কলকাতা ব্যুরো: জনস্রোতের ঠিকানার নাম ধর্মতলা। দু’বছর পর ধর্মতলা ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে ফিরছে তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাইয়ের (21 July) শহিদ তর্পণের অনুষ্ঠান। আর এই মঞ্চ থেকে শুধু বাংলা নয়, জাতীয় ক্ষেত্রে দলের গতিমুখ কী হতে চলেছে, তার রোডম্যাপ তৈরি করে দেবেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এবার একুশের সমাবেশে থাকছেন না রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। সম্প্রতি তাঁর একটি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। শরীর এখনও অসুস্থ। তাই এবারের সমাবেশে আসছেন না। সভায় যোগ দিতে এসেছেন অনীত থাপা। পাশাপাশি সভাস্থলের নিরাপত্তায় কড়া নজর দেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সভাস্থল ঘুরে দেখছেন সিপি বিনীতকুমার গোয়েল।
এদিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়েছে শহর কলকাতা। ধর্মতলা চত্বরের আশপাশের অঞ্চল ১৫টি জোনে ভাগ করে থাকবে নজরদারি। দায়িত্বে থাকবেন একজন করে ডিসি। মূল মঞ্চকে তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের দায়িত্বে একজন ডিসি, তিনজন এসি, পাঁচ ইন্সপেক্টর, ৫ সাব-ইন্সপেক্টর, ৩০ পুলিশকর্মী, ৯৫ সাদা পোশাকের পুলিশ, ৪০ জন র্যা ফ। মঞ্চের পিছন দিক ও সংলগ্ন এলাকায় সাতটি ভাগে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, ভিআইপির রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বোঝাই গাড়ি। চারচাকা গাড়ির সঙ্গে বাইকের ধাক্কায় গুরুতর জখম পথচারী এবং বাইক আরোহী। উল্টোডাঙা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে। কৈখালি থেকে ধর্মতলা যাচ্ছিলেন সমর্থকরা।
উল্লেখ্য, শহিদ দিবসের শহরে গান্ধী পরিবারের দুই সদস্য। সূত্রের খবর, কলকাতায় রয়েছেন বিজেপির দুই সাংসদ মানেকা এবং বরুণ গান্ধী। একুশের সভায় কি তাঁরা যাবেন? ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা।
বৃহস্পতিবার একুশে জুলাইয়ের (21 July) মঞ্চ থেকে বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এ রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করা জরুরি। একই সঙ্গে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে একুশে জুলাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মূলত সেই কারণে আজকের এই মেগা সমাবেশের দিকে চোখ থাকবে গোটা দেশের।
বুধবার বিকেলে ধর্মতলায় এসে একুশের গতিবিধি ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে যেভাবে দেখতে চায়, দল নিজেকে সেভাবেই পরিবর্তন করবে। তবে এই বদলের রূপরেখা কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী স্বয়ং। খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজন পোষণ, সিন্ডিকেট যোগ, তোলাবাজি-সহ যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, এগুলি থেকে দলকে শুদ্ধিকরণের পথ কী হবে, তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনতে চায় জনতা। আর তাই এদিনের মেগা সমাবেশে তাৎপর্য অনেকটাই বেশি।
আজ এই শহিদ মঞ্চ থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে দলনেত্রীর ভাবনা কী, তাও জানা যেতে পারে। উল্লেখ্য গত ক’দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এসে জমা হয়েছে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সেন্ট্রাল কলকাতা ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র এবং বড় বাজারের একাধিক ধর্মশালায়। বুধবার বিকেল পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তার প্রায় কয়েক গুণ বেশি মানুষ আজ ট্রেন বা বাসের মাধ্যমে ধর্মতলা আসেন। সকাল ছ’টা থেকে একের পর এক মিছিল শিয়ালদা, হাওড়া, শ্যামবাজার এবং হাজরা মোড় থেকে ধর্মতলা অভিমুখে রওনা হচ্ছে।
শহিদ স্মরণে ২১ জুলাইয়ের সকালে টুইটার বার্তায় তুলে ধরা হল ঐতিহাসিক ‘কালো দিনের’ ইতিহাস। অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটারে লেখা হয়েছে, ২১ জুলাই (21July) একটা আবেগ। হৃদয়ের ভীষণ কাছের একটি দিন। ১৩ জন কর্মীর অকালমৃত্যুতে আমরা শোকস্তব্ধ। তবে কথা দিচ্ছি, তাঁদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। শহিদদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে সাতটা। এর মধ্যে ধর্মতলায় প্রায় হাজার তিরিশেক মানুষের ভিড়। বেলা যত বাড়বে, ততই বাড়বে জনসমাগম। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য অনুযায়ী, আজ ধর্মতলায় রেকর্ড জমায়েত হবে। খোলা চোখে জনসমুদ্র দেখবে বাংলার মানুষ।