পাশে পুলিশই
কলকাতা ব্যুরো: বাড়ির একমাত্র নন কোভিড চিহ্নিত বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন রবিবার। তাঁর পরিবারে ছেলে, তাঁর স্ত্রী, তাঁদের দুই সন্তান-সকলেই করোনা আক্রান্ত। ফলে পাটুলি-র বাসিন্দা বৃদ্ধাকে দাহ করা যাবে কী ভাবে?
ছেলে একে একে খবর দিলেন আশপাশে থাকা আত্মীয়দের। কিন্তু আসছি, আসবো করে সেই ফোন ছেড়েই আত্মীয়রা কেউ দিলেন ফোনের সুইচ অফ করে, কেউবা হয়ে গেলেন নট-রিচেবল।
বাড়ির একঘরে পারুল বালা মজুমদার (৮৩) মারা গিয়েছেন। আর অন্য ঘরে কোভিড আক্রান্ত ছেলে অসহায়ভাবে, মায়ের সৎকরের ব্যবস্থা না করতে পেরে হাহাকার করছেন। নিজেরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ছুঁতে পারছেন না মৃতদেহ। আত্মীয়রা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন।
রবীন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা ছেলে বেলা ১০ টাতেই পাটুলি থানায় ফোন করে এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সাহায্য। যেহেতু বৃদ্ধা মারা গেছেন নন কোভিড কারণে তাই পুরসভা এমন ক্ষেত্রে না কি দাহ করার জন্য কোনো সাহায্য করতে পারবে না। হাত তুলে নেয় স্বাস্থ্য দপ্তরও। অথচ পুলিশ তার আগেই স্থানীয় চিকিৎসককে দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লেখানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
পুরসভা-স্বাস্থ্য দপ্তর মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় পাটুলি থানা এবার দ্বারস্থ হয় হিন্দু সৎকার সমিতির। কিন্তু তাদের সব শববাহী গাড়ি সরকারি জায়গায় খাটছে। ফলে সেখান থেকেও হতাশ হতে হলো পুলিশকে।
এ ভাবেই এখান ওখানে একটা শববাহী গাড়ির জন্য অনুরোধ-উপরোধ করেও বিফল হতে হলো। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কাউন্সিলর ব্যাবস্থা করে দিলেন একটি গাড়ির।
কিন্তু পরিবারের সকলে করোনা আক্রান্ত। তাহলে মুখাগ্নি করবে কে? আত্মীয়রা ফোন বন্ধ করে মুখের উপর জবাব দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে কী পুলিশকেই মুখাগ্নিও করতে হবে? শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৃদ্ধার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে রাজি করালো পুলিশই। সন্ধের আগে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাটুলি থানার পুলিশ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে বোড়াল শ্মশানে।
দিনের শেষে পুলিশই একদিকে যেমন করোনা রোগীদের নানাভাবে সাহায্য করছে, একইভাবে এই কোভিড আক্রান্ত পরিবারের নন কোভিড, অসুস্থ হয়ে মৃত বৃদ্ধাকে সৎকারের দায়িত্ব নিলো। অথচ কোভিড হলে সাহায্য করবো বা ব্যবস্থার সুযোগ আছে–এমন যুক্তিতে পুরসভা বা স্বাস্থ্য দপ্তর কী করে হাত গুটিয়ে নেয়?
যদি শুধু করোনা আক্রান্ত হলেই সরকারি দপ্তর সাহায্য করে, তাহলে করোনা না হয়ে মৃত্যু কি এখন অভিশাপ? প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকরা।