এক নজরে

ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধ কি আদৌ সম্ভব

By admin

September 05, 2020

(তৃতীয় পর্ব)

২০১৮ সালে চিন থেকে মোবাইল ফোনের পার্টস আমদানি ৩৪.১% কমেছে। কিন্তু চিনের বিকল্প হিসাবে হংকং থেকে এই দ্রব্যের আমদানি ৭২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে | তাছাড়া মাইক্রোচিপস আমদানিতে হংকং এর সাথে ৬০০০% বৃদ্ধি পেয়েছে | বর্তমানে হংকং আমদানিতে ভারতের ৯ নম্বর স্থান গ্রহণ করেছে যার ফলে হংকং এর সাথে ভারতের মত $২০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যে ট্রেড ডেফিসিট $৫ বিলিয়ন | ১ জুলাই ১৯৯৭ সালে হংকং চীনের অধীনস্থ হয় | এই নতুন পরিস্থিতির কারণে জল্পনা শুরু হয়েছে, হংকং ও ভারতের বাণিজ্যে চিনের নিয়ন্ত্রণ আসা স্বাভাবিক | ভারতকে তার ছোট কুটির বা MSME গুলিকে মজবুত করতে হবে |চিনা উপকরনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানো কি ভালো উপায় ?

রয়টার্সের প্রতিবেদনে দুই সরকারী কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার দিয়ে বলা হয়েছে, প্রায় ৩০০ চিনা পণ্য ও অন্যান্য জায়গায় আমদানি শুল্ক আরোপের বিষয়ে জোর দিচ্ছে ভারত সরকার এবং আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে তুলছে।তারফলে প্রায় $ ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক ক্ষতি কম হবে | কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (CII) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত ৩১ টি উপকরণ চিনে আমদানি করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চাল ও গমের উৎপাদক দেশ ।

চিন হলো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল আমদানির দেশ , প্রতিবছর চিন ৩.৪ মিলিয়ন কাঁচা চিনি আমদানি করে। ভারতের চিনি শিল্প রপ্তানির জন্য চিনের সাথে আলোচনাতে সক্ষম হতে পারে | স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকা চিনের বাণিজ্যিক যুদ্ধে ভারতের লাভ হয়েছে | ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে পশুখাদ্য সামগ্রী , সব্জি, প্লাষ্টিক ও রাবার বাণিজ্যে যথাক্রমে ৩৩৫% , ১৩৪% .৯৩.৭% লাভ হয়েছে | কিন্তু বেশিরভাগ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি চিন থেকে ভারতে তাদের কারখানা স্থানান্তরিত করার বদলে ভিয়েতনামে চলে যাচ্ছে।

সীমান্ত বিরোধকে বাণিজ্য যুদ্ধে পরিণত করে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের সম্ভাবনা কম।ভারতীয় অর্থনীতি ইতিমধ্যে এর দুর্বলতম পর্যায়ে রয়েছে – জিডিপি তীব্র সংকোচনের মুখোমুখি হচ্ছে|দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য, ভারতের স্বনির্ভরতা, আমদানি-প্রতিস্থাপন ও ছোট শিল্পের উপর বেশি নজর দিতে হবে। নিজেস্ব কাঁচা মালকে ব্যবহার করতে হবে ভারতকে | ভারতকে প্রতিযোগিতা বাড়াতে আগ্রাসীভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের উচ্চতর অংশ অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়ানো যেতে পারে (উন্নত প্রযুক্তির আরও ভাল প্রয়োগ করতে হবে।) মেক ইন ইন্ডিয়ায় মাধ্যমে কোম্পানিগুলিকে ভারতে অ্যাসেম্বলকে একীভূত করে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪ কোটি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ কোটি ভাল-বেতনের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।

এইসময় কোনো আবেগপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তার পরিবর্তে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।চিনা পণ্য আমদানিতে আমাদের নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার পথে ভারতীয় নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের সত্যিকারের কঠোর পরিশ্রম করা উচিত এবং বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ করা বা শুল্ক বাড়ানোর মতো স্বল্পমেয়াদী সমাধানগুলি গ্রহণ করা উচিত নয়।

ইতিমধ্যেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য চিনের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের বেশ খানিকটা চাপ তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগে করোনার উৎস শনাক্ত করে ভারত সহ বিশ্বের যে ৬৭টি দেশ সই করেছে, সেখানে চিনের উহান প্রদেশকেই এর উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ভারত বা চিনের সীমান্ত বিরোধ নতুন কোনো বিষয় নয়। দুই দেশের প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার সীমান্তের ২৩ টি এলাকা ঘিরেই বিবাদ রয়েছে। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েও চিনের আপত্তি রয়েছে।