এক নজরে

#ProphetRow: অশান্তির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস রাজ্যের

By admin

June 14, 2022

কলকাতা ব্যুরো: বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে গত কয়েক দিন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। অন্যদিকে রাজ্যের একাধিক অশান্ত এলাকায় সেনা নামানোর আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। তবে অশান্তির ঘটনায় ঠিক কতজন গ্রেফতার হয়েছেন সেই সংখ্যাতেই এবার গড়মিলের অভিযোগ তুলছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে যখন কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেছেন ১০ জুন পর্যন্ত অশান্তির অভিযোগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঠিক তার দেড় ঘণ্টা পর রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম বলেছেন সব মিলিয়ে ২০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আর এই তথ্য সামনে আসতেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কার তথ্য ঠিক? সেই নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা।

রাজ্য জুড়ে অশান্তির ঘটনায় প্রয়োজনে সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। সোমবার রাজ্যের অশান্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন মামলায় এমনই নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের একাধিক অশান্ত এলাকায় সেনা নামানোর আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, রাজ্য যদি মনে করে পরিস্থিতি ‘হাতের বাইরে’ চলে যাচ্ছে, তা হলে তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। আগামী দু’দিনের মধ্যে পুরো ঘটনায় রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৫ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি। এদিন হাইকোর্টে এনআইএ তদন্তেরও আবেদন জানানো হয়। এরপরই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানান, অশান্তির ঘটনায় ২১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত কয়েক দিনের হিংসা এবং অশান্তি নিয়ে সোমবার কড়া বার্তা দিয়েছে রাজ্য পুলিসও। হাওড়া, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের একাধিক প্রান্তে যাঁরা হিংসা ছড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নিতে চলেছে প্রশাসন। প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে কারা জড়িত, কারা পিছন থেকে মদত দিয়েছেন, কারা ষড়যন্ত্র করেছেন, কারা রাস্তায় নেমে অশান্তি পাকিয়েছেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করছে রাজ্য পুলিস। সোমবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম।

ইতিমধ্যে অশান্তির ঘটনায় রাজ্যজুড়ে গ্রেপ্তার দু’শোর বেশি। যারা এই অশান্তির সঙ্গে জড়িত,তাদের কঠোর শাস্তি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জাভেদ শামিম। এদিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জানান, কাউকে রেয়াত করা হবে না। অশান্তির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর ধারায় অভিযোগ দায়ের হবে। তারা যাতে সর্বোচ্চ সাজা পায়, তাও নিশ্চিত করা হবে।

তবে এদিন জাভেদ শামিম জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বহু অপরাধীকে এরইমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিদেরও খুঁজে বের করে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। হিংসা, অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। সব মিলিয়ে প্রায় ৪২টি এফআইআর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিসের অতিরিক্ত ডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম।
জাভেদ শামিম স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যারা এই রাস্তা অবরোধ, আগুন জ্বালানো, ট্রেন আটকে দেওয়া, ভাঙচুর করার মতো কাজগুলি করে রাজ্যের শান্তিকে বিঘ্নিত করেছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তাঁর কথায়, এই ঘটনায় যুক্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না। এমন ভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে যাতে কঠিনতম শাস্তি তারা পায়। তিনি আরও বলেন, ছোট থেকে ক্ষুদ্র ঘটনাতেও পুলিশ খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিয়েছে। এখনও অনেক পকেটে তল্লাশি অভিযান চলছে। সিনিয়র অফিসাররা রাস্তাতেই থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তৎপর। এডিজি আইনশৃঙ্খলা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, যাতে নতুন করে কোনও ঘটনা না ঘটে সেই কারণে এখনও হাওড়া-সহ বহু জায়গায় এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ করছে পুলিশ। সোমবার থেকেই হাওড়ায় ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।
তবে জাভেদ জানিয়েছেন, এখনই সব জায়গা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে প্রশাসন সেই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের তরফে এও বলা হয়, হিংসা, অশান্তিতে পরোক্ষ ভাবে যুক্তদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুর্শিদাদের বিভিন্ন এলাকা সহ নাকাশিপাড়ার মট অঞ্চলে আপাতত ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে এবং ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।

তবে এদিন জাভেদ শামিমের সাংবাদিক বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে রাজয়ের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটা রাজনৈতিক বিবৃতি। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের থেকে যে বিবৃতি আসার কথা ছিল, সেটা আসেনি। জাভেদ শামিম জি তো! ওঁনার নাম জাভেদ শামিম তো। সমঝদারও কে লিয়ে ইশারা কাফি হ্যায়। বিজেপি বিধায়ক আরও বলেন, কী হচ্ছে বুঝে নিন, বাংলা আমাদের হাতে নেই। বেরিয়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, হজরত মহম্মদকে নিয়ে দিল্লির বিজেপি নেতা নেত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বাংলাতেও সেই বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে হাওড়ার বিভিন্ন অংশে রেল, রাস্তা অবরোধের পর রবিবার অশান্তি ছড়িয়েছিল নদিয়া, মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকায়। বেথুয়াডহরি স্টেশনে পৌঁছে রানাঘাট-লালগোলা মেমু ট্রেনে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। সোমবার সকালেও বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির খবর সামনে এসেছে।