এক নজরে

Padma Awards 2020: পদ্মশ্রী পেলেন কমলালেবু বিক্রেতা

By admin

November 08, 2021

কলকাতা ব্যুরো: নিরক্ষর। জীবনের স্বপ্ন ছিল ভালো বিড়ি বাঁধবেন। কিন্তু ভাগ্য ঘুরিয়ে দিল কমলালেবু বিক্রি। পথে পথে ঘুরে ঘুরে কমলালেবু ফেরি করেই চলতো জীবন। এমনই এক ব্যক্তি কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত ১১৮ জন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপকের মধ্যে উঠে এলেন। ৬৮ বছর বয়স্ক ফল বিক্রেতা, কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা হারেকালা হাজাব্বা। প্রতিদিন তাঁর গড় আয় ১৫০ টাকা।

তবে কিছুদিন পর হাজাব্বা ঠিক করলেন তিনি স্কুল খুলবেন। স্থানীয় মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি ঘরে শুরু করে দিলেন স্কুল। শুরুতে ২৮ জন ছাত্র হলো। নিজে সারাদিন কমলালেবু ফেরি করে যা রোজগার করেন তার বেশীর ভাগ ব্যয় করেন স্কুলে। নিজের তিন সন্তান। স্ত্রী মাইমুনা নিজের সন্তানদের কথা ভেবে হাজাব্বার এই অর্থ ব্যয়ের বিরোধিতা করেন। অনেক কষ্টে স্ত্রীকে বুঝিয়ে নিজের উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত করে নেন হাজাব্বা।

কিছুদিন পর ৫০ শতক জায়গা কিনে বড় আকারে স্কুল গড়ার উদ্যোগ নেন হাজাব্বা। তবে তার জন্যে তাঁকে দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষেও করতে হয়। তবে শত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে হাজাব্বার স্কুল মাথা তুলে দাঁড়ায়। এই সময় মিডিয়া এবং প্রশাসনের নজর তাঁর উপর পড়ে। অনেকে যেচে অর্থ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। অনেক পুরস্কারও তিনি পান। যার বেশীরভাগ স্কুলের স্বার্থেই ব্যয় করেন। আর এই মহাণ কাজের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারের মনোনীত করেছে কেন্দ্র। সোমবার এই বিশিষ্ট মানুষটির হাতে পুরষ্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি।

সোমবার পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হলো মোট ১১৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে ২৯ জন মহিলা ৷ মরণোত্তর সম্মান জানানো হল ১৬ জনকে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রয়াত বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। প্রাপকদের তালিকায় নজর কেড়েছেন ভারতের প্রথম মহিলা এয়ার মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. পদ্মা বন্দ্যোপাধ্যায়। বায়ুসেনায় থাকাকালীন চিকিৎসা পরিষেবায় তাঁর অবদানের তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রীতে ভূষিত করা হয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার ইতিহাসে পদ্মা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম মহিলা আধিকারিক, যাঁকে এয়ার মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়। বায়ুসেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবেও পদ্মা তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।

এছাড়া মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় প্রয়াত বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন সুষমার মেয়ে বাঁশুরি স্বরাজ। মরণোত্তর পদ্ম বিভূষণে সম্মানিত হয়েছেন প্রয়াত অরুণ জেটলিও। তাঁর স্ত্রী রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এদিন পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।এবারের পদ্ম সম্মান প্রাপকদের তালিকায় ছিলেন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তথা অলিম্পিয়ান পি ভি সিন্ধুও। তাঁকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মভূষণে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি। ভারতীয় হকি দলের অধিনায়িকা রানি রামপাল এদিন পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পেয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, গায়ক আদনান শামি ও পরিচালক করণ জোহরও। পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন পরিচালক-প্রযোজক একতা কাপুরও। 

যদিও এদিন সেই সম্মান নিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না করণ জোহর ও একতা কাপুর। পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত ও আদনান শামি।    এছাড়াও হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী চান্নুলাল মিশ্রকে পদ্ম বিভূষণ সম্মান প্রদান করা হয়েছে। এ বছর যাঁরা পদ্মশ্রী পেয়েছেন তাঁরা হলেন, ১) এয়ার মার্শাল ড. পদ্মা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২) মহিলা জাতীয় হকি দলের অধিনায়ক রানি রামপাল, ৩) অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, ICMR-এর প্রাক্তন মুখ্য বিজ্ঞানী ড. রামন গঙ্গাখেদকর, ৫) সংগীতশিল্পী আদনান শামি, ৬) পরিচালক করণ জোহর, ৭) প্রযোজক একতা কাপুর, ৮) প্রয়াত সংগীত শিল্পী এস পি বালাসুব্রমনিয়ম।

এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্ম পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ অন্যরা ৷ ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্ম সম্মান। পদ্ম বিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী এই তিন বিভাগে দেওয়া হয়ে পুরস্কারগুলো। শিল্প, সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজকর্ম, জন-প্রশাসন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ও বাণিজ্য, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শিক্ষা, ক্রীড়া, সিভিল সার্ভিস ইত্যাদি বিভাগে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই সম্মান দেওয়া হয়। 

এ বছর ১১৯ জনকে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন, মোট ৭ জন পদ্ম বিভূষণ, ১০ জন পদ্মভূষণ, ১০২ জন পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপক। রয়েছেন ১৬ জন মরণোত্তর সম্মান প্রাপক। তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত ১ জনকে এই সম্মান দেওয়া হয় এদিন।