এক নজরে

কোচবিহারের রাজ-রাসে পুজোয় বসলেন জেলাশাসক

By admin

November 30, 2020

দিব্যেন্দু ভৌমিক, কোচবিহার,রবিবার শুরু হল কোচবিহারের রাজ আমলের রাসযাত্রা। আলতাফ মিয়া নির্মিত সম্প্রীতির রাসচক্র ঘুরিয়ে রবিবার রাস পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯ টা বেজে ১২ মিনিট কোচবিহারের মহারাজার কুলদেবতা মদনমোহন দেবের’ রাসযাত্রা’ র সূচনা করলেন কোচবিহার দেবোত্তরর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলাশাসক পবন কাদিয়ান ।সারাদিনই নির্জলা উপবাসে ছিলেন জেলা শাসক।

উত্থান একাদশী এবং তারপর তিনদিন সঙ্গীদের নিয়ে মদনমোহন দেবের নির্ভেজাল আড্ডা তথা ‘ বারাম’ শেষে রবিবার সন্ধ্যায় ‘ পশার ভাঙ্গা’ অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় মদনমোহন মন্দিরে ‘ রাসপুজো’। রাত সাড়ে আটটায় পুজোয় বসেন জেলাশাসক। উপস্থিত ছিলেন রাজপ্রতিনিধি ‘ দুয়ারবক্সি’ অজয় কুমার দেব বক্সী। প্রথমে জেলাশাসক পবন কাদিয়ান রাসচক্র ঘোরান। আগে ঘোরাতেন মহারাজারা। তারপর একে একে জেলা পুলিশ সুপার কে .কান্নান সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা রাসচক্র ঘোরান।ততক্ষনে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ি বাইরে বিশাল লাইন জনতার। সকলেরই একটাই উদ্দেশ্য, ১৫ দিন ধরে রাসযাত্রা চললেও, প্রথম দিনই অর্থাৎ রাস পূর্ণিমার দিনই ঘোরাতে হবে রাস! কিন্তু না? এখন সবাই ঢুকতে পারবেন না। করোনা আবহে রাসে রাশ টানা হয়েছে ।” কোভিড প্রটোকল মেনেই সমস্ত কিছু হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বিধি কোন ভাবেই অমান্য করা হবে না রাসযাত্রার দিন গুলাতে, ” জানান কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের অন্যতম সদস্য , সদর মহকুমা শাসক সব্যসাচী রায় ।সত্যি একটু যেন খেই হারিয়ে হচ্ছে এবারের মদনমোহনের রাসযাত্রা। ২০৮ তম বর্ষে থমকে গেল রাসযাত্রা উপলক্ষে ‘ রাসমেলা’। ১৯২৩ সালের পর ২০২০। ১৯২৩  সালে রাজ্যে কলেরার প্রকোপ বাড়ায় সেবার বন্ধ ছিল রাজ ঐতিহ্যবাহী কোচবিহার রাসমেলা। আর এবার করোনা আবহে স্থগিত হলো মেলা।  ফিরে দেখা ৯৮ বছর। রাসমেলা ময়দানে পুরসভা পরিচালিত রাসমেলা এ বছর হচ্ছে না। কোচবিহার পুরসভার প্রশাসক  ভূষণ সিংহ এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ” করোনা প্রকপের জন্য এ হবে না রাসমেলা । মানুষের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। তবে সরকারি স্টল , স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টল , খাবারের দোকান , ছোট্ট দু ‘ একটি রাইড ,অল্প কিছু বাণিজ্যিক স্টল নিয়ে ৩০ নভেম্বর থেকে এম জে এন স্টেডিয়ামে হবে ‘ শিল্পমেলা’। চলবে ১৫ দিন। “তবে প্রতিবারের মতই সেজে উঠেছে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ি। ১৭ টি পুতুলঘরও সেজে উঠেছে । লাল টুকটুকে ‘ পুতোনা’ও স্বমহিমায় ! সাংস্কৃতিক মঞ্চে যাত্রা, পালাগান না হলেও হবে ভাগবত পাঠ , গীতাপাঠ।আলোকমালায় সেজেছে শ্বেত শুভ্র ঠাকুর বাড়ি ।

‘ আমন ধানের মেলা’  রাসমেলা। হেমন্তের মাঝামাঝিতে কৃষকের ঘরে আমন ধান ওঠে।  আনন্দের জোয়ারে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তারা।  আর সেই অনাবিল আনন্দ ছেয়ে  রাখে কোচবিহারের রাসমেলাকে। ১৮১২ সালে মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে যখন কোচবিহারের রাজধানী ভেটাগুড়িতে ছিল, তখনই শুরু হয় কোচবিহারের মদনমোহনের রাসমেলা।১৮৯০ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়নের সময় কালে মদনমোহন মন্দির স্থাপিত হলে, মেলা বসে বৈরাগী দিঘির পারে। পরে বিশেষ কারনে মহারাজার নির্দেশে  মন্দিরের কিছু দূরেই ‘ প্যারেড গ্রাউন্ডে’ এ সরে আসে মেলা । এখন যা ‘ রাসমেলার মাঠ’  নামেই  পরিচিত।  পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা এটি। ১৫ দিনব্যাপী রাসমেলা উপলক্ষে মেলার আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ঢেলে সাজানো হয়। চারিদিকে আলোর বন্যা বয়ে যায়। প্রায় আড়াই হাজার স্টলে শীতের পোশাক থেকে মনিহারি , খেলনা থেকে গৃহস্থালি -নানান সম্ভারে ও হাজারো খাবারের স্টলে সেজে ওঠে মেলা চত্ত্বর ।জেলা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম থেকেও বহু মানুষের আনাগোনা চলে এই এক পক্ষকালব্যাপী।সাংস্কৃতিক মঞ্চে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি  টলিউড থেকে বলিউডের তারকারা দাপিয়ে বেড়ান। টমটমের শব্দ ঘুম ভাঙ্গে রাজনগরের মানুষের। সকাল থেকে রাত জিলিপির গন্ধে ম ম করে মেলা চত্বর। না ! সবই হত ! এ বছর এসবের কোনোটাই আর হচ্ছে না । কারণ বসছে না মেলা।  করোনার গ্রাসে সমগ্র বিশ্ব। তাই ভিড়ের কারণে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সে দিকেই নজর রেখে এ বছরের জন্য মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল কোচবিহার পৌরসভা। বিভিন্ন মহল সাধুবাদ জানিয়েছেন পুরসভার এই সীধান্তকে। ” মেনে নিতেই হবে। কি করা যাবে। এখন যা পরিস্থতি । এটা একদম সঠিক পদক্ষেপ। ব্যবসায়ী , সাধারণ মানুষ সবার  কাছে এবার আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সামনের বার আরও ভাল করে মেলা করব। এবার শুধু মদনমোহন দেবের রাসযাত্রাই হউক, “-জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ।” সবার মঙ্গল কামনায় নির্জলা উপবাস থেকে রাজ আমলের রাসপুজোতে বসলাম । রাসচক্র ঘোরালাম । জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা ।