কলকাতা ব্যুরো: প্রায় ন’বছর পর আবার জঙ্গলমহলে তীব্র হল মাওবাদী আতঙ্ক। মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোর নামে লেখা তোলা চেয়ে হুমকি পোস্টার। ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা থেকে ‘গুলি’- ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির এই ঘটনা চিন্তুা বাড়িয়েছে রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের।
উদ্বিগ্ন সিআইএসএফ থেকে সিআরপিএফও। যদিও পুলিশের একটি অংশের ধারণা ঘটনার পিছনে স্থানীয় কারও হাত থাকতে পারে। মাওবাদীদের নাম ব্যবহার করে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে।২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাওবাদী হিংসায় রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল জঙ্গমহলের পাঁচটি জেলা (ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর )। পরবর্তীকালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ করে কিষাণজীর মৃত্যুর পর স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরে জঙ্গলমহলে। ঝাড়গ্রাম বাদে বাকি চারটি জেলা বাদ গিয়েছে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার তালিকা থেকে। যদিও এখনও মোতায়েন রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী।মাঝেমাঝে মাওবাদীদের নামে পোস্টার মিলেছে। ঝাড়খন্ড লাগোয় পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামের সীমানায় মাওবাদীদের আনাগোনা কথাও সামনে এসেছে। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনই বেলপাহাড়ি বাস স্ট্যান্ডে উদ্ধার হয়েছিল মাওবাদীদের নামে লেখা প্রচুর পোস্টার। কিন্তু বেলপাহাড়ির নতুন ঘটনা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের।কারণ, গত কয়েক বছরে এমন ঘটনা দেখা যায়নি।সাম্প্রতিক ঘটনা ২৭ জুলাইয়ের। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির পচাপানি এলাকার একসঙ্গে তিন ব্যবসায়ীর বাড়িতে চিঠি যায় সেদিন। যার মধ্যে একজন রান্নার গ্যাসের ডিলার, অন্যজন মুদি দোকানী, তৃতীয়জন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক (নিরাপত্তার কারণে তাঁদের নাম অপ্রকাশিত রাখা হচ্ছে)। মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোর নাম করে পাঠানো হয় সেই চিঠি। বাড়ির বাইরে সেটে দেওয়া হয় পোস্টারও। দু’জনের কাছে কত টাকা তোলা চাওয়া হয়েছিল তা জানা না গেলেও, রান্নার গ্যাসের ডিলারের কাছে দু’লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।
২৯ অগস্টের মধ্যে সেই টাকা না দেওয়া হলে পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে শাসানো হয়। এরপরের চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাতে। ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে বেশ কয়েকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভয় দেখাতে শূন্যে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। আতঙ্কে বাড়ির উপর থেকে ঝাঁপ দেন ব্যবসায়ী দম্পতি। যার জেরে পা ভেঙে গিয়েছে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। যদিও এবিষয়ে প্রশাসনের কেউ সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চায়নি। ঘটনা হল পচাপানি এলাকটি একেবারে ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া। মাওবাদী নেতা আকাশ অরফে অসীম মন্ডল, জবা মাহাতো, মদন মাহাতো-সহ এরাজ্যের মাওবাদী নেতারা গত কয়েক বছর ধরে সেখানেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন এজেন্সির খবর। ফলে সেখান থেকে এসে মাওবাদীদের এই ঘটনা ঘটানোর সম্ভবনা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে খবর।
সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে এরাজ্যে আবার নিজেদের মাটি শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে অসীম মন্ডলেরা। আগে মূলত সীমানা লাগোয়া এলাকায় আনাগোনার কথা জানা গেলেও, এখন বেশ কিছু প্রত্যন্ত এলাকাতেই তাঁরা ঢুকছে বলে খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। আগে ছোটো দলে ভাগ হয়ে ঘুরলেও এখনও অসীম, জবা মাহাতোরা বড় দলে নিয়ে ঘোরা ফেরা করছে বলেও জানা গিয়েছে।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে জঙ্গলমহলে রাজ্যনৈতিক অঙ্কও বদলেছে। পঞ্চায়েত থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব বেড়েছে। আবার ছত্রধরের মতো প্রাক্তন মাওবাদীকে নেতাকে দলে নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে কিছুটা মাটি ফিরে পেতে চাইছে শাসক দল। ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ছত্রধর। ফলে ছত্রধরের ইস্যুকে সামনে রেখে আধিবাসীদের সংগঠিত করার চেষ্টা মাওবাদীরা করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এদিকে, শুক্রবারের পর শনিবারও শালবনিতে কোবরা ক্যাম্পে ছত্রধরকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালায় এনআইএ।যদিও রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, জঙ্গলমহলের মানুষ রাজনৈতিক দলবদল করতেই পারে কিন্তু মাওবাদীদের রক্তের রাজনীতি আর করতে দেবে না।