এক নজরে

ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতির বিসর্জনে টাকি এবার প্রায় দর্শকশূন্য

By admin

October 26, 2020

কলকাতা ব্যুরো: দূর্গা পূজার বিসর্জন এক অন্য মাত্রা এনে দেয় বসিরহাটের টাকি র ভারত ও বাংলাদেশের ঠাকুর বিসর্জন দেখতে। দু দেশের মধ্যে সম্প্রীতির এক প্রতীক হয়ে উঠেছে ইছামতি নদীতে প্রতি বছর বিসর্জনের শোভাযাত্রা। এবছর যার অন্যথা হয়নি।যদিও করোনার আবহে এবার ভাটা পড়েছে দর্শক সমাগমে। প্রতিবছরই টাকিতে ইছামতীতে এপার ওপার দুই বাংলার দুর্গা প্রতিমা মাঝনদীতে বিসর্জনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন নদীর ধারে।

আবার দর্শকদের একটা অংশ নৌকো ভাড়া করে নেমে পড়েন নদীতেও। এবার কিন্তু দর্শক সমাগমে ভাটা পড়েছে চোখে পড়ার মতো। শুধু এপার বাংলায় নয়, ওপারেও বাংলাদেশের দিকে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।

করোনায় ভিড় যাতে না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে সপ্তাহ দুয়েক আগেই, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসন বৈঠক করে। সেই বৈঠকে বিএসএফ এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সিদ্ধান্ত নেয়, সব মিলিয়ে মোট দশটি ঠাকুর শোভাযাত্রায় বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হবে।

একইসঙ্গে অন্যান্যবার নদীতে নৌকা নিয়ে দর্শকের যে বেসামাল ভিড় হয়, তা এবার করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। ২০ থেকে ২৫ জনের বেশি নৌকায় তুলতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সোমবার দুপুর থেকেই ইছামতীতে বিসর্জন দেখতে একটু একটু করে ভিড় জমে টাকিতে। বিকেল পর্যন্ত বেশকিছু প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় নৌকো করে ইচ্ছামতীর মাঝখানে। তারপরে একেবারেই নদীর মাঝামাঝি অংশে এনে, প্রতিমা ঘুরিয়ে, সেখানেই বিসর্জন দেওয়া হয়।

এপারের বহু পুজোয় এবার যেহেতু আগের দিন বিজয়া পড়ে গিয়েছে, তাই সকালেই ঘট বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র শোভাযাত্রার অংশ নিতে প্রতিমা রেখে দেওয়া হয়েছিল। দুপুরের পরেই সেই সব প্রতিমা নৌকায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মাঝ নদীতে। এর বাইরে এদিন অনেক ঠাকুর দুপুরের পরে টাকি তেই বিসর্জন দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকটাই সেখানেও লোক সমাগম কম দেখা গিয়েছে।

কিন্তু এবারে কোনভাবেই বিশৃঙ্খলা করতে দেয়নি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বিএসএফের কর্তাদের বক্তব্য, অন্যান্যবার কিছু দর্শক নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে বিসর্জন দেখতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এমনকি তাদের জন্যই সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা করাও সমস্যা হয়ে পড়ে। তাই এবার ওইভাবে দর্শকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ না দিয়ে আগাম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

কয়েক বছর আগে টাকিতে এমনই এক বিসর্জনের শোভাযাত্রার পরেই দলে দলে লোক এদেশে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক হাজার লোক শুধুমাত্র এই বিসর্জনের অছিলায় ইছামতি পেরিয়ে এদেশে ঢুকে পড়ে। তারপর বিভিন্ন ভাবে তারা কেউ বসিরহাট, কেউ বনগাঁ হয় ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যত্র। যা নিয়ে সে সময় কেন্দ্রীয় সরকার প্রবলভাবে দুশেছিল সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে।

কিন্তু এবার যা হল তাতে কোথাও অতিরিক্ত লোক সমাগমের সুযোগ দেয়নি দুই দেশের রক্ষীবাহিনী। একইসঙ্গে ইছামতির মাঝ বরাবর দু’দেশের রক্ষীবাহিনী নৌকা নিয়ে এবং তাতে দড়ি বেঁধে ভাগ করে দেইয়। যাতে কোনোভাবেই ফাক গলে কোন লোক জন অন্যদিকে চলে না যায়।এরই মধ্যে টাকি পুরসভাও বারেবারেই মাইকে ঘোষণা করতে থাকে, বাংলাদেশের যেসব নৌকো ঠাকুর নিয়ে এপারের কাছাকাছি চলে এসেছে, তাদের সতর্ক করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিসর্জন। তারপরই হয় মিষ্টিমুখ। দু দেশ থেকে জমায়েত হওয়া বিসর্জনের সঙ্গে যুক্ত ক্লাবগুলির যুবকরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করেন। মিষ্টিমুখ করে বি জি বি ও বি এস এফও।

দু’দেশেই পুজোর শেষ দিনে এই বিসর্জন দেখতে প্রতিবার কাতারে কাতারে মানুষ ট্রেনে বাসে বা নিজস্ব গাড়িতে চেপে কলকাতা শহর ও অন্য জেলাগুলি থেকে টাকিতে ভিড় জমান। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলা শুরু হয়নি। বাসে চলছে খুব সামান্য। ফলে জনতার ভিড় বলতে যা বোঝায়, তার প্রায় কিছুই হয়নি বলে জানাচ্ছেন সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্তারা।

তাদের কথায়, কিছু লোক ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই বিসর্জন চাক্ষুষ করতে। তাদের হিসেবে, অন্যান্যবারের যে পরিমাণ লোক জড়ো হয়, তার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মাত্র এসেছেন এবার বিসর্জন দেখতে।