এক নজরে

#SpecialReport : দেড়শো ছোঁয়ার আগে শহরে ট্রাম ফেরানো যায় কি

By admin

June 07, 2022

দূষণ কমাতে ইউরোপের বহু শহরে ট্রাম ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এ শহরের গণপরিবহণে মেট্রোর পরিপূরক হিসেবে পরিবেশবান্ধব ট্রামের ভূমিকা আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণহয়ে উঠেছে। অনেকেই মনে করেন বাস বা অন্যান্য যানের তুলনায় ট্রাম যেমন বেশি সংখ্যক যাত্রী বহন করতে পারেএকই সঙ্গে শহরের দূষণ কমাতেট্রামের কার্যকারিতাও বেশি। তাছাড়া ট্রাম যানজট কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।

প্রসঙ্গত, এই শহরে ২০১৬ সালেও প্রায় ২৫টি রুটে ট্রাম চলত। তার মধ্যে এখন মাত্র দু’টি রুট চালু রয়েছে। মেট্রোর কাজের জন্য প্রায় চার বছর ধরে বি বা দী বাগ থেকে চলা সব রুট চার বছর বন্ধ।অন্যদিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য কয়েক মাস ধরে শ্যামবাজার-ধর্মতলা রুট বন্ধ হয়ে রয়েছে।তিন বছর হয়ে গেল চালু করা যায়নিখিদিরপুর-ধর্মতলা রুট। চলছে কেবল টালিগঞ্জ-গড়িয়াহাট এবং ধর্মতলা-বালিগঞ্জ রুট। ট্রাম বিদ্যুৎ শক্তিতে চলার কারণে শুধু যে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে তাই নয়, একটি ট্রাম সর্বাধিক ৩০০ যাত্রীকে বহন করতে সক্ষম। সেদিক থেকেও এই হালকা যানটির বাড়তি একট সুবিধা রয়েছে।

কলকাতায় ইলেকট্রিক ট্রাম চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ট্রাম খুব দ্রুত শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিল। গত শতকের আশির দশক পর্যন্ত ট্রামই ছিল কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শহরের ডিপোগুলি থেকে খুব ভোরে ট্রাম চালু হত। তখন ট্রামের দ্বিতীয শ্রেণীতে সবজি, ফল ও মাছ বিক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ত। মফস্সল থেকে ট্রেনে এসে তাঁরা ট্রাম ধরে শহরের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছতেন। এরপর ডালহৌসি কিংবা অফিস পাড়ার নিত্যযাত্রী এবং হাওড়া ও শিয়ালদহের ট্রেন যাত্রীদের বেশিরভাগই ট্রামের প্রথম শ্রেণীর কামরায় উঠতেন। আসলে সেই সময় সরকারি ও বেসরকারি বাস ছিল হাতেগোনা। তাছাড়া শহরের অনেকাংশ জুড়েই ছিল ট্রাম লাইনের একচেটিয়া আধিপত্য।

শহরের ট্রাম চলাচলের উপর প্রথম আঘাত নামে আশির দশকে যখন উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো করিডোরের কাজ শুরু হলেশহরের অফিস পাড়া ডালহৌসি থেকে দক্ষিণ কলকাতা অবধি বিস্তৃত ১২ কিমি ট্রাম রাস্তা সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়। যদিও পরবর্তীতে সেই লাইন আর কোনওদিনও জোড়া লাগেনি।এর পর ট্রাম কোম্পানি বাস পরিষেবা চালু করে এবং তাতে সামান্য হলেওলাভের মুখ দেখতে পায়। হয়ত তারপরই ট্রাম চালাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। তবে শহরের বুক থেকে ট্রাম লাইন তুলে দেওয়ার জন্যে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ভূমিকাও যথেষ্ট।দিনের পর দিন ট্রামের জন্যে যানজট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে- এই অভিযোগ তুলেছেন ট্রাফিক আধিকারীরা। তাদের অভিযোগ এবং অজুহাত দুয়ের সম্মিলিত সুপারিশে শেষ পর্যন্তশহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম লাইন বন্ধ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, গত শতকের নয়ের ধশকের গোড়ায় তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী বলেছিলেন, “ট্রাম একদিন স্বাভাবিক নিয়মে মারা যাবে”। কিন্তু শতাব্দী উত্তির্ণ পরিবেশবান্ধব যানটিকে তখন ভেন্টিলেশন থেকে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম কোম্পানির আধিকারিকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বেশ কযেকটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাম কয়েকটি রুটে নামানো হয়। বেশ কয়েকটি পুরোনো ট্রামের ভিতরকার খোলনলচে পাল্টে নতুন করে সাজানো হয় যাতে বিবাহ বা জন্মদিনের অনুষ্ঠান কিংবা নিছকই অফিস বা বন্ধুদের আমোদ অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া যায়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে যাওয়া রুট ফের চালু করারও চেষ্টা করেন ট্রাম কোম্পানির আধিকারিকরা।যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, পুরনো ঐতিহ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে ২০১৮ সালে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো থেকেশীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাম চালু হয়েছিল। যা নোনাপুকুর থেকে ধর্মতলা, ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার সারা দিনে ৬ বার চলত। তখন যা হেরিটেজ ট্যুরের জন্যই সাধারণত ব্যবহার করা হত তা এক পরবর্তীতে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য করা হয়। এবং সই ট্রমের গতি ছিল ঘন্টায় ৩৫ কিলোমিটার, ভাড়া ছিল উঠলেই কুড়ি টাকা।