এক নজরে

বিশ্বায়ন আর কর্পোরেটের হাত ধরে বাবার জন্যও আলাদা দিন

By admin

June 20, 2021

কলকাতা ব্যুরো: বিশ্বায়নের দৌলতে পৃথিবী ক্রমশ ছোট হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ায় আরো কাছে এসেছে মানুষ। কিন্তু আন্তরিকতা বা আত্মার যোগ কমে মানুষ অনেকটাই এখন যান্ত্রিক ভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বায়নের সঙ্গেই বাজার অর্থনীতির হাত ধরে ভারতবর্ষের মত দেশেও এসেছে বিভিন্ন দিবস পালনের উৎসব। গত কয়েক বছর ধরে যেমন ভ্যালেন্টাইনস ডে এদেশে পালিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে প্রতিটি দিবস পালন এখন একটা উৎসবের চেহারা নিয়েছে, যার অধিকাংশটাই ভার্চুয়াল। কিছু কর্পোরেটের দৌলতে মধ্য বিত্তের হেশেলে এখন এমন উৎসবের ঢেউ।এরইমধ্যে মানুষ নিজের নিজের মতো করে পালন করছে এমন পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা উৎসবের দিন। যদিও এমন সব দিনের সূচনার কিছু প্রাক কথন আছে। আর তা না না দেশে ছড়িয়ে। ধীরে ধীরে সেইসব বিদেশের পালিত দিনগুলি এখন আমরা আমাদের মত করে আপন করছি। যেমন ফাদারস ডে কথাই ধরা যাক। আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে এই দিন। কিন্তু বাবা-মায়ের জন্য কি আলাদা করে কোনো দিন থাকতে পারে? বিতর্ক চলবেই। এর মধ্যে আসুন একটু গল্পগুলো পিছনের দেখেনি।কথিত আছে যে এটি একজন আমেরিকান মহিলার বাবার প্রতি স্বরণ কে শ্রদ্ধা জানাতেই ফাথার্স ডে পালনে জাক জমক। যাকে তার বাবাই বড় করেছিলেন। সোনোরা স্মার্ট ডড, যিনি ১৮৮২ সালে আরকানসাসের সেবাস্তিয়ান কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। এরপরেই তাঁর বাবা উইলিয়াম স্মার্ট তাঁর এবং তাঁর পাঁচ ভাইকে বড় করেছিলেন। ডডকে আশ্বস্থ করা হয়েছিল যে তার গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞ পিতাকে সম্মান জানাতে আলাদা কোনও দিন নেই, যিনি একা একা তার সন্তানদের বড় করেছেন। ডড চেয়েছিলেন যে তার বাবার জন্মদিন ৫ জুন উদযাপিত হবে, কিন্তু প্রথম পিতৃ দিবস আমেরিকাতে ১৯ জুন ১৯১০ সালে পালিত হয়েছিল। পরে ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রপতি লিন্ডন বি জনসন পিতৃপুরুষদের সম্মান জানিয়ে প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষনা জারি করেন এবং জুনের তৃতীয় রবিবারকে পিতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। ছয় বছর পরে ১৯৭২ সালে, রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন আইনে স্বাক্ষর করলে এই দিনটিকে একটি স্থায়ী জাতীয় ছুটি করা হয়। কিছু দেশে ফাদারস ডে ১৯ জুন উদযাপিত হয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীস, ভারত, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা এবং চিনের মতো বেশিরভাগ দেশে এই দিবসটি জুনের তৃতীয় রবিবার পালিত হয়।

একটা শিশুর কাছে তার পিতা হল একজন হি ম্যান। একটি রোল মডেল। গাইড। সুপারহিরো। বন্ধু এবং সুরক্ষক। যিনি যে কোনো মুহুর্তে তার সন্তানের পাশে দাঁড়ান। জীবনে চলার পথে সমস্ত বাঁধা জয় করতে এবং যিনি আমাদেরকে জীবনের সঠিক মূল্য শেখান এবং ভেঙে পড়লে আমাদের হাত ধরে তুলে নিয়ে আবার লড়াইয়ের শক্তি দেন, তিনিই বাবা। নিজের সন্তানের জন্য নিজের সবটুকু হাসি মুখে ত্যাগ করতে জানেন, কিন্তু প্রকাশ করতে পারেন না, তিনিই বাবা।সেই মানুষটিকে সন্মান জানাতে বা তার প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বছরের একটা দিন তাকে উপলক্ষ করে পালন করা হয়। অতএব, এই মূল্যবান মানুষটির জন্য একটি বিশেষ দিন এবং শর্তহীন বন্ধনকে স্বীকৃতি জানাতে প্রতি বছর ফাদার্স ডে পালন চলছে।গ্লোবালাইজেশন বা কর্পোরেটের হাতছানি– যাই হোক না কেন, নির্দিষ্ট একটি দিনে এমনভাবে দিবস পালনে ক্ষতি কিছু নেই। তাই বাবার কথা ভেবেই পালন বাবা দিবসের। আবার যে ছেলের ফ্ল্যাটে জায়গার অভাবে বাবা-মাকে ওল্ড এজ হোম এ পাঠাতে হয়, তিনিও না কি এমন দিনে সেখানে গিয়ে বাবাকে ধোপ দুরস্ত পোশাক পরিয়ে সেলফি তুলে গদগদ ক্যাপশনে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে ভোলেন না। তার পরেও এমন দিবস পালন চলছে, চলবে।