এক নজরে

মসজিদ থেকে গির্জা ফের মসজিদ তারপর নাইট ক্লাব

By admin

February 01, 2022

ইতিহাস বলে দুনিয়ার বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিকপ্রাচীন মসজিদ নানা সময়ে গির্জায় রূপান্তরিত হয়েছে। অন্য ধর্মের মানুষ মুসলমান ধর্মের মানুষের ওপর শত্রুতা বশত মসজিদ আক্রমণ করেছে, লুঠপাট চালিয়ে স্থাপত্য ধ্বংস করেছে, এরপর মসজিদের জায়গায় গড়ে উঠেছে গির্জা।

বাদশাহ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আল আহমার খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের দক্ষিণাঞ্চলে কসরুল হামরা নামে যে মসজিদটি নির্মাণ করেন, সেটি ছিল ওই সময়কার বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক ধর্মীয় স্থাপত্য। দ্বাদশ শতকে আন্দালুসিয়ার পতনের সময় অন্য ধর্মের মানুষরা মসজিদটিতে ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। পরবর্তীতে কসরুল হামরা মসজিদটি ‘সেন্ট মেরি’ গির্জায় রূপান্তরিত হয়।কর্ডোভায় আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আল আহমার নির্মিত কর্ডোভা গ্র‍্যান্ড মসজিদটিও আন্দালুসিয়ার পতনের পরে ‘ভার্জিন মেরি’ গির্জায় পরিণত হয়।

উল্লেখ্য,স্পেনের টলেডোতে মসজিদ বাবুল মারদুম যেটি পরবর্তীতে‘লাইট অব ক্রাইস্ট’ গির্জানামেপরিচিতহয়। অনেক মসজিদ আবার গির্জায় রূপান্তর হওয়ার পর ফের মসজিদে পরিণত হয়েছে। মিসরের মসজিদ আমর ইবনুল আস পরবর্তীতে মুসলমানদের থেকে দখল করে গির্জায় রূপান্তর করা হয়। তবে ১২২১ সালে ক্রুশেডাররা যখন মিসর ত্যাগ করে তখন আবার এটিকে মসজিদের রূপে ফিরিয়ে আনা হয়।আলজেরিয়ার কিশতাওয়াহ মসজিদ ফরাসিরা আলজেরিয়ায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পরে গির্জায় পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা ফিরে পেলে আলজেরিয়ার মুসলমানরা আবার এটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন।

এই তো কিছুদিন আগে মসজিদ হয়ে গেল নাইটক্লাব।ইসরায়েলের সাফেদ পুর এলাকার ঐতিহাসিক আল-আহমার মসজিদটি এখন পানশালা। যেখানে নানা ধরণের পার্টি হয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, খাওয়া দাওয়া নাচ গান-সহ চলে মদ্য পান। 

স্থাপত্য হিসাবেও মসজিদটি ঐতিহাসিক।মামলুক সাম্রাজ্যের সুলতান আল দাহের বাইবারসের শাসন আমলে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মসজিদটির নামফলকও বলে মসজিদটি ১২৭৬ খ্রাষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল।

উত্তর ইসরাইলের সাফাদ এক সময় ফিলিস্তিন আরব অধ্যুষিত শহর ছিল। সেই সময় সেখানে ১২ হাজার ফিলিস্তিনি মুসলিম বসবাস করত, ১৯৪৮-এ তাদের শহর ছেড়ে চলে যেতেবাধ্য করা হয়েছিল। সেখানেইছিল দ্বাদশ শতকের আল আহমার মসজিদ।

তবে ঘটনাটি প্রথম বা একমাত্র নয়। ১৯৪৮ সালের পর ইসরায়েল মসজিদ ছাড়াও, কবরস্থান এবং নানান ধর্মীয় স্থাপত্য ধংস করেছে। জাফা, লড, আল-রামলা, আশকেলন ও অন্যান্য শহরে বহু ধর্মীয় স্থাপত্য বার কিংবা নাইট ক্লাবে পরিণত হয়েছে।বেশ কয়েকবার হামালার শিকার হয়েছিলঠেকেআল-আহমা মসজিদ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি বাহিনী সাফেদ এলাকার দখল নিলে মসজিদটি হাতছাড়া হয়। সাফেদে একসময় ১২ হাজার মুসলিম বসবাস করতেন। সেসময় তাদেরকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

নানা সময়ে মসজিদটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হত। নামাজ পড়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। মসজিদটিকে ইহুদি যাজকদের একটি প্রশিক্ষণ কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হত। ২০০৬ সালে মসজিদটিকে ইসরায়েলের কাদিমা পার্টির নির্বাচনী কার্যালয় বানানো হয়। কিছুদিন এটি ছিল কাপড়ের গুদাম এবং শেষমেশ এটিকে বানানো হয় একটি নাইট ক্লাব।

অন্যদিকে আয়া সোফিয়া ছিল অর্থোডক্স গির্জা, ১৪৫৩ থেকে মসজিদ, ১৯৩৪-এ হল জাদুঘর, আবার ২০২০-র জুলাইয়ে মসজিদে পরিণত হয়েছে। লাল পাথরের তৈরি সাফাদের আল আহমার মসজিদটি প্রথমে হয় ইহুদি ধর্ম কেন্দ্র, তারপর ইসরায়েলি খাজিমা দলের নির্বাচনী অফিস, তারপর বস্ত্র বিপণন কেন্দ্র, ২০১৯ থেকে বার কাম নাচঘর, নাইটক্লাব।