অদ্ভুতুড়ে

আচমকা চিৎকারে জেগে ওঠে পুকুরের জল, কাদা

By admin

March 05, 2023

ভূতের বাড়ি নিয়ে আগ্রহ বলুন আগ্রহ, উৎসাহ বলুন উৎসাহ সব দেশে সব কালেই মানুষের বিপুল। নইলে উনিশ শতকের খোদ লন্ডন শহরে মাদাম তুসো যখন তাঁর মিউজিয়াম খুললেন সেখানে ভদ্রমহিলা চেম্বার অফ হরর নামে গোটা একটা চেম্বার রাখবেন কেন, যেখানে রাখা থাকবে ফরাসি বিপ্লবে গিলোটিনে যাদের প্রাণ গেছিল  নিহত সেই সব ফরাসি রাজা রানি রাজপুরুষদের মূর্তি? আর যাঁরা জানেন তাঁরাই বুঝবেন মাদাম তুসোর করা মূর্তি বলতে ঠিক কী জিনিস বোঝায়! পঞ্চদশ লুই, মারি আঁতোয়ানেত, মারা, রবসপিয়ের কে আছে আর কে নেই সেখানে! এবং আঁতকে ওঠার মতো পরিবেশ বলতে যে কী বোঝায়, কেমন করে তিলতিল করে তা বানিয়ে তুলতে হয় সেসব নিয়ে মাদাম তুসোর মতো মানুষকে কিছু বলতে যাওয়া, অবশ্যই দম লাগে তার জন্য। ‘ট্রিক অর ট্রিট: আ হিস্টি অফ হ্যালোইন’-এর লেখিকা লিজা মরটন জানিয়েছেন আমেরিকায় গ্রেট ডিপ্রেশনের সময়ে ছুটির সময় ছেলেপুলেদের উৎপাত থেকে বাড়িঘর বাঁচানোর জন্য ভূতের বাড়ি বানিয়ে তাদের আটকে রাখার জন্য প্রচেষ্টা শুরু হলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। পরে ১৯৬৯ সালের পর থেকে যত দিন যায় কমার্শিয়ালি এ ধরনের ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

মহিষাদলে একদা রাজত্ব করতেন রাজা ভীমনারায়ণ রায়চৌধুরী।তাঁর পরে রাজত্ব যায় উপাধ্যায়দের হাতে। তাঁদের পরে আসেন গর্গরা। এই গর্গদের আমলেই এখানে একটি মিউজিউয়াম তৈরি হয়েছে। মহিষাদল রাজবাড়ির আরেক নাম ফুলবাগ প্যালেস। বাংলার নবরত্ন স্টাইলে তৈরি এই প্রাসাদ প্রথম নির্মিত হয় শোনা যায় সিপাই বিদ্রোহের আমলে। এই প্রাসাদের নির্মাণ স্থাপত্যে বিদেশি ছায়া মেলে। আর মিউজিয়ামে মেলে  প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র, শিকার করা বুনো জন্তুর ট্রোফি,আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, ভিন্টেজ হয়ে যাওয়া রেকর্ড প্লেয়ার এইসব। কাছেই দেখতে পাওয়া যায় আগের রাজাদের আবাস স্থল রঙ্গিবসন প্রাসাদ। মহিষাদল রাজবাড়ির আরেক বৈশিষ্ট্য এখানকার রথযাত্রা।শোনা যায় এই রথযাত্রার শুরু ১৭৭৬ সালে, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী রানি জানকী দেবীর আমলে। বাংলার গানবাজনার সূত্রেও রাজবাড়ির ঐতিহ্য বিপুল।

সে যাই হোক, আমাদের প্রসঙ্গে আসি। সেকালে এরকম সব রাজ পরিবারে লোক লস্কর সেপাই সান্ত্রীর সংখ্যা হত বিপুল।নানা পেশার বিরাট সংখ্যক মানুষ এরকম একেকটি পরিবারের অন্নে পালিত হতেন। মহিষাদল রাজ পরিবারেও পালিত হতেন এরকম অনেক মানুষ। এর মধ্যে একজন ছিলেন জনৈক ধাই বা সেবিকা। মহিলার সুনাম হয়ত ছিল তবে দুর্নাম ছিল তার থেকে বেশি। লোকে বলাবলি করত মহিলা নাকি আসলে ডাইনি। সুস্থ, নধর শিশু চোখে পড়লে হল, তার আর রেহাই নেই। কথা হতে হতে এক সময় বিষয়টা চলে গেল হাতের বাইরে। মহিলাকে রাতারাতি মহিষাদল থেকে বেঁধে পাচার করে দেওয়া হল। হলদি নদীর ধারে এক জঙ্গলের মধ্যে আটক রাখা হল বেশ কয়েক দিন। তারপর আর কোনো খবর নেই। লোকে বলে মেরে নাকি তার দেহটা কাছেই একটি পুকুরে  পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আশেপাশের নধর শিশুরা নিরাপদ হয়েছিল কিনা বলতে পারব না, কিন্তু মহিলাকে আর কেউ দেখতে পায়নি কোনোদিন। 

তা সে নাহয় হল, কিন্তু ঘটনা এখানেই কি শেষ হল? হল না বলাই বাহুল্য। লোকে বলে এর পর থেকে প্রত্যেক ২৫ বছর বাদে বাদে ভূত চতুর্দশীর রাতে নাকি কাছেই ডাব পুকুরের আশাপাশে এলাকা বিকট অপার্থিব চিৎকারে কেঁপে ওঠে আচমকাই। আর এলাকা থেকে একজন লোক অদৃশ্য হয়ে যায়, যার দেহ ভেসে ওঠে দেওয়ালির দিন সকালে ওই পুকুরে। 

হলদিয়া টাউনশিপ হয়েছে এখন। চতুর্দিকে জমজমাট লোক-লস্কর। আধুনিক জনজীবন। কিন্তু ২৫ বছর বাদে বাদে আজও নাকি ভূত চতুর্দশীর রাতে ঠান্ডা হাওয়া দিলে জেগে ওঠে পুকুরের জল, কাদা। জীবন্ত হয়ে ওঠে। কে যেন ডাকে, বহুদূর থেকে…