এক নজরে

আবর্জনা থেকে কুড়িয়ে আনা বইয়ের লাইব্রেরি

By admin

October 26, 2021

তপন মল্লিক চৌধুরী

বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে জর্ডনের জেরাস শহরের সত্তর পেরিয়ে যাওয়া  মোহাম্মাদ সেলিম আবু যাকারিয়া রাস্তাঘাট আর আবর্জনা থেকে কুড়িয়ে আনা লাখ লাখ বই থেকে গড়েছেন পাঠাগার। সকালে ঘুম থেকে উঠে বই সংগ্রহেবেরিয়ে পড়েন তিনি। রাস্তার ধার, ময়লার ভাগাড় থেকে ফেলে দেওয়া বই তুলে এনে পরিষ্কার করে মলাট দেন। এতে বাতিল বই নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।এই ভাবে গত চার দশক ধরেএক লাখের বেশি বই সংগ্রহ করেছেন আবু যাকারিয়া।তাঁর বিশ্বাসএইপ্রচেষ্টা জর্ডানবাসীর মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়াবে।

বই পড়ার আগ্রহ ফিরিয়ে আনতেতামিলনাড়ুর থুটুকুড়িতেসেলুন লাইব্রেরি খুলেছেন পন মারিয়াপ্পান।‘সুশীল কুমার বিউটি সেন্টার’ আদতে একটি সেলুন, তবেআর পাঁচটা স্যালুনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেলুনের মধ্যেই এখানে জায়গা পেয়েছে একটি লাইব্রেরি। প্রায় হাজার বইয়ের এই সংগ্রহশালায় ইংরেজি ভাষার বই ছাড়াও আছে তামিল ভাষার বই। যে কেউ চুল কাটাতে এসে এখানে বসে নিশ্চিন্তে পড়ে ফেলতে পারেন কোনও একটি বই।

স্যালুনের দেয়ালে বই রাখার তাকের মাঝে পাতা আছে বসার ব্যবস্থা। শুধু বই পড়ার ব্যবস্থাই নয়, বই পড়াকে উৎসাহিত করতে মারিয়াপ্পান এখানে রেখেছেন ডিসকাউন্টের ব্যবস্থাও। কেউ ১০ পাতা বই পড়লে তার জন্য রয়েছে ৩০ টাকা ছাড়। তার এই উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে বই পড়া নিয়ে বেশ একটা সারা মিলেছে। অনেক বাবা মা তাঁদের ছেলেমেয়েদের মারিয়াপ্পানের সেলুনে চুল কাটাতে পাঠান যাতেতারা বইয়ের প্রতি সামান্য হলেও আকৃষ্ট হন।

অনেকেই বই পড়ায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে আসেন। এসবই পাঠক মনের সচেতনা যা একটি লাইব্রেরি থেকেই গড়ে উঠেছে। মারিয়াপ্পান সেলুনে রেখেছেন একটা রেজিস্ট্রি খাতা, যেখানে পাঠকেরা বই সম্পর্কে মূল্যবান মন্তব্য করতে পারেনপাশাপাশি লাইব্রেরির উন্নয়ন নিয়েও কিছু কথা বলে যেতে পারেন, পরামর্শ থাকলে তাও লিখতে পারেন।

রাস্তার ধারের আবর্জনা থেকে কুড়িয়ে আনা বই দিয়েনিজের বাড়িতেই একটি অভিনবলাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন কলম্বিয়ার হোসে আলবার্তো গুতেরেজ। যিনি নিজে একজন সাফাই কর্মী। কলম্বিয়ার বোগোতা বুকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই লাইব্রেরি। লাইব্রেরি গেটের মাথায় বড় হরফে লেখা রয়েছে ‘স্ট্রেন্থ অফ ওয়ার্ডস’। লাইব্রেরিহলেও আর পাঁচটা বাড়ির মতোই। তবে একবার সেই লাইব্রেরির মধ্যে ঢুকে পড়লে যে কেউ অবাক হয়ে যাবেন। লাইব্রেরিতে দাঁড়ানোর একটুও জায়গা নেই। পুরো লাইব্রেরি জুড়েই ঠাসাঠাসি করে রাখা নানা স্বাদের বই। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, থেকে পাঠ্যবই সবকিছুই মিলবে এখানে। তবে কোনোটাইআলাদা আলাদা করে সাজানো নেই। একটু কষ্ট করে নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে নিজের চাহিদার বইটি। আর খুঁজে না পেলে দ্বারস্থ হতে হবে লাইব্রেরির কর্ণধার হোসে আলবার্তো গুতেরেজের। তখন তিনিই ত্রাতা হয়ে বইয়ের স্তুপের থেকে খুঁজে আনবেন সেই বইটি।

সব মিলিয়ে বিশ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে হোসে আলবার্তো গুতেরেজের লাইব্রেরিতে। সাফাইকর্মী হোসে ব্যক্তিগত জীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরতে পারেননি। কিন্তু বইয়ের প্রতি তাঁরভালবাসা ছিল চিরকালই। একদিন বোগোতাশহরের ডাস্টবিন পরিষ্কারের সময় তার চোখে পড়ে লিও টলস্টয়ের‘অ্যানা ক্যারেনিনা’। আবর্জনার স্তুপ থেকে বইটি উদ্ধার করে তিনি নিজের বাড়িতে রাখলেন। সেই শুরু, তারপর বোগোতাশহরের বিভিন্ন প্রান্তের আবর্জনা থেকে সংগ্রহ করতে থাকেন একাধিক বই। কোনো বইয়ে পাতা ভাজ হয়ে আছে, কোনোটি জলে ভেজা, নোংরা মাখা- সেগুলি সযত্নে পরিস্কার করেছেন।

গুতেরেজ সব পাঠকদের বিনামূল্যে তাঁর লাইব্রেরি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন।শুধু তাই নয় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পড়ুয়াদের জন্য বাড়িতেও বই পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন হোসে গুতেরেজ। নিজের বাড়ি ভরাট হয়ে যাওয়ার তার পরবর্তী পরিকল্পনা রয়েছে প্রান্তিক অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী এবং পাঠকদের জন্য আরও একটি এমন লাইব্রেরি তৈরির।