এক নজরে

সময়ে অসময়ে

By admin

January 17, 2023

পর্ব- ২

বিয়েবাড়িতে রাতভর ভিডিও এখন অনেকটা বাড়ির ছাদের অ্যান্টেনার মতো হয়ে গিয়েছে৷ হুশ৷ কিন্ত্ত গত সপ্তাহে আরামবাগের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বিয়েবাড়িতে নতুন করে ভিডিও দেখার সুযোগ মিলল৷

দেখানো হচ্ছিল তরুণ মজুমদারের বালিকা বধূ৷ সিনেমার (গ্রামের মানুষ এখনও ‘বই’ বলতে ভালবাসে) একটি দৃশ্যে একটি বিয়েবাড়ির কর্তা বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন পুরোহিতের অংবংচং মন্ত্রোচ্চারণে বিরক্ত হয়ে নিমন্ত্রিতদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখেন৷ ‘বলুন দেখি স্ত্রী মানে কী?’ উত্তরে কেউ বললেন ‘গিন্নি’, কেউ বা বললেন, ‘পরিবার’৷ সিনেমায় গৃহকর্তা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গমগমে গলায় বলে উঠলেন-স্ত্রী মানে হল গৃহিণী, সচিব, সখী, মিতা, প্রিয় শিষ্যা, ললিত কলা বিধৌ৷ ‘স্ত্রী’র এই সংজ্ঞাটি কিন্ত্ত চিত্রনাট্যকারের সৃষ্টি নয় শাস্ত্রেরও বচন নয়, এটি, কালিদাসের একটি পদ৷ আবার রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্গদাতে বলেছেন, যদি পার্শ্বে রাখ মোরে, সঙ্কটে বিপদে, সম্মতি দাও কঠিন ব্রতে, সহায় হতে পাবে তবে চিনিতে মোরে৷ আরও যদি এগিয়ে আসি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ‘লিখিত মৃত্যু’ কবিতায় বিয়ের সব মন্ত্রে যা বার বার বলা হয় তার বিপরীত কথা বলেছেন৷

কিন্ত্ত বাস্তব হচ্ছে আজকের নারী মোটেই আগের মতো পুরুষের উপর নির্ভরশীল নয়৷ হবেই  বা কেন? জাতি হিসাবে আমাদের সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য থাকা অবশ্যই প্রয়োজন৷ অস্বীকার করে সমাজে বাস করাটা সভ্যতার পরিচয় নয়৷ কিন্ত্ত এই সময়ের নিরিখে একটি প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও একটি পুরুষ যখন একটা নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে সেই সময় কতটা ধর্মের প্রতি, কতটা ঐতিহ্যের প্রতি, কতটা লৌকিকতার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ থাকবে আর কতটা সময়ের প্রতি বাস্তবতার প্রতি সত্‍ থাকবে সেটা বড় ভাবনার বিষয়৷ আমাদের প্রায় সব শাস্ত্রই রচিত হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে৷

বিয়ের নিয়মকানুনের মধ্যেও প্রছন্নভাবে লুকিয়ে আছে পুরুষকে প্রাধান্য দেওয়ার বাসনা৷ যেমন ধরুন বিয়ের আসরে প্রথম বর-বউয়ের সাক্ষাতের আচার৷ বর দাঁড়িয়ে থাকে, কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে বরের চারিদিকে সাতবার ঘোরানো হয়৷ পান পাতায় মুখ ঢাকা৷ বৈদিক মতে এটির আসল মানে বর হল ধ্রূবতারা আর ছোট্ট নক্ষত্র অরুন্ধতীর মতো সর্বদা বরকে ঘিরেই জীবনপারের অঙ্গীকার৷ আর পান পাতায় মুখ ঢাকা মানে বর তুমি যাই করো, আমি অন্ধের মতো ভালবেসে যাব৷ আর বিয়ের একেবারে শেষ আচার সম্প্রদান৷ ‘তুয়ভ্যমহং সম্প্রদদে’৷ বাংলা কথায়, ‘তোমায় আমি আমার সালংকারা কন্যাকে দিলাম৷’ আরও বলা হয়, দূর্ব, ফল, ফুল, বস্ত্র এবং তাম্বুল সহ এই কন্যাকে দান করা হল৷ এবার তাকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পোষণ করার দায়িত্ব স্বামীর৷ ইংরেজিতে তর্জমা করলে শুনতে লাগবে যেন একটা Transfer of Property র-চুক্তিপত্র৷ বিয়ের এই নিয়ম আরামবাগেও যেমন সত্যি কলকাতায়ও সত্যি৷ অনেকগুলোর মধ্যে একটা হিন্দি সিনেমাতে (ki and ka) দেখা গিয়েছে, চাকুরিরতা স্ত্রী হলেন নায়িকা এবং নায়ক একজন house husband৷ এর মধ্যে আগামিদিনের কোনও ইঙ্গিত লুকানো আছে  কিনা এখনই বলা সম্ভব নয়, কিন্ত্ত মহিলাদের সমতুল্য হয়ে ওঠা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেক পুরুষেরই৷