এক নজরে

Srilanka Crisis : এরপর কী হবে শ্রীলঙ্কায়

By admin

July 14, 2022

শ্রীলঙ্কাবাসীর প্রায় কোনও ঘরেই নেই রান্নার জ্বালানি, বিদ্যুতের অভাবে (Srilanka Crisis) সে দেশের প্রতিটি অফিস-আদালতের দরজা বন্ধ, হাসপাতালে ওষুধ নেই, স্কুল–কলেজ বন্ধ, ডলারের অভাবে আমদানি করা যাচ্ছে না কোনও পণ্য। এক সর্বগ্রাসী অভাব (Srilanka Crisis) কুরে কুরে খাচ্ছে বলেই সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। যারা ক্ষমতায় ছিল তারা এই পাহাড় সমান অভাব তৈরি করেছিল বলেই তাদের ওপর মানুষের এই আক্রোশ। কিন্তু এখন প্রশ্ন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করলেই কি শ্রীলঙ্কার অভাব দূর হবে, এই বিরাট সংকটের সমাধান হবে?

এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কার দরকার বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য, ডলার, জ্বালানি এবং খাদ্য। উদার হাতে কে দেবে সেই বিপুল সহায়তা? কার ভান্ডারে আছে এত সাহায্য সামগ্রী যে সে পাশে এসে দাঁড়াবে? পাশাপাশি রয়েছে আর একটি প্রশ্ন, আগামী দিন রাজনৈতিক প্রশাসন কী আদল নেবে? এদিন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কাদের নিয়ে গঠিত হবে নতুন জাতীয় সরকার? কলম্বোতে ৯ জুলাই যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিল না কোনো বিরোধী দল। সাধারণ জনতার ডাকে হয়েছে। বিরোধী দলগুলি গতপাঁচ মাস ধরে শ্রীলঙ্কার রাজপথে মাঝেমধ্যে রাস্তায় নামলেও সর্বশেষ যে গণবিস্ফোরণ ঘটে তা নেতৃত্ব ছাড়াই হয়েছে। কিন্তু নেতৃত্ব ছাড়া তো সরকার গঠন সম্ভব নয়, নেতা তো একজন লাগবেই।

শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতা প্রধান হলেন প্রেসিডেন্ট। সেই পদে কে আসবেন এবং নতুন প্রেসিডেন্ট খাদের কিনারায় থাকা শ্রীলঙ্কাকে কীভাবে বাঁচাবেন, সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, যে উত্তরের অপেক্ষায় আছেন সবাই। পলাতক অবস্থা থেকে গোতাবায়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠালে সম্ভাব্য নেতা হিসেবে আসতে পারেন প্রধান বিরোধী দল ‘সঙ্গী জন বালাওয়েগা’র সজিথ প্রেমাদাসা, সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা এবং জেভিপির অনুঢ়া কুমার দেশনায়েকে প্রমুখ। এছাড়াও অন্য কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও লাগবে কাউকে। তবে সব ক্ষেত্রে জেভিপি ও সঙ্গী জন বালাওয়েগার সমর্থন লাগবে। কারণ, জনতার কাছে এখন এই দুই রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে। তবে নতুন সরকারের জন্য জরুরি ছাত্র-তরুণদের সম্মতি, যারা গত পাঁচ মাস রাজপথে পড়ে ছিল রাজাপক্ষেদের তাড়াতে। নতুন সরকারকে তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতেই হবে। না হলে তারা আবার রাস্তায় নামবে।তারাই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ চাইছে। তারা দেশটির চমক দেখানো উন্নয়ন-রাজনীতির বদল চাইছে। এতে শ্রীলঙ্কার সমাজে তামিলদের কথা বলার রাজনৈতিক পরিসর খানিকটা বাড়বে। সিংহলি সমাজেও গণতান্ত্রিক আবহ বাড়তি জোর পাবে।

এটা ঘটনা যে ৯ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর শ্রীলঙ্কা অবশ্যই আর আগের মতো থাকবে না। সিংহলি তরুণ সমাজ এটা বুঝেছে যে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের সময়ে তামিলদের প্রতি অবিচার হয়েছে। এবার নতুন সরকার সামরিক বাহিনী থেকে রাজাপক্ষেদের বশংবদ কর্মকর্তাদের সরাবে। তা না হলে এই অভ্যুথথান অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তামিলরা নতুন করে তাদের প্রতি অবিচারের দাবি তুলবে।প্রেসিডেন্টকে তাড়ানোর মধ্যে যেমন উল্লাস আছে তেমনই শ্রীলঙ্কার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য দুঃখজনক এক বাস্তব পরিস্থিতি রয়েছে। গোতা দেশ জুড়ে শুধু নেই আর নেই। গোটা দেশটির জন্য বিপুল সহায়তা দরকার। নতুন সরকারকে ভারত ও চীন সামান্য সহানুভূতি দেখাবে। একমাত্র ইউরোপ-আমেরিকার কাছেই এ রকম একটা সরকার হাত পাততে পারে। কারণ ওয়াশিংটনের সবুজ সংকেত পেলে আইএমএফ তার প্যাকেজ নিয়ে হাজির হতে পারে। তবে বিগত ছ’মাসের মধ্য এই প্রথম একটা দেশের সাধারণ মানুষ উল্লাস করেছে। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে নাগরিক জাগরণের এটা একতি ব্যতিক্রমী ঘটনা।

কিন্তু এখন প্রশ্ন এরপর কি? প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল হলেই কি শ্রীলঙ্কার সংকট দূর হবে? প্রতিবেশী চীনব্যবসা বোঝে, বিপদে সহানুভূতি দেখানো চীনের অভিধানে নেই। আমেরিকার মোড়লগিরির জায়গা নিতে চায় চীন। কিন্তু তার জন্য কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না চীন। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার নিকট প্রতিবেশি ভারতের সেই সক্ষমতা নেই, যা নিয়ে পাশে দাঁড়ালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হতে পারে!তার মানে ইউরোপ বা আমেরিকাই শ্রীলঙ্কার হাত পাতার উপযুক্ত জায়গাহতে পারে। আইএমএফের সাহায্য শ্রীলঙ্কা না হয় পেলো, কিন্তু নতুন নেতৃত্বের কী হবে? শ্রীলঙ্কাজুড়ে আলোচনার প্রধান বিষয় এখন সেটাই। দেশটিতে ক্ষমতার উৎস প্রেসিডেন্ট। সেই পদে কে আসবেন এবং নতুন সেই প্রেসিডেন্ট ধ্বংসের কিনার থেকে শ্রীলঙ্কাকে কীভাবে বাঁচাবেন? জনতার কাছে দুটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব রয়েছে। তবে নতুন সরকারের জন্য এর চেয়েও জরুরি হলো ছাত্র-তরুণদের সম্মতি, যারা গত পাঁচ মাস রাজপথে পড়ে ছিল রাজাপক্ষেদের তাড়াতে। নতুন সরকারকে তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতেই হবে। না হলে তারা আবার রাস্তায় নামবে। তারা চাইছে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ।

টানা কয়েক মাস বিদ্যুৎ–সংকটে রাজধানী কলম্বো-সহ দেশটির বেশির ভাগ এলাকা অন্ধকারে ডুবে ছিল। কাগজ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকার ছাপা। স্কুল–কলেজ বন্ধ করে দেয় সরকার। খাবারের দোকান, পেট্রলপাম্পের সামনে দেশটির সাধারণ মানুষের লাইন লম্বা থেকে আরও লম্বা হয়েছে। সরকারের নীতিগত অব্যবস্থাপনাকে জনগণ দায়ী করে। আর নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কার সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। হয়েছে আরও জটিল। এরই মধ্যে বড় মাহিন্দা রাজাপক্ষের মতো ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন।এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কায় এমন একজন রাষ্ট্রনায়কের প্রয়োজন, যিনি নির্বাচনের জন্য নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কাজ করবেন। দুর্ভাগ্যবশত, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এমন কোনো রাষ্ট্রনায়ক দেখেছে দেশটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডুডলি সেনা নায়েকের মতো নেতারা এ ধরনের মর্যাদা অর্জনের কাছাকাছি এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণ তাঁকে এবং তাঁর দলকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ, তিনি মূলত চালের রেশন দুই কিলোগ্রাম থেকে কমিয়ে এক কিলোগ্রাম করেছিলেন। বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে মানুষের কাছে গর্ব করেছিলেন, তিনি প্রয়োজনে চাঁদ থেকেও চাল আনবেন।