ইন্দ্রনীল বসু। ছবি: প্রতিবেদক
পরদিন গাড়ি ছাড়লো খুব ভোর ভোর। সাতটা হবে। পাহাড় সে সময় জনমানব শূন্য। শুনলাম যেকোন সময় আবহাওয়া প্রতিকূল হতে পারে। গুরদ্রংমারের আগে যে সেনা চৌকি আছে সেখান থেকে দুপুরের পর আর সেই রাস্তায় যাবার অনুমতি মেলে না। অনিমেষ গুরুদ্রংমার দেখার শখেই এসেছে। আবহাওয়া কেমন থাকবে সে নিয়ে একটু চিন্তায় ছিল। যাবার পথে থাঙ্গু বলে একটা জায়গা পরে। তারপর থেকেই পাহাড়ের রূপ বদলে যেতে শুরু করলো। গুরুদ্রংমারের দিকে যতই গাড়ি এগোচ্ছে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি অদৃশ্য হয়ে তিব্বতীয় মালভূমির রুক্ষ সৌন্দর্যে ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। অবশেষে তুষারশুভ্র পাহাড় নজরে এলো। গাড়ি থেকে অবাক বিস্ময়ে শুধু তাকিয়ে আছি। নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদের যে সব ছবি প্রকাশ করেন অবিকল সেই রূপ বলেই মনে হতে লাগলো। বাইরেটা কনকন করছে। গাড়ির কাঁচ বন্ধ করে বসে বসে প্রকৃতির রূপের খেলা দেখছি আমরা। গুরুদ্রংমার লেকের সামনে অবশেষে থামলো আমাদের গাড়ি। বের হলাম গাড়ি থেকে। আস্তে আস্তে নিচে লেকের সামনে নেমে গেলাম আমরা। বড় বড় চর্তেন গাঁথা আছে লেকের সামনে। তিব্বতীদের অদ্ভুত বিশ্বাস। এই চর্তেনে যদি মনের ইচ্ছা লিখে রাখা যায় তবে নাকি ঈশ্বর তা পূর্ণ করেন। বেশ কিছু তিব্বতী নারী পুরুষ হ্রদ প্রদক্ষিণ করছে দেখলাম। এও এক পূণ্য সঞ্চয়ের অভিলাষ। সত্যি পূণ্য হয় কি না জানি না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে মানুষের বিশ্বাসকে অমর্যাদা করতে ইচ্ছা হলো না এতটুকু। চারিদিকে তুষারশুভ্র পর্বতশৃঙ্গ মাঝে হ্রদের জল টল মল। এ যেন এক অপার্থিব জগতের হাতছানি। ফিরে আসতে হলো গ্যাংটক।
পরদিন ইতিউতি ঘুরছি গ্যাংটক বাজারে। হঠাৎ দেখা সিমরানের সঙ্গে। ‘কেমন হল ঘোরা ? সব ঠিকঠাক ?’ জিজ্ঞেস করলো । দুই বন্ধুই বললাম ঘোরার কথা। পরদিন কটায় বাস জিজ্ঞেস করে চলে গেলো। পরদিন গ্যাংটক বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি পরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে বাসের অপেক্ষায়। একটা হালকা গোলাপি কার্ডিগান গায়ে দেখি সিমরান হাজির। আমাদের দুজনকে দুটো চকোলেট বার দিল। বললো, প্লিজ কাম উইথ ইউর মাদার নেক্সট টাইম। মায়ের জন্য গিফট প্যাক দিল একটা। বললো মম সেন্ট ইট ফর ইউর মাদার। সকালের হালকা রোদ পড়েছে ওর চোখে মুখে । বাস ছাড়তে হাত নাড়ল।
পরে গ্যাংটক আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার।
(শেষ)