এক নজরে

কেবল হিন্দুরাই নয়, লক্ষ্মী আরাধনায় মুসলমানেরাও সামিল 

By admin

October 09, 2022

সম্প্রীতির লক্ষ্মীপুজোর অন্য নজিরের নাম বাজারপাড়া। হাবড়া এলাকার বাঘাডাঙার পাড়ুইপাড়ায় দুর্গা নয় লক্ষ্মীপুজোই প্রধান উৎসব। আর সেই লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করেই মেতে ওঠেন গ্রামের হিন্দু মুসললামান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। নূর ইসলাম, প্রশান্ত, আমিনা, প্রণতিরা। এই পুজো ঘিরে সাতদিন মেলাও চলে। কয়েক’শো পরিবারের মানুষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপুজো।এই পুজো ঘিরে সাতদিন মেলাও চলে।পাড়ুইপাড়ার কয়েক’শো পরিবারের মানুষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপুজো। গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দাবি, এই লক্ষ্মীপুজোপাঁচশো বছর পুরনো তো হবেই।এখানে একটি স্থায়ী লক্ষ্মী মন্দির রয়েছে। অতীতে মন্দিরটি ছিল মাটি ও খড়ের। কয়েক বছর আগে সেটি পাকা হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোতেই সকলে নতুন জামা কাপড় কেনেন। আত্মীয় স্বজনেরা বেড়াতে আসেন। কর্মসূত্রে যাঁরা অন্যত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন তাঁরাও বছরের এই সময়ে বাড়ি ফেরেন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোতে ওই গ্রামের মানুষ সে ভাবে সাড়া দেন না, লক্ষ্মীপুজোর জন্য সবাই অপেক্ষা করে থাকেন। উৎসব বা আনন্দের কোনও রঙ হয় না। তাই এই গ্রামের হিন্দু মুসলমান উভয়েই লক্ষ্মীপুজো ঘিরে উৎসবে সামিল হন। ফলে বাজার পাড়ার লক্ষ্মীপুজো বহুকাল ধরেই সম্প্রীতির মিলন মেলা।

বর্ধমান শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে দায়েমনগর। এখানকার লক্ষ্মীপুজো আসলে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মিলন উৎসব। উত্তরে গলসি আর দক্ষিণে আউশগ্রামের সন্নিহিত এই এলাকায় হাত ধরাধরি করে পুজো চালু করেছিলেন হিন্দু ও মুসলমান— উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। গ্রামবাসীদের থেকেই শোনা, ১৯৮১ সালে দুর্গাপুজোর আয়োজন ঠিকঠাক না হওয়ায় খেত পাহারা দিয়ে পাওয়া পারিশ্রমিকের ধান সামন্তপাড়ার বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেন কয়েকজন মুসলমান। সেই ধান বিক্রি করে লক্ষ্মী প্রতিমা আনা হয়। মুসললমান সম্প্রদায়ের মানুষ তখন রাতে খেত পাহারা দিত। তারাই বলেন, গ্রামের দুর্গাপুজো আর্থিক কারণে করা যাচ্ছে না শোনার পর তাদের মন খারাপ হয়। তখন সবাই মিলে ঠিক করেন, পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া ধান বিক্রি করে লক্ষ্মী প্রতিমা কিনে আনা হোক। যদিও এখন আর ক্ষেতে রাতপাহারা নেই। কিন্তু দায়েমনগরের লক্ষ্মীপুজোর প্রতিমা কেনেন মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরাই। গ্রামের মানুষেরা বলেন, লক্ষ্মীপুজো তো নামেই। আসলে গ্রামের উৎসব, সেখানে সবার অবাধ বিচরণ। এক সময়ে এই গ্রামে কোনও পুজো হত না। আশ্বিনে দূরের গ্রাম থেকে যখন ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসত, তখন গ্রামবাসীদেরমন খারাপ হয়ে যেত। সেই দুঃখ দূর করতে অনেক বছর আগে দুর্গাপুজোর আয়োজনের চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু অনেক খরচ তাই পিছিয়ে যেতে হয়। সেই বিষন্নতা দূর করতে এগিয়ে এসেছিলেন যারা তাঁরা ধর্মে মুসলমান। তারপর দুই ধর্মের মানুষের চেষ্টায় শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো। আউশগ্রামের দায়েমনগরে সেই পুজো আজও সম্প্রীতির আবহেই চলে আসছে।