এক নজরে

যেসব গ্রামে লক্ষ্মীপুজো শারদোৎসবকেও ছাপিয়ে যায়

By admin

October 20, 2021

তপন মল্লিক চৌধুরী

মালদহের ইংরেজবাজার এলাকার কোঠাবাড়ি চুনিয়াপাড়ায় শতাধিক বছরের প্রাচীন লক্ষ্মীপুজোয় লক্ষ্মীর সঙ্গে পুজো হয় কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, অন্নপূর্ণা, ব্রহ্মা, নারায়ণ, শিব এবং রাম-লক্ষণের। কথিত, ক্ষিতিশচন্দ্র রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে চুনিয়াপাড়ায় পাঁচদিন ধরে চলে মেলা। বিসর্জনের দিন লক্ষ্মীকে নৌকায় করে পুরনো মালদহের সদরঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও মেলা বসে। ফের প্রতিমা কোঠাবাড়িতে ফিরিয়ে এনে বিসর্জন দেওয়া হয় মহানন্দা নদীতে।হুগলীর তারকেশ্বর এলাকার নাইটা মালপাহাড় পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেল বাঁধ রানা বাঁধ এলাকায় লক্ষ্মী পুজো ঘিরে উন্মাদনা দুর্গাপুজোকে ছাপিয়ে যায়। এই এলাকাযর মানুষ দুর্গাপুজোর থেকে সেই লক্ষ্মী পূজার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। এই এলাকায় প্রায় ১৬ টি ক্লাব নানা থিমে লক্ষ্মীপুজো করে। এখানকার লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে মোট সাতদিন ধরে মেলা চলে। হুগলি জেলা ছাড়াও মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং হাওড়া জেলা থেকে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে।  

উত্তর দিনাজপুরের গোরাহার ও বিশাহার গ্রামে বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মেলা বসে৷ এই দুই গ্রামের লক্ষ্মীপুজো ও সেই উপলক্ষে দু’দিনের মেলার যাবতীয় কাজে প্রধান ভূমিকা নেন গ্রামের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ৷ গোরাহার গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না, তাই এখানকার মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে লক্ষ্মীপুজোর জন্য৷ তবে এখানে লক্ষ্মীর আরাধনা ঘরে ঘরে নয়, হয় বারোয়ারি উদ্যোগে৷ইটাহার ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম গোরাহার ও বিশাহার গ্রামের কিনারে কুলিক, নাগর ও মহানন্দা নদীর ত্রিবেণী সঙ্গম৷ শহর থেকে দূরে থাকা এই গ্রামে হিন্দুরা সংখ্যালঘু৷ সংখ্যাগত দিক থেকে বিস্তর ফারাক থাকলেও যুগ যুগ ধরে মানুষে মানুষে মনের মিল এখানে অটুট৷ হয়ত ত্রিবেণী সঙ্গমে মিশে থাকা নদীর কাছ থেকেই এ গ্রামের মানুষ সম্প্রীতির শিক্ষা পেয়েছেন৷ এই গ্রামের প্রধান দুই উৎসব বলতে লক্ষ্মী পুজো আর ঈদ৷ গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে এই আনন্দ উত্সব উদ্যাপনের দায়িত্বভার সামলান৷ পুজোর ব্যবস্থা থেকে মেলা পরিচালনা- সব কিছুতেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে  অংশগ্রহণ করে থাকেন৷

আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের গুসকরা ২ অঞ্চলের শিবদা গ্রামের লক্ষ্মীপুজো ছাপিয়ে যায় শারদোৎসবের আয়োজঙ্কে। এই গ্রামে মোট ৬টি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো। সেই পুজো ঘিরে মেতে ওঠেন আপামর গ্রামবাসী। শিবদা গ্রামে দুর্গাপুজো, কালীপুজো সবই হয় কিন্তু লক্ষ্মীপুজো এই গ্রামের শ্রেষ্ঠ উৎসব। চার-পাঁচ দিন ধরে এই পুজো ঘিরে মেলা বসে। লক্ষ্মীপুজো ও তা ঘিরে মেলায় ভিড় জমান আশপাশের গ্রামের মানুষ। সবাই মিলে হইচই করেই কাটে পুজোর দিনগুলি।এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী। পাশাপাশি থাকে কয়েকটি তফসিলি জাতিভুক্ত জনমজুর পরিবারও। গ্রামের ঘোষপাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, বাগদিপাড়া, ডোমপাড়া মিলে মোট ৬টি সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো হয়। কোনও পুজোতে বসে কবিগানের আসর কোথাও হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

পুরুলিয়ার রাজনগরের লাউজোড় গ্রামের লক্ষ্মী পুজোয় দুর্গা পুজোর থেকে ধুমধাম অনেক বেশি। এই গ্রামে দুর্গা পুজো হয় তবে লক্ষ্মী পুজোর চার দিনের আনন্দ এখানে অনেক বেশি। জানা যায়, গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন ৬টি লক্ষ্মী পুজো আছে। তার সঙ্গে আছে একটি পারিবারিক পুজো ও একটি সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো। এখানে লক্ষ্মী পুজোর দিন থেকে চার দিন প্রতিমা থাকে। বিজয়ার দিন গ্রামের সামনের মাঠে বসে মেলা। গ্রামের সব প্রতিমাকে মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। মেলায় অংশগ্রহণ করেন আশপাশের ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। এমনকী লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মানুষজনও এখানে আসেন।লক্ষ্মী পুজো ঘিরে পাঁচ দিনের মেলা বসে ঝাড়গ্রামের বিনপুর এলাকার হাড়দা গ্রামে। এই গ্রামে কোজাগরী পূর্ণিমায় একই সঙ্গে পুজো হয় সম্পদ ও বিদ্যার দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতী। শুধু দুই বোন নন, পুজো পান নারায়ণ। তাদের পাশে থাকেন চার জন সখী। হাড়দা গ্রামের পাঁচ দিনের মেলার অন্যতম আকর্ষণ জিলিপি। এখানে নীলাম হয় জিলিপির দোকান, দামও আগে থেকে বেঁধে দেওয়া হয়। বহু দূর থেকে মেলায় আসেন মানুষ। জিলিপির আকারও হয় বিশাল। এখানেও দুর্গাপুজোয় তেমন মাতামাতি থাকে না। গ্রামের সবাই অপেক্ষা করে থাকেন লক্ষ্মীপুজোর জন্য।