এক নজরে

শুধু জ্ঞানের নয়,অজ্ঞতার মূল্যও ব্রিটিশরা জানত

By admin

August 15, 2020

নীল সরকার

বিলাতের লর্ড চ্যান্সেলর জুনের সাতাশ,তারিখে প্রস্তাবটা দিলেন।মেধাবী ঘাগু আইনজীবি সিরিল জন রার্ডক্লিফ অবাক । প্রশ্ন করেছিলেন,‘আমাকে কেন সীমানা ঠিক করতে পাঠানো হচ্ছে?’ ছোট্ট উত্তর, তিনি আইনের জাহাজ হলেও ভারত সম্বন্ধে সম্পূর্ন অজ্ঞ!শুধু জ্ঞানের নয়,অজ্ঞতার মূল্যও ব্রিটিশরা জানত।তিনি সে দেশে জীবনে পা ফেলেননি, কাউকে চেনেনও না।ফলে প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা নেই।নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত থাকার কি যুক্তি।দেওয়া হয়েছিল সাধারন মানচিত্র ও ১৯৩১–৪১ সালের জনগননার পরিসংখ্যান।বেশ জটিল কাজ।তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে,সকলে দেশ প্রেমে হাবুডুবু।জাতির সেবায় ভারতমুখী বিমানে চাপলেন।প্রশ্নটা,আজও,ভাবায়।দেশ সম্বন্ধে অজ্ঞ লোক কি পৃথিবীর অন্য দেশে পাওয়া যেতনা? কেন একজন ইংরেজকে নেতারা মান্যতা দিলেন?তিনি ইংরেজদের স্বার্থ দেখবেন।শুধু জমি ভাগ নয়,সম্পত্তি,দলিল–কাগজ ভাগেও সেই সাহেব মাথায় বসলেন।

ভারতে এসে ৮ই জুলাই,১৯৪৭ দিল্লীর গরমে প্রান ওষ্ঠাগত।তিনি বড়লাটের মুখে শুনলেন,বিলাতের মুখবন্ধ এখানে অচল।১,৭৫,০০০ বর্গ মাইল সীমানা ভাগ করতে হবে।মূলত,দুটো প্রদেশে বাংলা ও পজ্ঞাব।কলকাতা ও দিল্লির দুটো সীমানা কমিটির তিনি মাথা। সাহায্যের জন্য দুজন মুসলিম প্রতিনিধি দুই কমিশনে বাঁধা ,বাকি দুজন অমুসলিম।শেষোক্তরা হিন্দু–শিখ হতে পারেন।বাকি কোনোও ধর্ম গুরুত্ব পেলনা।কেন?সংখ্যায় কম, রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই।ফলে চট্টগ্রামের বৌদ্ধরা পস্তাবেন সংখ্যাগুরু হয়েও।সীমান্ত গান্ধীর ভারতে থাকতে চাইলেও ছুঁড়ে ফেলবে নেকড়েদের মাঝে!এসব রাজনৈতিক ভুল।সিন্ধ,ব্রিটিশ বালুচিস্তান আজও আক্ষেপ করে।যে দেশের নেতাদের দেশ সম্বন্ধে ধারনা অম্পূর্ন,সেখানে রাডক্লিফ কে দোষ দিয়ে লাভ কি?

মাউন্টব্যাটেন স্পস্ট জানিয়ে দিলেন,‘আপনার কমিটির বাকি চারজন,যে যার কোলে ঝোল টানবে।যা সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে।’সীমানা কমিটির সময়ের সীমাবদ্ধতা,রাডক্লিফকে হতবাক করে!ইতিমধ্যে ৩রা জুন,খোদ বড়লাট স্বাধীনতার দিন ঘোষনা করেছেন,১৫ই আগস্ট।তার আগেই দিতে হবে সিদ্ধান্ত।তবে আর প্লেন নিয়ে কি করবেন? চোখে দেখার সুযোগ নেই।অবশ্য ছাত্র জীবন থেকে চোখে খাটো।রাডক্লিফের অদ্ভূত লেগেছিল,নেতারা শুধু এসে তাড়া দেন,কবে দেশটা ভাঙ্গবেন।মাউন্টব্যাটেনের তাড়াটা বুঝেন। মাতৃভূমি ভাগ হবে,এনাদের এতো তাগিদ কেন?মানবসম্পদ, মানসিকতা, শিল্প–সংস্কৃতি সব মুছে গেল,ধর্মীয় পরিচয়ের কাছে।সময়ের অভাবে কলকাতার শুনানিতেও যেতে পারেননি।সংগৃহীত তথ্য দেখে সিদ্ধান্ত হল মূলত,তিনটে বিষয়ে–১)মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকা একদিকে,২)এক সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়ের অধীনে না যায়,এবং ৩)সেই এলাকার মধ্যে সংযোগ।এছাড়াও ছিল অন্য বিষয়।তবে বিষদে জানাল না।রাডক্লিফ হাড়ে–হাড়ে টের পেলেন ধর্মস্থান, নদী,সেচের জল,রেললাইনের জটিল অবস্থান।কেউ দার্জিলিঙ চায় বেড়াতে যাবে বলে।কেউ বলেন,আমার গ্রাম ভারতে রাখতে কি দিতে হবে বলুন?মাত্র ৩২ দিনে ৯ ই আগস্ট সীমানা ভাগের কাজ শেষ হয়।১২ তারিখে বড়লাটের টেবিলে। সেই বিভাজন ১৭ তারিখে বেলা পাঁচটায় যখন নেতারা দু ঘন্টার জন্য হাতে পেলেন,ততক্ষনে তিনি ফিরে গিয়েছেন লন্ডনে।সকলে ভেবেছিল,তিনি অন্তর্যামীর মতন,তার গ্রামকে ভারত বা পাকিস্তানে রাখবে,তাঁরা অবাক হয়েছিলেন,১৮ তারিখে।দেশকে ভিন্ন দেশে দেখে।দেশ স্বাধীন হল,সীমানা ছাড়াই।