পর্ব-২
কুমিল্লার দাশগুপ্তরা খুব বর্ধিঞ্চু পরিবার। যেমন বিদ্যাচর্চায়, তেমনই গান বাজনার চর্চায়। দাদু রায়বাহাদুর কমলনাথ দাশগুপ্ত ঢাকা হাইকোর্ট এর চীফ জাষ্টিস এবং দারুণ সঙ্গীত বিশারদ। তিনি ছোট্ট মীরাকে নিয়ে এলেন তাঁর দক্ষিণ কলকাতার সাউথ এণ্ড পার্কের বাড়িতে। কাছেই ঢাকুরিয়া লেক, চারিদিক গাছগাছালি আর পাখপাখালির মূর্ছনায় মুখরিত। এমনই পরিবেশে আস্তে আস্তে তাঁর ছোট্ট সাম্পানটি নিয়ে দাঁড় বেয়ে এগিয়ে চলতে শেখার শুরু মীরার মার্গ সঙ্গীতের রস সাগরের জোয়ার ভাঁটায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, কীর্তন, ঠুমরী ইত্যাদি কী অদ্ভুত পারদর্শীতায় রপ্ত করে নিলেন সেই কিশোরী বয়সেই। সঙ্গীতাচার্য্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর কীর্তন ও ঠুমরী শিখতেন সঙ্গীতগুরু ধীরেন্দ্রনাথ দেবের কাছে, রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালিম দিতেন সঙ্গীত গুরু অনাদি দস্তিদার।
একটু বড় হয়ে পড়তে এলেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে তাঁকে নাচ শেখাতেন অমিতা সেন। যে শব্দগুলো এতদিন শেকলবাঁধা হয়ে পড়েছিলো খাতার পাতায়, তারা যেন পাখা পেলো নাচের ছন্দে।
১৯৩৭ সালে ডাক এলো এলাহাবাদ মিউজিক কনফারেন্স থেকে। দেখা হলো স্বপ্নের রাজপুত্রের সাথে। ঘোড়ায় চেপে হাতে তরবারি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিলেন সেই সোনার বরণ রাজার কুমার।
রাজকোষে তার অর্থ, মণি মানিক্য যত না বেশি, তার চেয়েও বেশি পরিপূর্ণ, অঢেল তার সুর আর সঙ্গীতের ভাণ্ডার। তাই কী বয়সের এতো ফারাক তুচ্ছ লেগেছিল মীরার? ভেবেছিলেন এই বুঝি সেই, যার অপেক্ষায় গেছে এতোদিন। হাত ধরলেন সব পারিবারিক বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে। এমন মিলনে নহবতখানা বসবে না তা কি হয়?? নহবতে সুরের আকাশটিকে রামধনু দিয়ে সাজিয়ে বাজালেন আলি হোসেন খাঁ।
সুরের সাথে যেন মেলবন্ধন ঘটিয়ে নীড় বাঁধলো কবিতার পঙক্তিরা।
বিবাহের পরই অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে অডিশান দিয়ে দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে, সাথে সাথে শুরু করলেন পড়াশোনাও। আই এ পরীক্ষায়ও বসলেন। কিন্তু সঙ্গীতের পাগলামি যার রক্তে উন্মাদনা তোলে, সঙ্গীতের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে যার সপ্তপদী চলা তার জীবন কি আর পাঁচটা মানুষের খাতে বয়?
১৯৩৯ সালে কোল জুড়ে এলো উত্তরপুরুষ, সুরের পঞ্চম রাগ, রাহুলদেব।
সঙ্গীতের অভিমুখ ঘুরে গেল পশ্চিম সাগরের টানে, বোম্বাই শহরের দিকে।।
(চলবে)