এক নজরে

Ganga Sagar Mela: সাগর মেলা বন্ধ করুক হাইকোর্ট; গুচ্ছ মামলার শুনানি, রায়দান স্থগিত

By admin

January 10, 2022

কলকাতা ব্যুরো: গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে সোমবার আবার নতুন করে হাফ ডজন মামলার শুনানি হলো হাইকোর্টে। সেখানে হাইকোর্টের আগের নির্দেশ না মানায় রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠলো। হাইকোর্ট গঠিত কমিটিতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রাখায় আপত্তি জানিয়ে আবেদন করলো রাজ্য সরকার। একাধিক মামলাকারী তিনজনের ওই কমিটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যুক্ত করার প্রস্তাব দিলেন।

অন্যদিকে হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া একটি শর্তও চলতে থাকা সাগর মেলায় মানা হচ্ছে না বলে ছবি দিয়ে দেখানো হলো হাইকোর্টকে। আবার ডক্টরস ফোরাম আবেদন করল, গত কয়েক দিনে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি আরো সংকটের দিকে এগিয়েছে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করে এখনই সাগর মেলা বন্ধের নির্দেশ দিক। দীর্ঘ প্রায় সোয়া একঘণ্টা এদিন শুনানি চলে। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রী বাস্তব ও বিচারপতি ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের এডভোকেট জেনারেলকে বলে, প্রথম মামলাতেই সাগর মেলা বন্ধের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার করোনা বিধি মেনে মেলা চালানোর পক্ষে গাইডলাইন দিয়েছিল। যা দেখেই ওই নির্দেশ মানা হবে বলে মেনে নিয়েই হাইকোর্ট মেলা চালানোর অনুমতি দেয়। কিন্তু এখন যা দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সে সব শর্ত মানেনি।

এরপরেই হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, শুনানি শেষ। রায়দান স্থগিত রাখা হল। রায় হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে সময়মতো আপলোড করা হবে। ফলে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে সাগর মেলা নিয়ে চলা আইনি লড়াই জারি থাকলো এদিনও। সঙ্গে চালু থাকলো সাগর মেলাও। ফলে হাইকোর্ট এবার কি পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া, আর ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রামিত সংখ্যা নজর রাখা ছাড়া আপাতত আর কোন কিছু করার নেই মামলাকারীদের।

গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সাগর মেলা চালানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল।

প্রথমত রাজ্য সরকার ৪ জানুয়ারি যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এখন ৫০ জনের বেশি রাখা যাবে না বলে নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে বলে হাইকোর্ট।

দ্বিতীয়ত সাগরদ্বীপকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে ঘোষণা করার নির্দেশ ছিল। বাস্তবে রাজ্য শুধু মেলা মাঠকে নিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

তৃতীয়ত গতবছর সাগর মেলা নিয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাও কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল।

চতুর্থত এবছর সাগর মেলায় যাওয়া বিপদজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ, এই মর্মে রাজ্য সরকারকে সমস্ত সংবাদমাধ্যমে ৮ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাপক প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই সমস্ত নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে রেখে তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দেয় হাইকোর্ট। 

এদিন নতুন করে প্রায় হাফ ডজন আবেদনকারী মামলার আবেদন করেন। তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য ছিল, এই কমিটিতে চিকিৎসকদের রাখা হোক। রাজ্য সরকার যে মামলা দায়ের করে সেখানে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এই কমিটিতে রাখায় আপত্তি জানানো হয়। একইসঙ্গে যেহেতু রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ আটকে রয়েছে রাজ্যপালের হাতে, তাই এই কমিটি বাস্তবে কাজ করার অবস্থায় নেই বলে জানান প্রথম মামলাকারী ডাক্তার অভিনন্দন মন্ডলের পক্ষে আইনজীবী। তথ্য দিয়ে দেখান, হাইকোর্ট গোটা সাগরদ্বীপ নোটিফাইড এলাকা বলে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিলেও রাজ্য সরকার শুধুমাত্র সাগর কপিলমুনির আশ্রম লাগোয়া মেলা মাঠকে চিহ্নিত করেছে। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনোও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পাশাপাশি মামলাকারী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর এবং ছবি দিয়ে দেখান, কোনমতেই হাইকোর্টের নির্দেশ মত ৫৯ জন নয়, অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এখনো সাগর দ্বীপের মেলা মাঠে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া নির্দেশ পালন হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন নেই। যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে তারাই যথেষ্ট। প্রয়োজনে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন না থাকায়, হাইকোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কোনো প্রতিনিধিকে সেখানে যুক্ত করতে পারে। ডক্টর ফোরাম এর আগেও এই মামলায় যুক্ত ছিল। তাদের আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁরা আগের নির্দেশ সংশোধন বা পরিমার্জন এর মত কোন বিষয়ে ঢুকছে। তাদের বক্তব্য, গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণ আরো খারাপ জায়গায় গিয়েছে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করুক সাগর মেলা বন্ধ করতে। না হলে যে সংক্রমণ বাড়বে, তার দায় নিতে হবে সকলকেই। যদিও আদালত শুনানি শেষ করলেও রায় নিয়ে একটি মন্তব্য করেনি এজলাসে।