এক নজরে

অস্তিত্ব বিপন্ন কপিলমুনি আশ্রমের

By admin

August 23, 2020

নিতাই দে

এক টানা সমুদ্রের পাড় ভাঙ্গনের ফলে সাগরে কপিলমুনির আশ্রমের অস্তিত্ব কতদিন ফের সেই প্রশ্ন জাঁকিয়ে বসেছে। গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের এই উপকূলে আবহাওয়ার পরিবর্তনে জেরে ভাঙ্গন প্রবল আকার ধারণ করেছে। আর আয়লা পরবর্তী বুলবুল, ফোনি ও আম্পানের পর এই এলাকার ভাঙ্গন গতি পেয়েছে। গত মাস ছয়েকে সাগরে ভাঙ্গনে দ্রুত দূরত্ব কমছে সমুদ্র ও কপিলমুনি আশ্রমের। এই অবস্থায় এই মন্দিরের অস্তিত্ব আর কতদিন তা নিয়ে প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছে।

এর আগেও সমুদ্রের ভাঙ্গনে তলিয়ে গিয়েছে কপিলমুনির আশ্রম। স্থানীয়দের কারো মতে ১৪৩৭ সালে স্বামী রামানন্দ প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রম এর আগে অন্তত ছ’বার তলিয়ে গিয়েছে সমুদ্রগর্ভে। সবার কেউ বলেন, বর্তমান মন্দিরটি চতুর্থ। তৃতীয়টি ভাঙ্গনে তলিয়ে যাওয়ার পর ১৯৭৩ সালে এই মন্দির তৈরি হয়। গত বছর পাঁচেক আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার হয় এই মন্দির।

কুম্ভমেলার পর আলোচনায় থাকে সাগরের মকর সংক্রান্তির লোক সমাগম। গড়ে আট-দশ লক্ষ লোক প্রতিবার সাগর স্নানে আসেন বলে সরকারি হিসেব। কিন্তু যে ভাবে সমুদ্র এগিয়ে আসছে আর পিছচ্ছে মন্দির ও মেলার জায়গা-তাতে এরপর আর সরকারি এত বড় জায়গা মিলবে কি না তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মন্দির থেকে বড় জোর দু’শ মিটারেরও কম দূরে এখন সমুদ্র। এই অবস্থায় সাগরের এই আগ্রাসন এখনই না আটকালে এই দূরত্ব ঘুচতে সময় লাগবে না। রাজ্য সরকার উদ্বিগ্ন এই ভাঙ্গনে। কিন্তু কতটা বাস্তবে ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য আন্তরিক? বুঝে নেওয়া যাক।

সাগরের বিধায়ক তথা সাগরদ্বীপ-বকখালী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বঙ্কিম হাজরাকে শনিবার এই ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকারি পরিকল্পনার কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘যে ভাবে ভাঙ্গন হচ্ছে তাতে আমরাও চিন্তিত। তবে আমরা বসে নেই। কপিলমুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে যে পাঁচটি রাস্তা রয়েছে সমুদ্রমুখী-ওই অংশে সমুদ্রে বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে মাদ্রাজ আইআইটি। ম্যাকিনটস বার্ন এই কাজ করবে। এই কাজের জন্য ৭৭ কোটি টাকা খরচ হবে। জুলাই মাসে দিল্লি থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল আসার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড আবহে তাঁরা আস্তে পারেননি। আসা করা যায় বর্ষা শেষ হলে নভেম্বরে কাজ শুরু করা যাবে।’

আবার এই বঙ্কিমবাবুই ২০১৯ সালের আগস্টে বঙ্গোপসাগরের এই রিজিয়নে আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে এক কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন। সেখানেও তিনি কপিলমুনি আশ্রমকে কেন্দ্র করে বাঁধ দেওয়ার প্রকল্প, মাদ্রাজ আইআইটি-পরিকল্পনা, ৭৭ কোটি খরচ, ম্যাকিনটস বার্ন কাজ শুরু করছে বলে জানিয়ে ছিলেন। আর সেই বক্তব্যের ঠিক এক বছর পরেও তিনি একই কথা বলে গেলেন। মাঝে যুক্ত হলো করোনা আবহে দেরির সাফাই। যে মহামারী এ দেশে শুরুই হলো এ বছর ফেব্রুয়ারিতে।

ফলে এই করোনা দেখিয়ে আর কত বছর কাজ ঝুলবে সে হিসেবে একটা করে নিতেই পারেন পাঠকরা।