Subhas Chandra Bose. (File Photo: IANS)

এক নজরে

গীতিকার ও সুরকার উত্তমকুমারের নেতাজী

By admin

January 23, 2023

নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর জন্মদিনে এই গানটি কি কোথাও আর শোনা যায়? একদিন প্রভাত ফেরিতে এই গানটি পরিবেশিত হয়েছিল যার উদ্যোগে এবং উৎসাহে তিনি নেই বহুকাল। চার দশক পেরিয়ে গেল। এখনও তাঁর মতো নায়ক নাকি বাংলা সিনেমায় কেউ হাজির হন নি। একথা বলে থাকেন অনেকেই। বাংলা সিনেমায় নায়ক তাঁর আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। কিন্তু তিনি মহানায়ক। তাঁর ক্যারিশমা ও জনপ্রিয়তা এখনও কেউ অর্জন করতে পারেনি। তাই এখনও তিনি বাঙালির ম্যাটিনি আইডল।

উত্তমকুমার গান খুবই ভালবাসতেন। গান তিনি শিখেও ছিলেন। তবে গায়ক হবার ইচ্ছে তাঁর কোনওদিন ছিল না। তাঁর জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিল; তিনি সিনেমার নায়ক হবেন। যদিও সেই স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল গান শেখা দিয়েই। সিনেমার নায়ক অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়-এটাই ছিল তাঁর মাছের চোখ। উত্তমকুমার হয়ে ওঠার প্রস্তুতি তিনি নিয়েছিলেন গান শেখা দিয়েই। আত্মজীবনী আমার আমিতে সে কথা উত্তমকুমার লিখেছেন।

অরুণকুমার যখন নায়ক হবার স্বপ্ন দেখতেন, তখনও প্লেব্যাক পদ্ধতি সে ভাবে চালু হয়নি। তাই সিনেমায় নায়ক হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত ছিল ভাল গায়ক হওয়া। তখনকার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অধিকাংশ গান জানতেন। তাঁরা তখন  রীতিমতো সঙ্গীতচর্চা করতেন।

অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়ও তাই গান শেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। অভিনয়ের আগেই তিনি গানের জগতে এসেছিলেন। ভবানীপুরের গিরীশ মুখার্জি রোডে তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত বসতো গানের আসর। সেখানে মাঝে মধ্যেই আসতেন মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক হ্রিষিকেশ মুখার্জির বাবা শীতল মুখার্জি, সেখানে তিনি টপ্পা গাইতেন।

গানের পরিবেশে বেড়ে ওঠা অরুণকুমার এরপর পোর্ট কমিশনার্শে চাকরির পাশাপাশি নাড়া বেঁধেছিলেন গুরু নিদানবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কেবলমাত্র গান শেখা নয়, অরুণকুমার নিজে গান শিখে কিছু দিন সাউথ চক্রবেড়িয়ার মনোরমা স্কুলে গান শিখিয়েওছিলেন।

এরপর অনুষ্ঠানে একটি গান গাইবার সুযোগ পেতে অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় বিচিত্রানুষ্ঠানের কর্তাদের দোরগোড়ায় হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। এরও অনেক পরে উত্তমকুমারের লিপে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া গান শুনেছে বাঙালি, শোনা গিয়েছে তাঁর নিজের কণ্ঠেরও গান। তবে সেই ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবার।

নানান ঘরোয়া আসরে এবং মঞ্চে গান গাইলেও সিনেমায় গায়ক ও নায়কের ভূমিকায় মাত্র একবারই পাওয়া গেছে তাঁকে।‌ উত্তম কুমার অভিনীত চরিত্রে চিরকাল কন্ঠ দিয়েছেন হেমম্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমার প্রমুখ শিল্পী। সেই সব গানগুলি আজও হিট।‌

নিজের গাওয়া গানে তিনি একবার মাত্র অভিনয় করেছেন। সেটি ছিল তাঁর ৪৭তম ছবি। ১৯৫৬ সালে উত্তমকুমার অভিনীত ১১টি ছবিমুক্তি পায়। তার ‌মধ্যে চারটির অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। ওই বছরের প্রথম ছবি ছিল ‘সাগরিকা’‌ আর শেষ ছবি ছিল দেবকীকুমার বসু পরিচালিত ‘নবজন্ম’। ‌‌

১৯৫৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নবজন্ম’  ছবিতে প্রথম ও শেষবার শোনা যায় গায়ক উত্তমকুমারের গান। গৌরাঙ্গ-র ভূমিকায় নচিকেতা ঘোষের সুরে মহানায়ক গেয়েছিলেন মোট ৬টি গান। ‌তার মধ্যে ছিল ‘কানু কহে রাই, কহিতে ডরাই’, ‘আমি আঙুল কাটিয়া’ ইত্যাদি গান।   

তবে উত্তমকুমারের সঙ্গীত প্রতিভার পরিচয় মিলেছিল তারও বহু আগে। তখন তিনি উত্তমকুমার নন। অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় তখন সবে শৈশব পেরিয়ে যৌবনে পা রেখেছেন। আর পাঁচটি বাঙালি তরুণের মতো নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন উত্তমকুমারের প্রিয় নায়ক। স্মৃতিচারণে উত্তম কুমার জানিয়েছেন, বন্ধুদের জুটিয়ে ২৩ জানুয়ারিভবানীপুরে প্রভাতফেরি করতেন। নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ তখন লড়ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। সে-বছর সুভাষের জন্মদিনে উত্তমকুমার নিজেই লিখলেন এবং সুর দিলেন একটি গান। প্রভাতফেরীতে দল বেঁধে গাইলেন গানটি –