এক নজরে

কার্ল মার্কস তাঁর ‘ক্যাপিটাল’ উৎসর্গ করেছিলেন ডারউইনকে

By admin

February 12, 2023

যে খ্রিস্টীয় সৃষ্টিতত্ত্বের বিশ্বাসের আওতায় তাঁকে বড়হতে হয়েছিল,তাঁর সারাজীবনের গবেষণা কর্মকান্ড সেই বিশ্বাসকেই সমূলে উৎপাটিত করেছে।তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক, সেই আশা ফলবতী না হওয়ায় চাইলেন অন্তত যাজক হোক। কিন্তু তিনি তা-ও হননি, হলেন প্রকৃতিবিজ্ঞানী। ছোটবেলা থেকেই বাঁধাধরা পড়াশোনা তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাঁর ঝোক ছিল নানা ধরনের নুড়িপাথর, মুদ্রা, নামলেখা মোহর, গাছপালা, লতাপাতা, পোকামাকড়, পাখির ডিম সংগ্রহ করে চিহ্নিত করে রাখার কাজে। এছাড়া রসায়নশাস্ত্রের প্রতি ছিল তার এক সহজাত আকর্ষণ। সাহিত্যের প্রতিও তার আকর্ষণ ছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজের যাজক হওয়ার ক্লাস করতে গিয়ে যাজক হওয়া হয়নি তাঁর। বরং ওই সময়ে চলতো দল বেঁধে শিকার করা, সেই সঙ্গে পোকামাকড় সংগ্রহ করে চিহ্নিত করার কাজ।

গ্যালাপাগোসের বিরল প্রজাতিদের লক্ষ্য করেই তিনি ভেবেছিলেন,  ওই সব প্রজাতি একসময় মূল ভূখন্ডের পূর্বপুরুষদের মধ্যে থেকেই এসেছিল এবং পরে কোনও কারণে অন্যরকম হয়ে উঠেছে- কিন্তু কিভাবে এবং কেন?  এমন কি হতে পারে যে জীবনযাত্রার পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক রয়েছে- যা সম্ভবত কতকগুলি বৈশিষ্ট্যেরই অনুকূল, অন্যগুলির নয়? ‘অরিজিন অব স্পিসিস’ সংক্রান্ত যে চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্তে তিনি পরবর্তীতে পৌঁছান, তারও ২০ বছর পর তাঁর আবিষ্কার ও সিদ্ধান্তপুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। পৃথিবীর জ্ঞান-ভান্ডারে সংযোজিত হয় এক ঐতিহাসিক সম্পদ- অরিজিন অব স্পিসিস।ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠলেন সারা দেশের ধর্মগুরুরা। এই তত্ত্ব বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বের বিরোধী বলে ডারউইন তত্ত্বকে আক্রমণ করা হল। সভা-সমিতি থেকে শুরু করে নানা ভাবে ডারউইনকে হেয় করার চেষ্টা করা হল। মানুষকে বানরের মতো করে কার্টুন আঁকা হলো। Monkey law নামে আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে ডারউইন তত্ত্ব পড়ানো নিষিদ্ধ হল।

তবে চার্লস ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিসপ্রকাশিত হওয়ার পর বইটি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়লেন ফ্রিডরিশ এঙ্গেলস। পরের বছর কার্ল মার্কস। তিনিবইটি পড়ে এঙ্গেলসকে চিঠি লিখলেন। তিনি জানালেন, ‘বইটিআমাদের ধারণার প্রাকৃতিক-ঐতিহাসিক বুনিয়াদ সৃষ্টি করে দিয়েছে।ডারউইনের গবেষণাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও ঋণ স্বীকার করেকার্ল মার্কসতাঁর ‘ক্যাপিটাল’ গ্রন্থটিচার্লস ডারউইনের নামেই উৎসর্গ করেছিলেন। ফ্রিডরিশএঙ্গেলস তাঁর ‘ডায়লেকটিকস্ অব নেচার’ বইয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানের তিনটি ঘটনাকে চূড়ান্ত গুরুত্ব দিয়েছেন- জীবকোষের আবিষ্কার, শক্তির সংরক্ষণ ও তার রূপান্তরের নিয়ম আবিষ্কার এবং ডারউইনের আবিষ্কার।

ডারউইন তত্ত্বের অনেককিছুই আজ আধুনিক বিজ্ঞানের চর্চায় পরিত্যক্ত, সংশোধিত হয়েছে অনেক কিছু। ডারউইন তত্ত্বের বহু কিছু নিয়েই অনেক দিন আগে উঠেছে প্রশ্ন, তা নিয়ে চলছে গবেষণা, বিতর্ক। এটাই স্বাভাবিক। কারণ বিজ্ঞান এগিয়ে চলে নানা জনের নানা প্রয়াসের মধ্য দিয়ে। যদিও ডারউইনের মতো দিকপালদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই পৃথিবীর ইতিহাসে ডারউইন ও তাঁর বিবর্তন তত্ত্বের প্রতি ঋণ থেকেই যাবে।