এক নজরে

পতিতালয়ের মাটি ছাড়া কেনো অসম্পূর্ণ দূর্গা পূজা

By admin

October 13, 2020

কলকাতা ব্যুরো : সারা পৃথিবীর মানুষ যার আরাধনায় মত্ত হবেন সেই দেবী দুর্গার মূর্তি অসম্পূর্ণ পতিতালয়ের মাটি ছাড়া। শুধু অবশ্য পতিতালয়ের মাটি নয়। পাঁচটি জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন দুর্গার মূর্তি গড়ার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে গাভীর মূত্র, গোবর, গঙ্গা জল, ধানের শীষ এবং নিষিদ্ধ পল্লীর মাটি। সমাজ যতই দূরে ঠেলে দিক তাদের, ঘৃনা আর নোংরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাক তাদের দিকে, হিন্দু বা সনাতন ধর্ম যখন মৃন্ময়ী রূপে চিন্ময়ীকে পূজা করে তখন তাদেরও কিন্তু স্থান দেওয়া হয়। পুরুষের ভোগ , লালসার ত্রাতা যে বেশ্যা সমাজ তা স্বীকার করে নিয়েছে শাস্ত্র। আর সেজন্যই তাদের নিষিদ্ধ পল্লীর মাটির প্রয়োজন পরে দুর্গার মূর্তি গড়তে।

দুর্গার পবিত্র, শুভ্র রূপ সম্পূর্ণ করে এই মাটিও। এই মাটি জোগাড় করতে পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয় কুমোরপাড়ায়। তারপর কাদামাখা শিল্পীর হাতে এক মেটে দু মেটে করে প্রলেপ দিয়ে তৈরি করে সেই মৃন্ময়ী মূর্তি যা বাংলা থেকে বিদেশ পর্যন্ত পূজিত হয়। বিশ্বজননী তৈরি হয়ে ওঠার পিছনে এই কাহিনী হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু কেনো লাগে ওই তথাকথিত অশুচি এলাকার মাটি ? শাস্ত্র বলছে, পুরুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় তখন সে তার সমস্ত অর্জিত পূণ্য বারাঙ্গনার ঘরের বাইরে ফেলে দিয়ে তারপর পতিতালয়ে প্রবেশ করে।

ছবি- ইন্দ্রনীল বসু

অন্যদিকে পুরুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা আর লালসার বাস, পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে অশুদ্ধ সমাজকে শুদ্ধ ও পবিত্র করেন । ফলে একদিকে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি যেমন পবিত্র হয়ে ওঠে, অন্যদিকে সমস্ত পুরুষের পাপ গ্রহণ করে পতিতারা হয়ে ওঠেন সাক্ষাৎ দেবী মূর্তি। এছাড়া এর আর একটি ব্যাখ্যাও আছে অবশ্য। অবশ্য সে ব্যাখ্যাকে ধার্মিক না বলে আধ্যাত্মিকই বলা চলে। সনাতন হিন্দুরা বিশ্বাস করেন পরম ব্রহ্ম বা আদ্যা শক্তিতে। ব্রহ্ম ও শক্তি একই। প্রথমটি স্ট্যাটিক ফোর্স আর দ্বিতীয়টি ডাইনামিক ফোর্স। বিভেদ নেই কিছুই। এই ব্রহ্ম বা শক্তি সমস্ত কিছুর উর্ধে। পাপ – পূণ্য, ভালো – খারাপ, অর্থাৎ পৃথিবীতে যত বিরুদ্ধ মত আছে তার উর্ধে যা সেটাই ব্রহ্ম বা শক্তি। বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা তারই প্রতীক। না পাপ না পূণ্য, না ভালো না খারাপ বা দুইয়ের সংমিশ্রণ। সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে পরম ব্রহ্ম বা আদ্যাশক্তি।