব্রিটেন কিংবা অন্য দেশের কথা, ইউনাইটেড কিংডমের মানুষ সেদিন ভেবেছিল ভারতের কথা। কোভিডের ধাক্কা মনে করালো অতিমারীর কাছে আমরা আজ সবাই পরাজিত। মনে করালো আমাদের শুভবুদ্ধিগুলোকে।সেদিন যেমন কলকাতার কান্না দেখে দুঃখ পেয়ছিলো স্কটল্যান্ড, ব্রিটেনের এতো মৃত্যু দেখে কলকাতাও করজোড়ে প্রার্থনা করেছিল ব্রিটেনের জন্য। মৃত্যুই তো শেষ কথা, সে স্কটল্যান্ডই হোক বা আমাদের শহর কলকাতা। সেদিন মহামারীর ছায়ায় মিশে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী। অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে পড়ে মুছে গিয়েছিলো ভেদাভেদের শেষ রেখাটুকু। আমি আপনি,চেনা অচেনা মানুষগুলোর ভাবনা প্রার্থনা সব একাকার হয়েগিয়েছিলো। করোনার দিনগুলোতে টিভি-র পর্দায় শোকে কাতর কলকাতার ছবি দেখে মন কেঁদে উঠতো বারে বারে, ভাবতাম কেন এমনটা হলো? অবশেষে কেনই বা আমার প্রিয় শহরটাতেও বাসা বাঁধলো এই অসুখ !