এক নজরে

#ED Raid : ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ মডেল অর্পিতার বাড়ি থেকে ২০ কোটি টাকা উদ্ধার

By admin

July 23, 2022

কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নয়া মোড়৷ এসএসসি দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার দিনভর শহরের নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে ইডি (ED Raid)। এবার তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হলো (ED Raid) কুড়ি কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, এদিন রাতের দিকে ডায়মন্ড সিটির বাসিন্দা ওই মডেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ২০ কোটি টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০ টি মোবাইল। ইডি সূত্রে খবর, মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে এসব উদ্ধার হয়েছে।

রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তিনি। টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে এত সম্পত্তির হদিশ পান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা (ED Raid)। অর্পিতার কাছে কোন সূত্র ধরে এত টাকা এল, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা (ED Raid)।

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সকালে থেকেই নানা দলে ভাগ হয়ে কলকাতার একাধিক জায়গায় তল্লাশি শুরু করেন ইডি (ED Raid) ও সিবিআই আধিকারিকরা। এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে যাঁদের নাম উঠেছে, সেসব ব্যক্তিদের বাড়িতেই মূলত পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে যায় ইডির একটি দল। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন আধিকারিকরা (ED Raid)। টানা প্রায় ১১ ঘণ্টা জেরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বাড়িতে চিকিৎসক ডেকে চিকিৎসাও করা হয়।

তবে এইটুকুতেই মেলেনি রেহাই। আর রাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মডেল অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে এত বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পর নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ে বাড়ির চত্বর যেন আরও থমথমে। এখনও ঠায় মোতায়েন রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। রয়েছেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরাও। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী অনিন্দ্য কিশোর রাউত বেশ কয়েকবার বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। বাইরে থাকা পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। তারপর আবারও ভিতরে ঢুকে গিয়েছেন।

জানা গিয়েছে এদিন রাত বাড়তেই নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED Raid) আরও এক নতুন আধিকারিক। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। একটি সাদা গাড়ি ঢোকে নাকতলায়। গাড়িটি সোজা গিয়ে থামে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে। ইডির নতুন আধিকারিক সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানও অর্থাৎ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটসাঁট করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া ওই ২০ কোটি টাকা নিয়ে ইডির (ED Raid) প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

অর্পিতা নাকতলা উদয়ন সংঘের মডেল। সেই টাকা কার, কোথা থেকে তাঁর কাছে এল – সেসব জানতে মরিয়া ইডি (ED Raid)। এই টাকার সঙ্গে এসএসসি দুর্নীতির যোগ আছে বলেই প্রাথমিক ধারণা দুঁদে তদন্তকারীদের। ইডি সূত্রে খবর, অর্পিতার বাড়ি থেকে বিদেশি মুদ্রা, সোনাও পাওয়া গিয়েছে। টাকা গোনার জন্য তিনটি মুদ্রা গণনার মেশিন আনা হয়েছে। এদিকে কোথা থেকে এলো এত টাকা? সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকদের (ED Raid) এ প্রশ্নে কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে টাকা গোনার কাজ।

অন্যদিকে এদিনের তদন্তে ২০ কোটি টাকার পাশাপাশি ২০টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। এদিকে আবাসনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় থাকতেন সেখানে ইতিমধ্যেই জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে ইডি (ED Raid)। গোটা আবাসন ঘিরে রেখেছে আধা সেনা।

ইতিমধ্যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজ্যের শাসক শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে জানিয়েছেন, এটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এ কিছুই নয়। তদন্ত যখন আরও এগোবে, যখন ইডি (ED Raid) আরও ক্লু পাবে, তখন আরও বড় বড় অঙ্ক ধরা পড়বে। রাজ্যে চাকরিগুলিকে বিক্রি করেছে রাজ্য সরকার। যে টাকাগুলি দেখা যাচ্ছে, ওগুলি টাকা নয়, ওগুলি আমাদের বেকার যুবক-যুবতিদের চোখের জল। তাঁদের চোখের জলগুলি সেখানে পুঞ্জীভূত হয়ে টাকা হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

টুইটারে খোঁচা দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন, “এটি কি হিমশৈলের চূড়া?”

এরপর আরও একটি টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে একটি ছবি পোস্ট করেছেন শুভেন্দু। তার সঙ্গে বিরোধী দলনেতা টুইটে লিখেছেন, গিল্টি অব অ্যাসোসিয়েশন (সঙ্গ দোষ)। একটি আইনি পরিভাষা, যা বোঝায় তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, যখন কারও সঙ্গে পরিচয় থাকার ভিত্তিতে কেউ অভিযুক্ত হয়। সঙ্গে তিনি আরও বলেন, এমনিই বললাম। এ তো শুধু ট্রেলার। পুরো ছবি এখনও বাকি রয়েছে।

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বাগদার কথিত রঞ্জন যে টাকা পাঠাতেন কলকাতায়, সেটি কার ঠিকানায়? মানিক বাবুর ঠিকানায়? নাকি পার্থ বাবুর ঠিকানায়? নাকি অর্পিতা দেবীর ঠিকানায়? নাকি একেবারে কালীঘাটে শান্তিনিকেতনে? কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এল? নিজেদের কোনওদিন শ্রম করতে হয়নি। লোকের পয়সা এভাবে ছিনতাইবাজি করে যাবে? তারপরেও শাস্তি হবে না! এ কোনওদিন হতে পারে? ২০ কোটি টাকা!
রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়িয়ে সুজনবাবু আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সবকিছু জানেন। বাংলার দুর্ভাগ্য। এরা বাংলার মান-সম্মান নষ্ট করল। এরা বাংলার কুলাঙ্গার।
তবে বিরোধীদের অপপ্রচার, গুজবে কান দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে চার লাইনের একটি টুইট করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র। সেখানে তিনি লিখেছেন, ইডি (Ed Raid) যে টাকা উদ্ধার করেছে, তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এই তদন্তে যাদের নাম আসছে, এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের বা তাঁদের আইনজীবীদের। কেন দলের নাম জড়িয়ে প্রচার চলছে, দল নজর রাখছে। যথাসময়ে বক্তব্য জানাবে।

উল্লেখ্য, জুনের শেষ থেকেই এসএসসির দুর্নীতি মামলায় আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তদন্তের গতি বাড়িয়েছে ইডি। সম্প্রতি ৬০ জন প্রাথমিক শিক্ষককে সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করে ইডি। অভিযোগ, ওই সব শিক্ষকদের নিয়োগ করা হলেও তাঁদের কোনও ওএমআর শিট ছিল না। ইতিমধ্যেই লেনদেনের কিছু নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে ইডি। বাগদা-রঞ্জন কাণ্ডেও একাধিক সূত্র মিলেছে। সেই তদন্তের অগ্রগতির জন্যই ওই শিক্ষকদের তলব করেছিল ইডি।