এক নজরে

বেকারত্বের শিখর ছুঁয়েছে মোদীর জয় অনুসন্ধান ভারত

By admin

September 04, 2022

দেশের বেশিরভাগ মানুষের রোজগারের রাস্তা যেখানে থমকে আছে অথবা সংকুচিত, বাজারে জিনিসপত্রের দাম যখন আগুন, শিক্ষা-চিকিৎসা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে, তখনও খিদে কিন্তু থেমে যায়নি, তবে পর্যাপ্ত খাদ্য না পেয়ে অপুষ্টিতে অকাল মৃত্যু ঘটেছে হুহু করে। পাশাপাশি প্রায় সবকটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে,যেমন করোনা কালের তেমনি পরবর্তী সময়েও দেশের যাবতীয় সুফল কুক্ষিগত করে চলেছে দেশের ধনকুবেররা। তাঁদের সম্পদ যত দ্রুত গতিতে বাড়ছে, ততোধিক গতিতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে আম-ভারতের অর্থনীতি।

এই পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে পরিসংখ্যানের কচকচি অব্যহত৷ এ বছর আর্থিক বৃদ্ধি ছয় না সাত শতাংশ, তা নিয়ে তর্কের শেষ নেই। কিন্তু এই কূটতর্কের ফাঁকে কর্মসংস্থানের বেহাল দশার যে চিত্রটি সামনে এসেছে তা হল এ বছরগত আট বছরে কর্মসংস্থানের হার একেবারে তলানিতে৷ ভারতের কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিয়ে ২০১৬ সালের রিপোর্টে লেবার ব্যুারো জানিয়েছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযান সহ একগুচ্ছ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করলেও দেশে বেকারত্ব বেড়েছে৷ পঞ্চম সর্বভারতীয় কর্মসংস্থান-বেকারত্ব সংক্রান্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভারতের প্রায় ৭৭ শতাংশ পরিবারেই নিয়মিত বেতনভুক বা রোজগারকারী ব্যক্তি নেই৷ যে কারণে ইউজুয়াল প্রিন্সিপ্যাল স্টেটাস অ্যাপ্রোচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মূল কাজ এবং প্রান্ত ভর্তুকির পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের বেকারত্বের হার ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছিল৷

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)২০১৮–র বার্ষিক রিপোর্ট জানিয়েছিল, ভারতে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে৷ ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সিএমইআই অথবা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে ভারতে গড় বেকারত্বের হার ৮.১ শতাংশ। ওই বছর নভেম্বর মাসে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি জানায়, ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জিডিপি বৃদ্ধির হার নিম্নগামী। শেয়ার বাজারের অবস্থাও খারাপ। শিল্পের গতিও মন্থর।গত ৬ বছরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুট সব চেয়ে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের বক্তব্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের তোলা স্লোগান সবকা সাথ সবকা বিকাশ-কে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং লোকসভায় জানান, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ২২ কোটি ৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৩৮ জন চাকরির জন্য আবেদন করে চাকরি পেয়েছেন ৭ লক্ষ ২২ হাজার ৩১১ জন।কোভিড অতিমারির কারণে গত দু’বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। বেকারত্বের হার বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বিগত পঞ্চাশ বছরে দেশজুড়ে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে।প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর আগ্রার এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি আমাদের সরকার জিতে ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রতিবছর দেশের ২ কোটি যুবক চাকরি পাবে।কিন্তু আট বছরের জমানায় ১৬ কোটি চাকরির মধ্যে ৭ লক্ষ চাকরি পেয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কর্মসংস্থান তৈরি হয় নির্মাণশিল্প, তথ্য–প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলিতে, এখন সেখানে চলে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই৷ মোদীর নোটবন্দি বহু মানুষের রোজগারে থাবা বসিয়েছে৷ তারপর জিএসটি–র কোপে বহু ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পের অবস্থা হাবুডুবু খাওয়ার মতো৷ খোদ মোদীর আর্থিক উপদেষ্টাই বলেছিলেন, নোটবন্দি–জিএসটি–র মতো অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করার কোনও দরকার ছিলনা, কিন্তু মোদীকে চমক দিতেই হবে, চমক দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অগ্রগতি দিলেন থমকে৷ নিয়ম করে প্রতি বছর বাজেট হয়েছে, পরিকল্পনার পাহাড়প্রমাণ সৌধ উঠেছে, কিন্তু কর্ম-সংকোচনের হার ধাপে ধাপে বেড়েছে৷ দেশজুড়ে চাকরির জন্য বেকার যুবকের হাহাকার আর্তনাদে পরিণত হয়েছে৷ আর মোদী স্বচ্ছ ভারত, গো রক্ষা, নোটবন্দি, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, সবকা সাথ সবকা বিকাশ–একের পর এক ভাঁওওতাবাজির স্লোগান তুলছেন।

মোদীর শ্লোগান তাঁর নিজের পকেটে রাখাই ভাল, কারণ অসংগঠিত ক্ষেত্র ছাড়া কাজের বাজার নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও পরিবারের মানুষদের দুবেলা পেট ভরানো এখন দুঃসাধ্য৷ কর্মসংস্থানের এই বাস্তব পরিস্থিতি মোদী নিজেও জানেন। তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ, অরবিন্দ পানাগড়িয়া (নীতি আয়োগের পূর্বতন ভাইস চেয়ারম্যান) পর্যন্ত বলছেন, আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট ইজ এ সিরিয়াস প্রবলেম৷ যার অর্থ;পূর্ণ সময়ের কাজ, উপযুক্ত মাইনে ভিত্তিক কাজ নেই৷ যা আছে সেটা ঠিকা কাজ৷ কর্মসংস্থান প্রতিশ্রুতি বা ভাঁওতাবাজিতে হয়না,দরকার অবাধ শিল্পায়ন৷ প্রবল গতিতে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে না উঠলে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লে সম্ভব নয়৷ সরকারের জনমুখী দৃষ্টি থাকলে সরকারি উদ্যোগে কিছু শ্রমনিবিড় শিল্প গড়ে উঠতে পারে৷ রেল–স্বাস্থ্য–শিক্ষা–ব্যাঙ্ক ইত্যাদি পরিষেবা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাড়িয়ে কিছু কর্মসংস্থা করা যেতে পারে৷ কিন্তু দেশের সরকার যদি ধনকুবের গোষ্ঠীর সেবাদাস হয়, বাজেটে আড়াইশো কোটি টাকার বেশি কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে করছাড়ের ঘোষণা করে তাহলে কি হয়?