অচিনপুর

নদিয়ার নৃসিংহদেবতলা

By admin

January 15, 2023

নদিয়া জেলার নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর রাস্তার পাশে দে-পাড়ায় ঠাকুরতলা। সেখানে আছে একটি পুরানো মন্দির। মন্দিরে বিরাজ করছেন নৃসিংহ-দেব। একটি কষ্টিপাথরে মূর্তি, উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। পদতলে প্রহ্লাদ ও কোলে হিরণ্যকশিপু। বহু বছর ধরে বনে পড়ে থাকার জন্য মূর্তিটির কিছু কিছু জায়গা ভেঙে গেছে।

নবদ্বীপ নয়টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এটি তারই একটি। আগে এর নাম ছিল দেবকোট। সে সময় এখান দিয়ে মন্দাকিনী প্রবাহিত হোতো।

আড়াইশো বছর আগে নৃসিংহদেবতলা ছিল গভীর জঙ্গলে আবৃত। হিংস্র জানোয়ারদের বিচরণক্ষেত্র। আশেপাশের গ্রামে যাতায়াতের জন্য যে বনপথ ছিল, সেটি ছিল দস্যু লুটেরাদের রাজত্ব। বহুবছর দেবতা জঙ্গলে ছিলেন। জানা যায় গভীর জঙ্গলে একটা কষ্টি পাথরে নির্মিত দেবমূর্তি গ্রামের মানুষ উদ্ধার করেন। সেই সংবাদ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে পৌঁছায়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর লোক লস্কর নিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করেন এবং সেখানে একটি মন্দির বানিয়ে  দেন ও নরসিংহ দেবকে প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্য পুজোর ব্যাবস্থাও তিনি করে দেন। পুরোহিত ছিলেন বিষ্ণপুর গ্রামের একজন ব্রাহ্মণ। পরে মন্দিরটি ১৮৯৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় পুনর্নির্মাণ করেন।

পৌরাণিক কাহিনীতে আছে- এই মন্দিরটি সত্যযুগের সময় থেকে। সেই সময়ে এখানে প্রবাহিত হত মন্দাকিনী নদী। হিরণ্যকশিপুরকে বধ করার পর ভগবান নরসিংহদেব এখানে এসেছিলেন।  তাঁর হাত থেকে হিরণ্যকশিপুর রক্ত ধুয়েছিলেন, ও নিজেকে সতেজ করার জন্য এই নদীর মিষ্টি জল পান করেছিলেন। ভগবান নরসিংহ এখানে বিশ্রাম নিতে এসেছেন জেনে ব্রহ্মা সহ সমস্ত দেবতা এখানে তাদের গৃহ নির্মাণ করেছিলেন এবং এইভাবে মন্দাকিনী নদীর তীরে একটি গ্রাম তৈরি করেছিলেন। সে সময় সকলেই ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হন। সেই সময় থেকে এই স্থানটি নরসিংহ-ক্ষেত্র নামে পরিচিত। আগে এখানে অনেক টিলা ছিল, যেখানে ব্রহ্মা, সূর্যদেব, গণেশ এবং ইন্দ্রের বাড়ি ছিল এখন শুধু টিলা আছে কিন্তু চারপাশে অনেক পাথর পড়ে থাকতে দেখা যায় যেগুলো বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।। মন্দিরের পাশে একটি হ্রদ, পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এটি মন্দাকিনী নদীর অংশ। সেই থেকে এই স্থানটি নরসিংহ ক্ষেত্র বা নৃসিংহপল্লী নামে পরিচিত।

নৃসিংহদেবের প্রাচীন মন্দিরটি সম্পর্কে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী মহাশয় তাঁর ‘নবদ্বীপ মহিমায়’(১২৯৮) উল্লেখ করেছেন। পাশেই চামটার বিল। এই বিলে ব্রঞ্জের তৈরি সুন্দর একটি উগ্রতারার মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তিটি ছোট হলেও সুন্দর কারুকার্যে খচিত। উগ্রতারা বৌদ্ধতন্ত্রে  উল্লিখিত দেবী। এর অপর নাম চামুন্ডা। মূর্তিটি দেবকোট গ্রামে অধিষ্ঠিত। নিত্য পূজা হয়ে আসছে।

শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে কৃষ্ণনগর। সেখান থেকে বাস, অটো বা টোটোয় নৃসিংহদেবতলা। বাসস্ট্যান্ড থেকে নবদ্বীপ-বাবলারির বাসে নৃসিংহদেবতলা। এছাড়া হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকালে নবদ্বীপ-ধাম। সেখান থেকে অটো বা বাসে নৃসিংহদেবতলা।