২১ এর ধর্মযুদ্ধ

শওকত আর আব্বাসেই তটস্থ কমিশন

By admin

April 05, 2021

কলকাতা ব্যুরো: মৌখালীতে ভেরির মাঝে গুমটি ঘরে বাইরের লোক বসে রয়েছে। খবর পেয়ে বাহিনী ছুটলো। কিন্তু কোথায় কি! সোমবার রাতে প্রায় একই সময় ফলতায় কোন বিজেপি সমর্থকের নাকি গলা কাটা দেহ পাওয়া গেছে। আবার দৌড়ল পুলিশ। কিন্তু পাওয়া গেল না কিছুই। তৃতীয় দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৬ বিধানসভায় নির্বাচনের আগের রাতে এমনি আতঙ্ক আর গুজব ছড়ানো হলো ভোটের এলাকাগুলিতে।একদিকে মৌখালী, ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার মধ্যে পরে। এই দফায় নির্বাচন কমিশন থেকে বাহিনী হয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, শওকত মোল্লার খাস তালুকে এবার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক। ফলে সেখানে অশান্তির আশঙ্কায় এজেন্সিগুলি আগেভাগে রিপোর্ট দিয়ে রেখেছে।

বাদ নেই ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তগত চারটি বিধানসভা এলাকাও। কারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা এলাকায় ভোট করানো এবার একটা বড় চ্যালেঞ্জ কমিশনের। মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য এবার কমিশনকে আলাদাভাবে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু কেন এই এলাকায় এত বিপুল পরিমাণ বাহিনী দিতে হচ্ছে কমিশনকে?২০১৬ র বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে তৃণমূল নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করলেও, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮ টি আসন পায় ও প্রায় সব জেলাতেই নিজেদের ভোট বাড়িয়ে নেয়। সে ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কারণ এই জেলাতেই একটি আসনও পায়নি বিজেপি। এমনকি প্রায় সব বিধানসভাতে ২০১৬ র ভোট ধরে রেখেছিল তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাএর একটি বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন বিজেপির স্থানীয় নেতারা। সে কারণেই এবার বিজেপির বাড়তি নজর এই জেলায়। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার এই জেলায় গত কয়েকদিনে সভা করেছেন। অমিত শাহ, জেপি নাড্ডার মত প্রথম সারির বিজেপি নেতারা প্রায় ডেলি প্যাসেঞ্জারের মতো উড়ে এসে এই জেলায় যত্রতত্র সভা করছেন।

মূলত বাসন্তী রোড লাগোয়া ক্যানিং পূর্ব বিধানসভায় এবার রীতিমতো শওকত মোল্লাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল। ভোট প্রচারে এসে এই ধর্মগুরু যেভাবে প্রচারে বাজার গরম করেছেন,তাতে তাদের সমর্থক মূলত ইয়াং জেনারেশনের ছেলেদের থেকে ভালই সাড়া পেয়েছেন। তারই সঙ্গে এই এলাকায় কয়েক মাস আগে আব্বাস সিদ্দিকীকে হেনস্থা করা হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে শওকত মোল্লার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাই এক সময় সিপিএমের ডাকাবুকো নেতা রেজ্জাক মোল্লার ডানহাত হিসেবে একশন স্কোয়ারড চালানো শওকতকে পরে তৃণমূলেও কোনদিনই নিজের এলাকায় বিরোধীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। এবার যে চ্যালেঞ্জ তাকে দিয়ে দিয়েছে আব্বাসের দল। তাই মৌখালী, ঘুটিয়ারি শরীফ থেকে চন্দনেশ্বর বা আশপাশের এলাকা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত নির্বাচন কমিশন।

আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা এলাকায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে টিকিট পাওয়া ডায়মন্ড হারবার এর বিধায়ক দীপক হালদারকে মারধোর করা হল। ফলতার বিজেপি বিধায়ক প্রার্থীকে ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে জখম করার মতো একের পর এক ঘটনায় বিজেপির তরফ রয়েছে কমিশনের উপরে প্রবল চাপ রয়েছে। এই অবস্থায় ১৬ টি বিধানসভার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রায় সবকটিকে স্পর্শ কাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন।বিজেপির উত্থান চাপে রেখেছে তৃণমূলকে মগরাহাট, উস্তির একশন স্কোয়ারড কেও। সেখানে আব্বাসের দল যেমন শক্ত হয়ে উঠেছে, তেমনি কুলতলী, জয়নগর বজবেগ দিতে পারে শাসক দলকে। এই অবস্থায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গেই হাওড়া উলুবেরিয়া, বাগনান এবং হুগলির কিছু এলাকায়, যেখানে আব্বাসের দল শক্ত-সমর্থ হয়ে উঠেছে, সেখানে তৃতীয় দফার ভোটে বড় গোলমালের আশঙ্কা থেকে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন তৃতীয় দফার ভোট রক্তপাতহীন করতে পারলে বাকি পাঁচ দফায় পরিচালনার ক্ষেত্রে একটা বড় পরীক্ষা তাদের হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিকরাও।