এক নজরে

আরজি কর থেকে কসবা ল’কলেজ

By admin

July 02, 2025

আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। কেবল দেশ বলা একটু ভুল হবে কারণ দুনিয়ার অনেক দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়েছিলেন। এই তিলোত্তমা শহর প্রতিবাদ বিক্ষোভে রাত দখলের সাক্ষী হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল সেই বিক্ষোভ প্রতিবাদের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের গণধর্ষণের সাক্ষী হল কলকাতা। আসলে আর জি কর কান্ডে সাধারণ জনগণের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের তরফে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলির কোনোটাই যে পূরণ হয়নি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হল দক্ষিন কলকাতার কসবা ল’কলেজের গণধর্ষণের ঘটনা। প্রসঙ্গত, ল’কলেজের ঘটনায় আদালতে যে আবেদন জমা পড়েছে, তারপরে প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাসের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালতে আরেকটি আবেদন জমা করেছেন আইনজীবী সত্যম সিংহ। এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কসবার এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক তবে সেটি হওয়া উচিত শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে ও নজরদারিতে। উল্লেখ্য, নির্যাতিতা ও তার পরিবারকে যথাযথ নিরাপত্তা ও আর্থিক সহায়তার আবেদনও করা হয় শীর্ষ আদালতে। এরপর দেশের শীর্ষ আদালতের তরফেও মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয় এই ঘটনায়।

এই ধরনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে হয় যে এই সিবিআই নিয়ে এই বঙ্গের মানুষের ধারনা কিন্তু একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ এই রাজ্যে বিভিন্ন সময় একাধিকবার কোটি কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির খবর সামনে এসেছে। সেইসব ঘটনায় আদালতের তরফ থেকে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের সেই নির্দেশে রাজ্যের সাধারণ মানুষ আশ্বস্তও হয়েছিল । কিন্তু তারপর সেইসব দুর্নীতির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের প্রক্রিয়া যেভাবে এগিয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মনে কেবল প্রশ্নই তৈরি হয়নি সিবিআই সম্পর্কে একটি হাস্যকর ধারনা তৈরি হয়েছে। যদিও গত বছর আরজিকর মেডিকেল কলেজের খুন ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর ভরসা করেছিল। কারণ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করলে আসল ঘটনা সামনে আসবে, দোষীরা শাস্তি পাবে। কিন্তু ফলাফল যতখানি শূন্য ততটাই হতাশাব্যঞ্জক। তাই এখন অনেকেরই দাবি কসবা গণধর্ষণ ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্ত হলেও সিবিআই তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা সামনে আসবে দোষীর শাস্তি পাবে এমন বিশ্বাস আর এই রাজ্যবাসীর মধ্যে নেই। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস রাজ্য পুলিশ ও সিবিআই একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

তাই রাজ্য পুলিশ এই পুরো ঘটনার তদন্ত করুক, সেটা ঠিক মেনে নিতে পারছে না অনেকেই। কারণ মনে করা হচ্ছে, হয় পুলিশ আদালতের তত্ত্বাবধানে তাদের নজরদারিতে বা আলাদা কোনো ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি তৈরি করা হোক তাদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করুক রাজ্য পুলিশ। কারণ সিবিআই তদন্ত হোক বা পুলিশ তদন্ত করুক এই বিষয়টাতে আর ভরসা নেই সাধারণ জনগণের। ইতিমধ্যে ঘটনার পর থেকে রাজ্য পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে, প্রথমত সার্ভিস ডক্টর ফোরামের তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ মেডিকেল পরীক্ষায় স্বাস্থ্য দপ্তরে তরফ থেকে গাফিলতি করা হয়েছে। কারণ নির্যাতিতার মেডিকেল পরীক্ষার সময় সেখানে একজন জুনিয়র ডাক্তারের উপস্থিতিতে অন্য আরেকজন জুনিয়র ডক্টর  মেডিকেল পরীক্ষাটি করেছিলেন। এই ধরনের গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম নয়, সেখানে একজন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন হচ্ছে, নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী যে অভিযুক্তদের নাম উঠে এসেছে সেই অভিযুক্তদের নামের জায়গায় কয়েকটি অক্ষর ব্যবহার করা হচ্ছে এত বড় ঘটনাটি যারা ঘটালো শুরুতে তাদের নাম কেন প্রকাশ্যে আনলো না পুলিশ? কারণ আলিপুর আদালতে প্রকাশ্য অভিযুক্তদের সম্পূর্ণ নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর অন্যদিকে পুলিশের এফআইআর কপিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্যাতিতার নাম ও পরিচয় এর ক্ষেত্রে সাংকেতিক অক্ষর ব্যবহারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের নামও অক্ষরের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে কিন্তু কেন? অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা কেন করা হচ্ছে পুলিশের তরফ থেকে। এই বিভিন্ন ঘটনাযই যেন রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড়ো প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিচ্ছে। ফলে সিবিআই তদন্ত ও পুলিশের তৎপরতাতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কসবার ল কলেজের গণধর্ষনের তদন্ত, আর জি কর কাণ্ডের তদন্তের মতোই সাধারণ জনগণকে আশাহত করে কিনা এখন সেটাই দেখার।