কলকাতা ব্যুরো: দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সব শান্ত। সোমবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটের মাথায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগের পতন ঘটল আজ। ২৭ জুন থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল৷ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি৷ তবে ফের রবিবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়। দেওয়া হয় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৩। যার কারণে এদিন এসএসকেএম হাসপাতালের সিসিইউ থেকে তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগেছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক। ৯১ বছর বয়সে এসে সেই সমস্যাই আরও জটিল আকার নিয়েছিল। সঙ্গে যোগ হয়েছে ডায়াবেটিস, ফুসফুসের সমস্যা। ২১ জুন শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এসএসকেএমে ভর্তি হতে হয় বর্ষীয়ান এই পরিচালককে। তাঁর জন্য নিয়োজিত মেডিক্যাল বোর্ডে ছিলেন ডাঃ সরোজ মণ্ডল, ডাঃ সোমনাথ কুণ্ডু, ডাঃ সৌমিত্র ঘোষ, ডাঃ বিমান রায়, ডাঃ অর্পিতা রায়চৌধুরী। নেফ্রোলজিস্ট অর্পিতা রায়চৌধুরীর অধীনেই ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
দর্শককে একাধিক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন কিংবদন্তি এই পরিচালক। পলাতক, নিমন্ত্রণ, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, বালিকা বধূ, কুহেলী, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালোবাসা ভালোবাসা, পরশমণি, আলো এবং সাম্প্রতিককালে ভালোবাসার বাড়ি-র মতো ছবির পরিচালনা করেন তিনি। ‘ভালোবাসার বাড়ি’তে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন বাংলা টেলিভিশনের আজকের জনপ্রিয় অভিনেতা প্রতীক সেন।
১৯৩১ সালে পূর্ববঙ্গের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ৷ পড়াশোনা শেষ করে সিনেমার বিজ্ঞাপনের কাজ করলেও নজর ছিল পরিচালনায় ৷ ততদিনে বাঙালি দেখে ফেলেছে পথের পাঁচালী ৷ দর্শকদের মজিয়ে রেখেছেন উত্তর-সুচিত্রা ৷ এরই মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ালেন নতুন পরিচালক ৷ ১৯৫৯ সালে তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় প্রথম মুক্তি পেল উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘চাওয়া পাওয়া’ ৷ তবে তাঁকে প্রথম জাতীয় পুরস্কার এনে দেয় ‘কাঁচের স্বর্গ’ ১৯৬২ সালে ৷
পদ্মশ্রীর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তরুণ মজুমদার। চারটি জাতীয় পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে। এ ছাড়াও রয়েছে ৭টি বিএফজেএ পুরস্কার, ৫টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ৷ তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বাম যুবনেতা শতরূপ ঘোষ। কিংবদন্তির প্রয়াণে শোকাহত টলিউড ৷ শোকবার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে মৃত্যুর আগে দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তরুণ মজুমদার। দেহদানের পাশাপাশি চক্ষুদানেরও অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। সেই মতো প্রয়াত পরিচালকের দেহ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগ। পাশাপাশি তাঁর কর্নিয়া সংগ্রহেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতাল।
এদিন রাজ্য সরকারের তরফে গ্যান স্যালুটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিচালকের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, মৃত পরিচালকের এসবে মত ছিল না। সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানাতেই হবে না গান স্যালুট। পাশাপাশি পরিচালক চাইতেন না তাঁর মৃত্যুর পর দেহে ফুল, মালা দেওয়া হোক। তাঁর সেই ইচ্ছাকেই সম্মান জানিয়ে দেহে দেওয়া হবে না ফুল, মালা।এসএসকেএম থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওয়ান স্টুডিওতে। সেখান থেকে তরুণ মজুমদারের দেহ নিয়ে আসা হবে এসএসকেএম হাসপাতালে। তারপরই প্রয়াত পরিচালকের দেহ দান করা হবে।
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানান, প্রয়াত চিত্রপরিচালকের পরিবার যেমনটা চাইবেন সেই মতোই ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালে এসেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। তিনিও একই কথা জানান।
সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, প্রয়াত চিত্রপরিচালককে যারা শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁরা যেন ফুল বা মালা না নিয়ে আসেন।