ঘুরে-ট্যুরে

শীত পরতেই ট্রেকিংয়ের হাতেখড়ি ‘হীরক রাজার দেশে’ জয়চন্ডী পাহাড়ে ভিড়

By admin

December 23, 2020

গৌর শর্মা

শীত পড়তেই পর্বত আরোহী সংস্থাগুলির রং বাহারী তাবু ও পতাকায় সুসজ্জিত শিবিরে সেজে ওঠে পুরুলিয়া জেলার জয়চন্ডী বেড়ো ও মাঠা বুরু পাহাড়ের পাদদেশ । পাহাড়ে ওঠার সরমঞ্জাম নিয়ে দিন কয়েকের জন্য ভাবী পর্বত আরোহীদের পর্বত আরোহনের পাঠশালায় পরিনত হয় এই পাহাড়গুলি।জয়চন্ডীর বিস্তীর্ণ পাদদেশ, সুযোগাযোগ ব্যাবস্থা ও নিকটবর্তী রঘুনাথপুর বাজার থাকায়, স্বভাবতই জয়চন্ডী পাহাড়ে পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষন শিবিরের তাবু পড়ে বেশী। এই পাহাড় শুধু প্রকৃতি ও পর্বতপ্রমীদেরই নয়, তার সৌন্দর্য্য আকর্ষিত করেছিল চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়কেও। তার ‘হীরক রাজার দেশ’ এর শুটিংয়ের সূত্রে সত্যজিৎ রায় সহ গুপী-বাঘা, তপেন চ্যাটার্জী, রবি ঘোষ ও ‘পন্ডিত মশাই’ সদ্য প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদার্পন হয়েছিল এই পাহাড়তলিতে ।

ভূতত্ববিদদের মতে আজ থেকে প্রায় দশ কোটি বছর আগে সমুদ্র গর্ভে ভূকম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়ে ছিল গিরিরাজ হিমালয়ের। তারও পঞ্চাশ হাজার বছর আগে ভূকম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়ে ছিল জয়চন্ডী পাহাড়ের। হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন না কি এই জয়চন্ডী, যার তলায় রয়েছে ঘুমন্ত এক আগ্নেয় গিরি। জয়চন্ডীর নীচে সোনার খনি থাকার সম্ভবনার কথাও আবার লোক মুখে ফেরে। বর্গী আক্রমনের সময় কাশীপুর রাজার রাজকর্মীরা এই পাহাড়ের চূঁড়া থেকে আলোর সাংকেতিক বার্তার মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে মারাঠা আক্রমনের আগাম সতর্ক বার্তা জানাতেন।আজ থেকে প্রায় পঁয়ষট্টী বছর আগে আসানসোলে শুরু হয় পর্বত আরোহন চর্চা।

১৯৬৫ সালে পর্বতারোহী হীরেন্দ্র কুমার বাগচী, মনোজ ভৌমিক, প্রশান্ত চক্রবর্তী, প্রানেশ চৌধুরী ও অধ্যাপক দীপক দাস সহ আরো বেশ কয়েক জন পর্বতারোহীর উদ্যোগে আসানসোলে জন্ম নেয় আসানসোল মাউন্ট লাভার্স আসোসিয়েশন।চৌখাম্বা, মাতৃ, লামখাদা, নন্দাদেবী সহ আরো বেশ কিছু শৃঙ্গ জয়ের পালক জোটে আসানসোল মাউন্ট লাভার্স আসোসিয়েশনের মুকুটে ।পরবর্তীকালে শিল্পাঞ্চলে জন্ম নেয় পিকার্স, ট্রেকার্স, বার্ণপুর আরোহন, আসানসোল আরোহন, পিক টু পিক, কোলফিল্ড নেচার লাভার্স আরো বেশ কিছু সংস্থা। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, ৬০ বছর আগে আসানসোল মাউন্ট লাভার্স আসোসিয়েশনই জয়চন্ডী পাহাড়ে প্রথম তাবু ফেলে পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষন শিবিরের। সেই প্রথম পর্বত আরোহনে আসানসোল রাজ্যের দৃস্টি আকর্ষন করে। পরিচিতি বাড়ে জয়চণ্ডীর। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ও পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষন শিবিরের তাবু পড়তে থাকে জয়চন্ডী পাহাড়ে।

করনা আবহে অন্য বছরের তুলনায় এবার জয়চন্ডী ও বেড়ো পাহাড়ের শিবিরের সংখ্যা কম হলেও জয়চন্ডী পাহাড়ে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বেশ ভালোই। বার্ণপুর আরোহন ও পিকার্স ইতিমধ্যেই তাবু ফেলছে জয়চন্ডীতে। বেরো পাহাড়ে চলছে আসানসোল মাউন্ট লাভার্স আসোসিয়েশনের পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষন শিবির। সংস্থার সম্পাদক রাজা রায় জানান, করনা আবহে সম্পূর্ণ করনা বিধি মেনে কোলকাতাসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৩২ জন শিক্ষার্থী পর্বত আরোহনের প্রশিক্ষন নিচ্ছেন এবারের প্রশিক্ষন শিবিরে।