আবহাওয়া

১৫ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

By admin

August 10, 2021

কলকাতা ব্যুরো: রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্লাইমেট চেঞ্চ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে। সোমবার যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে তাতে প্রায় ধ্বংসের মুখে চলে এসেছে মানব সভ্যতা। পৃথিবীর আয়ু যে ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে তার তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। গরম হয়ে উঠেছে পৃথিবী। গত কয়েকদিন তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৫ ডিগ্রি। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মানুষই। ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী। এই আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অন্তর্মহাদেশীয় প্যানেল (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টে।

আইপিসিসি-র গ্রুপ-১ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে ভারতীয় উপমহাদেশে খরা, তাপপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত এবং সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়বে। যা আগে ছিল স্তিমিত, ধীর গতির ৷ এখন সেই পরিবর্তন দ্রুত গতিতে ঘটছে। তাই, এখনই সংযত না হলে ধ্বংসের আর বেশি বাকি নেই।

তবে উষ্ণায়ন নিয়ে বড়সড় চিন্তা কলকাতার। তার কারণ শহর কলকাতার অপরিকল্পিত আর্বানাইজেশন। আর্বান হিট আইল্যান্ডের জাঁতাকলে পড়ে আশপাশের এলাকার তুলনায় দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ছে কলকাতার। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৮-এর মধ্যে কলকাতার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা অনান্য দেশের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের রিপোর্টে উঠে এসেছে উদ্বেগের এই তথ্যই।

আইপিসিসি রিপোর্ট বলেছে, শহরাঞ্চলে বায়ু চলাচলের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে নগরায়ন। সূর্যের তাপ ঢুকছে, কিন্তু সবটা বেরিয়ে যেতে পারছে না। মানুষের কাজকর্মের জন্যও বিপুল তাপ তৈরি হচ্ছে শহরের মধ্যে। চাষের জমি নেই, গাছপালা কম, জলাশয়ের অভাব, অথচ কংক্রিটের জঙ্গল আর বিভিন্ন বড় বড় বিল্ডিং পরিকাঠামো তাপ শুষে নিচ্ছে। ফলে গায়ে গায়ে বাড়ি, বহুতলের শহুরে নগরায়নের জন্য তাপমাত্রা বেশিই থাকছে। এর জন্য অফিস-কারখানা বা বাড়ির হিটিং, কুলিং সিস্টেম থেকে বেরোনো তাপও দায়ী।পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে জল-চক্রেও। কখনও অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি শহর ভাসিয়ে দিচ্ছে। কখনও বিপত্তি বাড়াচ্ছে ‘আর্বান ড্রাইনেস আইল্যান্ড’, যাতে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের চেয়ে শহরে আর্দ্রতা কম, কম বাতাসের গতিও। আইপিসিসি রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, আগামী দিনের নগরায়নের ফলে গড়় তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাপপ্রবাহ বাড়বে। তবে শুধু গরম নয়, দূষণ বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে আইপিসিসি। বিশেষ করে ওজোনের দূষণ নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে।আশঙ্কা থাকছে কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাইয়ের মতো উপকূলীয় ব্যস্ত শহরের বিপদ সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্যও। আইপিসিসি বলছে, উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতলের উচ্চতা আরও বাড়বে, বাড়বে তাপমাত্রাও। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা, ভরা কোটালের দাপট সবেতেই বৃদ্ধির ইঙ্গিত। প্রসঙ্গত, আয়লা থেকে ফনী, আমফান, ইয়াস একের পর এক ঘূর্ণিঝড় দাপিয়ে বেরিয়েছে বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। সেই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এতটাই ছিল যে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি একেবারে তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়গুলি। আগে কখনও এই ধরনের ঝড়ের তীব্রতা কেউ ভাবতেও পারেন নি। ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়গুলি। ভয়ঙ্কর ক্ষীপ্রতা। গাছ বাড়ি মানুষ উড়িয়ে নিয়ে ফেলছে। তারসঙ্গে আবার দেখা দিচ্ছে টর্নেডো।

পাশাপাশি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আন্টার্কটিকার বরফ গলতে শুরু করেছে। যার জেরে জলস্তর বাড়ছে। ২০২১ সালে অন্টার্কটিকার তাপমাত্রা রেকর্ড বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। যার জেরে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। যার কারণে সমুদ্রের জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। তার প্রভাব পড়বে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। উপকূলবর্তী শহর যেমন কলকাতা, মুম্বই ও ওড়িশার সংকট বাড়ছে। আন্টার্কটিকার বরফ গলতে গলতে শুরু করলে জলস্তর আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে কলকাতা এবং মুম্বইয়ের জলস্তর বাড়তে পারে। এরই মধ্যে কলকাতা, মুম্বই এবং দিল্লিতে অল্প বৃষ্টিতেই জল বাড়তে শুরু করেছে। জল নামতে দীর্ঘ সময় লাগছে। যার ফলে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। তাই নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।