এক নজরে

IPL2022: রাজস্থানকে উড়িয়ে অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন গুজরাট

By admin

May 30, 2022

কলকাতা ব্যুরো: আইপিএলে প্রথমবার খেলতে নামা দল। তবুও গ্রুপ পর্বের প্রথম দল হিসেবে প্লে অফে পৌঁছনো। প্রথম দল হিসেবেই পাকা ফাইনালের টিকিট। সবদিক থেকে তাক লাগিয়ে বাকি ন’টি দলকে পিছনে ফেলে প্রথমবারেই প্রথম হওয়ার নজির গড়ল গুজরাট টাইটান্স। নিজেদের অভিষেক মরশুমের স্মৃতি নিঃসন্দেহে আগামী দিনে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবেন হার্দিক পাণ্ডিয়ারা। আর করোনা কালের পর দেশে ফেরা ১০ দলের এই হাইভোল্টেজ আইপিএলকে বহুকাল মনে রাখবেন দর্শকরাও।

সুপার সানডের মেগা ফাইনাল সঞ্জুদের কাছে ছিল ভীষণ আবেগের। ২০০৮ সাল, অর্থাৎ আইপিএলের উদ্বোধনী মরশুমে রাজস্থানকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন শেন ওয়ার্ন। আরও একবার ফাইনাল জিতে তা ওয়ার্নকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন জস বাটলাররা। গোটা টুর্নামেন্টে তাঁদের পারফরম্যান্স ছিল চ্যাম্পিয়নদের মতোই। কিন্তু তীরে এসে ডুবলো তরী। রবিবার টস জিতে যেখানে প্রায় প্রত্যেক সময় প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছেন অধিনায়করা। কিন্তু এদিন সঞ্জু করলেন ঠিক উল্টোটা। হয়তো চাপমুক্ত হয়ে ব্যাটিং করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গুজরাট পেসার ও স্পিনারদের দাপটে সে গুড়ে বালি।

দুই ওপেনার যশস্বী জেসওয়াল ও বাটলার শুরু মন্দ করেননি। তবে ব্যাটারদের ক্রিজে টিকতেই দিলেন না পাণ্ডিয়া, রশিদ খানরা। ১৭ রান দিয়ে একাই তিনটি উইকেট তুলে নেন হার্দিক। ২ ওভারে ২০ রান দিয়ে জোড়া উইকেট পান সাই কিশোর। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে রাজস্থানের মিডল অর্ডার। সঞ্জু ফেরেন ১৪ রান করে। ফাইনালের টার্গেট যখন ১৩১ রান হয়, তখনই যেন ম্যাচ হয়ে পড়ে একপেশে। বাটলার করেন ৩৯ রান। জেসওয়াল করেন মাত্র ২২। এরপর আর কেউই ২০-এর ঘরের কাছে রান করতে পারেন নি।

৩৫ বলে ৩৯ রান করে হার্দিকের ডেলিভারিতে ঋদ্ধিমানের হাতে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাটলার। তাঁর শতরান দেখার আশা এদিন আর পূর্ণ হল না দর্শকদের। এক মরশুমে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলিকে টপকে যাওয়ার স্বপ্নও অধরা থেকে গেল তাঁর। তবে বাটলারের ব্যাট কথা না বললেও নয়া রেকর্ডের মালিক হয়ে গেলেন তিনি। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলের প্লে-অফে ২০০ রানের গণ্ডি পেরলেন। এর আগে ১৯০ রান করে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। শুধু চলতি মরশুমেই বাটলারের ঝুলিতে এল ৮৬৩ রান।

তবে এসব সত্ত্বেও হয়তো লড়াইটা অন্তত হাড্ডাহাড্ডি হতেই পারত, যদি দু’বার শুভমানের ক্যাচ মিস না হতো। দু’বার লাইফলাইন পেয়ে একেবারে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় ওপেনার। ৩৪ করে আউট হওয়া হার্দিক তখন ডাগআউটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। এদিন অপরাজিত ৪৫ রান করেন গিল। মিলার করেন অপরাজিত ৩২ রান। ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় গুজরাট।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন তারকা কী পুরস্কার পেলেন

টুর্নামেন্টের রানার্স আপ হয়ে ট্রফির পাশাপাশি রাজস্থান রয়্যালস পেল ৫ কোটি টাকা। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে হার্দিকের গুজরাট পেল ২০ কোটি টাকা।

প্লে অফ জিতে ফাইনালের টিকিট পাকা হতেই ব্যাট হাতে আনন্দে গর্জে উঠেছিলেন মিলার। কিন্তু উলটো দিকে পাণ্ডিয়াকে দেখিয়েছিল বড়ই শান্ত, সংযত, পরিণত। প্রথমবার দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও ছবিটা বদলালো না। মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখালেন না হার্দিক। করলেন না উগ্র চিৎকার। আগুনে আস্ফালন আর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাবটা সীমাবদ্ধ রইল কেবল ২২ গজে ব্যাট আর বল হাতেই। গুজরাট চ্যাম্পিয়ন হতেই শান্তভাবে শুধু ডাগআউট থেকে বেরিয়ে মুঠো বন্ধ হাত দুটি আকাশের দিকে তুলে ধরলেন। নিঃশব্দে বুঝিয়ে দিলেন, “আমরা পেরেছি।”

শুভমান গিল, মিলাররা তখন আনন্দে আত্মহারা। সতীর্থরা ছুটে গিয়েছেন ঐতিহাসিক মুহূর্ত সেলিব্রেট করতে। কিন্তু এ কোন হার্দিক? তিনি একেবারে শান্তভাবে অভিনন্দন জানালেন প্রত্যেককে। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে যে মহেন্দ্র সিং ধোনিকেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও এতটা সংযত থাকতে দেখা গিয়েছে। রিয়ালিটি শো’য়ে ‘ম্যায় আজ কারকে আয়া’ বলে বিতর্ক তৈরি করা ছেলেটার এহেন পরিবর্তন সত্যিই বিস্মিত করে ক্রিকেটপ্রেমীদের। একই সঙ্গে গর্বিতও করে। 

ম্যাচ শেষে নাতাশাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল হার্দিকের। স্ত্রীর সঙ্গে তুললেন সেলফিও। ঠিক যেমন গত মরশুমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেখা গিয়েছিল ধোনি ও সাক্ষীকে। বেটারহাফ নাতাশাই যেন কোন জাদুকাঠি বুলিয়ে চঞ্চল হার্দিককে ধীর স্থির, পরিণত করে দিয়েছেন। তাই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আজ ধোনি না থাকলেও হার্দিক রূপেই নতুন ধোনিকে পেলেন দর্শকরা। 

প্রসঙ্গত, তিনটি মরশুম পর এবারই আইপিএল ফাইনালে ফিরেছে সমাপ্তি অনুষ্ঠান। দর্শক ভরতি জমকালো সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ মেতে ওঠে বলিউড সুপারস্টার রণবীর সিং, বিশ্বখ্যাত সংগীত পরিচালক এ আর রহমান-সহ একঝাঁক তারকার পারফরম্যান্সে। তবে তার আগে এক অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন দর্শকরা। রণবীরদের পারফরম্যান্সের আগে প্রাক্তন ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী মাইক হাতে ঘোষণা করেন, গিনেস বুকে নাম লেখাতে চলেছে এবারের আইপিএল।

আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট জার্সি তৈরি করে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে। ৬৬ মিটার লম্বা এবং ৪২ মিটার চওড়া জার্সিটিতে বিরাট করে আঁকা আইপিএল ১৫। সেই সঙ্গে রয়েছে ১০টি দলের লোগো। এই জার্সি তৈরি করেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়োজকরা। আর এমন অভিনব প্রয়াসেরই পুরস্কার মিলল। গিনেস বুকের প্রতিনিধির তরফে বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সচিব জয় শাহর হাতে তুলে দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। এদিকে, সমাপ্তি অনুষ্ঠানে শুধু আইপিএল নয়, গ্রাফিক্সের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের নানা স্মরণীয় মুহূর্তও।

তারই মধ্যে ঝাঁ চকমচকে মঞ্চে রণবীর, রহমানদের পারফরম্যান্স মন কাড়ল ক্রিকেটপ্রেমীদের। দর্শকাসনে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন সস্ত্রীক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সৌরভপত্নী থেকে বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার-সহ অনেকেই।