Dr. Martin Luther King Jr. giving his I Have a Dream speech

এক নজরে

তিনি আমেরিকাকে বদলে দিয়েছিলেন

By admin

January 15, 2024

তখন আমেরিকার দক্ষিণের অধিকাংশ রাজ্যেই বাসের সামনের দিকে কালোদের বসার অধিকার ছিল না। সাহেবরা বাসে উঠলেই তাদের বসার জায়গা ছেড়ে দিতে হবে এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু একদিন সেই নিয়ম মানলেন না কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা রোজা পার্কস। তিনি প্রতিবাদ করলেন। সেটা ছিল সরকারি আইন লঙ্ঘন। যে কারণে রোজাকে থানায় নিয়ে গিয়ে ১০ ডলার জরিমানা করা হয়। এই ঘটনাকে ঘিরে ১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর মন্টগোমারিতে শুরু হয় বাস ধর্মঘট। সামিল হন মার্টিন লুথার কিং ও অন্য কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টান ধর্মযাজকেরা, তাঁরা বাস সার্ভিস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। টানা ৩৮১ দিন নানা প্রতিকূলতার পরেও কৃষ্ণাঙ্গদের সরকারি বাস বয়কট চলতে থাকলে সুপ্রিম কোর্ট বাসের এই বর্ণবিদ্বেষী ব্যবস্থাকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত আমেরিকার বাসে কালোদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মার্টিন লুথার কিং। আন্দোলনে জয়ের পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পরে গোটা আমেরিকায়। তাঁর এই অহিংস আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসেন বহু কৃষ্ণাঙ্গ নেতা। গোটা আমেরিকা জুড়েই বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জেগে উঠতে থাকে।

এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় লুথার কিং ১৯৬৩ সালে আমেরিকা সরকারের বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করেন। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির ক্ষেত্রে সমতা এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লুথার কিং, বেয়ারড রাস্তিন এবং আরও ছটি সংগঠনের সহায়তায় মার্চ অন ওয়াশিংটন ফর জব এন্ড ফ্রিডম (March On Washington for Job and Freedom.) নামে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন। এই সমাবেশটি ছিলো আমেরিকার ইতিহাসে সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মহা-সমাবেশ। এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য অসংখ্য মানুষ ২০০০ টি বাস, ২১ টি স্পেশাল ট্রেন, ১০ টি এয়ারলাইন্স এর সকল ফ্লাইট ও অসংখ্য গাড়িতে করে ওয়াশিংটনে এসেছিল। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লিঙ্কন মেমোরিয়ালে। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল ঐ মহা-সমাবেশে।“I Have a Dream”(‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’) নামে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া সেই বিখ্যাত ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সেরা বাগ্মিতার দৃষ্টান্তগুলোর অন্যতম হয়ে আছে। মার্টিন লুথার কিং তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দু’মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান। এর মূল লক্ষ্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গদের সমান অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে হবে, কালোদের সর্বত্র প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে।

এমন এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশেও পুলিশ সমবেত জনতার ওপর দমন পীড়ন চালায়। লুথার কিংসহ আরও অনেকেই সেই সময় গ্রেপ্তার হন। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগায়। ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ ভাষণে লুথার কিং বলেন, কীভাবে বর্ণবৈষম্য গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি তুলে ধরেন ভবিষ্যতের আমেরিকা নিয়ে তাঁর আশাবাদ। যেখানে সব আমেরিকান হবে সমান। এটাই হবে সত্যিকারের স্বপ্নের আমেরিকা। তাঁর এই বিখ্যাত ভাষণের প্রভাবেই ১৯৬৪ সালে আমেরিকায় নাগরিক অধিকার আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়।যদিও মার্টিন লুথার কিং কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষ সমর্থন করেন নি, তবে তিনি বিশ্বাস করতেন যে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের যত সমতাই দেওয়া হক না কেন, তারা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়েই থাকবে। তাই তিনি সরকারের কাছে পিটিশন দাখিল করেন যেন ৫০ বিলিয়ন অর্থ আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বন্টন করা হয় আর্থিক সমতা আনার জন্য। বলা হয়,  পৃথিবীর সব বিখ্যাত নেতাই নাকি জীবনে  অন্তত একবার জেলে গিয়েছেন।কিং এর ক্ষেত্রেও কথা টা সত্যি।তিনি জীবদ্দশায় ২৯ বার জেলে গিয়েছেন বলে জানা যায়।এর মধ্যে কয়েকবার গিয়েছেন বেসামরিক আইন অমান্য করার কারনে। কয়েকবার তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে মিথ্যা অভিযোগের কারণে। যেমন ১৯৫৬ সালে আলবামা  তে ২৫ কিলোমিটার/প্রতি ঘণ্টা গতিতে গাড়ি চালানোর রাস্তায় তিনি নাকি ৩০কিলোমিটার/প্রতি ঘণ্টা গতিতে গাড়ি চালিয়েছিলেন, এই মিথ্যা অভিযোগেও তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল।

মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।তিনি কোনও সঙ্গীত  শিল্পী না হয়েও বেস্ট স্পোকেন ওয়ার্ড এ্যালবাম ক্যাটাগরিতে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছিলেন । ১৯৭১ সালে তাঁকে এই মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল তাঁর “Why I Oppose the War in Vietnam“ এ্যালবাম এর জন্যে। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় লুথার কিং মেম্ফিসের একটি মোটেলের ব্যাল্কনিতে যখন দাঁড়িয়ে  ছিলেন, তখন তাঁকে গুলি করা হয়।