ইন্দ্রনীল বসু
কত আয়োজন, কত তোড়জোড়। নিউইয়র্ক থেকে কলকাতা মেতে উঠেছিল মোহনবাগান দিবসে। কি উৎসাহ ছিল সমর্থকদের মনে। কাল নিউইয়র্কের নাশডাক বোর্ডে বাগানের পালতোলা ভেসে উঠতেই কলকাতার লাখো ফেসবুক টাইমলাইনে ঝলসে উঠেছিল নৌকো।
আজ সারাদিন ধরে মোহনবাগান তাবুতে কর্মসূচী রেখেছিলেন কর্মকর্তারা। সকাল থেকে-রাত- ভার্চুয়ালেও ঠাসা আয়োজন। হলে হবে কি? কপালে না থাকলে ঘি, ঠকঠকিয়ে হবে কি ? অনুষ্ঠান তো শুরু হলো। বাঙালির সময়ে। সামান্য লেট। কর্মকর্তারা এলেন। বেদীতে মাল্যদান হলো। কিন্তু সদস্য-সমর্থক? যতই ক্লাবকে ভালোবাসো , প্রাণের দাম সবার আগে। বোঝো কাণ্ড। কোরোনার এত গুন দিকে দিকে মানুষ খুন। কথায় বলে, আঃ জান হ্যায় তো জাহান হায়। জীবনটাই না থাকলে ক্লাব দিয়ে কি হবে?
তাই সমর্থকরা ফেসবুক আর হোয়াৎসঅ্যাপে শুভেচ্ছার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। সবুজ-মেরুনে পাড়ার অলি গলিও সেজেছে। কিন্তু অন্যান্য বারের মতো ট্রাক-বাস বা গাড়ি হাঁকিয়ে ময়দানে যাওয়ার সেই অভ্যেস এবার ছাড়তে হয়েছে। একে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে রাজ্যজুড়ে লকডাউন। তার সঙ্গে সকাল থেকে মুখ ভার আকাশের। কোথাও মুসল ধারায় সকাল থেকে বৃষ্টি। মনে ভয়, কোথায় যে করোনা ওত পেতে বসে আছে? হে হে । সমর্থকরা বিলক্ষণ জানেন আগে পিছে উপর নীচে কই নেহি। মই দিয়ে তুলে তো দিল। তারপর যদি…..
সব ফাকা। সারি সারি চেয়ার। মোহনবাগানের অমন সবুজ মখমলে মাঠ, রাম্পাড, গ্যালারি – সব। কেউ কেউ যাও বা গোষ্ট পাল এর মত বুক ঠুকে পুলিশকে এড়িয়ে একবার তাঁবুতে উঁকি মারবেন হয়তো ভেবেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি থেকে সর্দি জ্বর হলে …..আবার সেই সেই ঘুরে ফিরে করোনা।
সাজানো গোছানো তাঁবুতে শুধু দেখা গেলো ১৯১১ সালের বেঞ্চটি। এই বেঞ্চে ব্যবহার করতেন ১৯১১ সালের শিল্ড বিজয়ী মোহনবাগান ফুটবলাররা। সেই ঐতিহাসিক বেঞ্চে সকালেই সেই ঐতিহাসিক বেঞ্চে সকালেই মালা দিয়েছিলেন বাগান কর্তারা। শৈলেন, পি কে , বিদেশ থেকে হালের ব্যারাটকে দেখার সাক্ষী বহন করে বসে আছে সেই বেঞ্চ।
কিন্তু ২৯ জুলাই মোহনবাগান দিবসের দুপুরে এমন খাঁ খাঁ মোহনবাগান তাঁবু! সব দেখে শুনে মান্না দের একটা গান মনে পড়ছিল – ‘মুকুটটা তো পরেই আছে রাজাই শুধু নেই।’ এখানে অবশ্যই রাজা সেই এক ও অকৃত্রিম সবুজ-মেরুন সমর্থকরা।