এক নজরে

Ma Kali Special Report : যার গায়ে বসন নেই তার ঠোঁটে কি সিগারেট মানায়

By admin

July 08, 2022

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই পয়গম্বর বিতর্কে উত্তাল হয়েছিল দেশ।এরই মধ্যে দেবী কালীকে (Ma Kali Special Report) নিয়ে সাংসদ মহুয়া মৈত্রর একটি মিডিয়া গোষ্ঠীর কনক্লেভে করা মন্তব্য, ‘আমার কাছে মা কালী মাংস ও অ্যালকোহল গ্রহণকারী’। এতে বিতর্ক ছড়ায়। তাঁর দল থেকে ট্যুইট করে বলে দেওয়া হয় তারা মহুয়ার বক্তব্য মানছেন না। মহুয়া ট্যুইটে লেখেন, ‘সঙ্ঘীদের বলছি, মিথ্যা বলে খাঁটি হিন্দু হওয়া যায় না। আমি কোনও সিনেমা বা পোস্টারকে সমর্থন করিনি। ধূমপান শব্দটিরও উল্লেখ করিনি। আপনাদের বলছি, তারাপীঠে গিয়ে দেখে আসুন, মা কালীকে ভোগ হিসেবে কী খাবার ও পানীয় দেওয়া হয়’। মহুয়া মৈত্রর এই মন্তব্যকে যে বিজেপিহাতিয়ার করবে সেতো জানা কথাই। তারা মহুয়া মৈত্রর মা কালী সম্পর্কে এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর গ্রেফতারের দাবি তুলেছে।

কিন্তু যার তথ্যচিত্রের পোস্টার ঘিরে বিতর্কের ঝড় কে সেই লীনা মণিমেকালাই? মা কালী (Ma Kali Special Report) সিগারেট টানছে এই খবর আসার আগে তাঁকে কি এ দেশের কেউ চিনত? না চিনতেন না মহুয়া মৈত্র, চিনত না তাঁর দল, এমনকি বিজেপি। লীনা মণিমেকালাই কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন কিন্তু তিনি তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের মেয়ে। শিক্ষিত পরিবার হলেও অল্প বয়সে তাঁর বিয়ের পরিকল্পনা করায় লীনা বাড়ি ছেড়ে চেন্নাই চলে যান। সেখানে যোগ দেন একটি তামিল পত্রিকায়। ওই পত্রিকার মালিক লীনার ঘটনা জেনে তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। লীনা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করেন। কিন্তু পড়া শেষ হওয়ার আগে তাঁর বাবার মৃত্যুহলে পরিবারকে সাহায্য করতে আইটি ফার্মে যোগ দেন লীনা। কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা তৈরির। শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে মুক্তি পায় ‘মহাত্মা’। লীনার ছবি মানেই বিতর্ক। মহাত্মা সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা, অতএব শুরুতেই বিতর্ক। পরবর্তী ছবি একজন দলিত মহিলার জীবন নিয়ে। সে ছবিও বিতর্কিত। ধনুশকোডির জেলেদের দুর্দশার উপর তথ্যচিত্র ‘সেনগাদল’, সেই ছবি নিয়েও কেন্দ্রীয় সেন্সর বোর্ড আপত্তি তোলে। তাঁর প্রায় সব ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত। অর্থাৎ ‘কালী’ প্রথম নয়।

সংবেদনশীল ‘হিন্দু’রা কালীবেশী এক তরুণীকে সিগারেট টানতে দেখে কিংবা মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যেযে ক্ষেপে গিয়েছেন তারা মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল বা নিবেদিতার লেখা ‘কালী দ্য মাদার’-এর পাতা উলটে দেখতে পারেন। নিবেদিতার বক্তব্য অনুযায়ী,মা কালীর খোলা চুল আসলে বহমান কালের প্রতীক। তিনিস্বামীর বুকে পা দিয়ে আছেন, জিভও কেটেছেন কিন্তু তিনি ওম্যান অন টপ। বইটি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে নিবেদিতার এই বইটি বিপ্লবীদের কাছে বিশেষভাবে এক মন্ত্রপুস্তক হয়ে ওঠে। কালী মদ, মাংস খেতেই পারেন। সিগারেট বা গাঁজায় টান মারতেই পারেন। কিছুদিন আগে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতে মন্দিরে রণবীরের জুতো পরে ঢোকার দৃশ্য দেখানোয় বিতর্ক উঠেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের মুখে পড়েছিলেন ছবির পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়। আসলে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ টভিযোগগুলি বড্ড ক্লিশে।

‘ব্রহ্মযামল তন্ত্র’ অনুযায়ী বাংলায় যেকালীর বা কালী রূপটির পুজো হয় তা হল দক্ষিণাকালী বা শ্যামাকালী। ঋষি বশিষ্ঠ মদ-সহকারে যে তন্ত্রসিদ্ধ কালী পুজোর পদ্ধতি বঙ্গের বুকে প্রবর্তন করেছিলেন জনশ্রুতি বলে, তিনি হাজার বছর তপস্যা করেও সিদ্ধি অর্জন করতে পারছিলেন না। তখন তিনি বিষ্ণুর নির্দেশে চীনদেশে যান। সেখানে গিয়ে বশিষ্ঠ দেখেন, সেখানে পঞ্চ ম কার অর্থাৎ মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন সহকারে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা করা হয়। সেই সাধন পদ্ধতিই বশিষ্ঠ নিয়ে আসেন বঙ্গে। পণ্ডিতদের বক্তব্য, বৈষ্ণবদের পঞ্চগব্য অর্থাৎ দধি-দুগ্ধ-ঘৃত-গোমূত্র-গোময়ের ঠিক বিপরীতেই অবস্থান করে শাক্তদের মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন।