পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এবার বিজেপি মহিলা ‘মুখ’কে সামনে রেখেই এগোতে চাইছিল। যে কারণে রাইসিনা হিলসের দৌড়ে অন্তত তিন জন মহিলা ছিলেন- তামিলসাই সৌন্দরাজন, আনন্দীবেন প্যাটেল এবং দ্রৌপদী মুর্মু। এই তিন মহিলাকে নিয়েই বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উপস্থিতিতে আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত দ্রৌপদীকেই (Draupadi Murmu ) সর্বসম্মতিক্রমে বেছে নেওয়া হয়।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের হাতে যে সংখ্যা ছিল, তাতে নির্বাচনের আগেই দ্রৌপদী (Draupadi Murmu) কার্যত ‘ওয়াকওভার’ পেয়ে গিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে ‘ক্রস ভোটিংয়ের’ সুবিধাও তাঁর পক্ষে ছিল। সবমিলিয়ে ভোটগণনার তৃতীয় রাউন্ডেই মোট বৈধ ভোটের ৫০ শতাংশ পেরিয়ে যান তিনি। সংসদ ভবনের ৬৩ নম্বর ঘরে প্রথমে সাংসদদের ভোট গণনায় দেখা যায়গত ১৮ জুলাই ভোটে হাজির থাকা সাংসদ-বিধায়কদের একটা বড় অংশই দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দিয়েছেন। প্রথম রাউন্ডে ৭৬৩ জন সাংসদের মধ্যে ৫৪০ জনের সমর্থন পান দ্রৌপদী। যার ভোটমূল্য ৩,৭৮,০০০। অন্যদিকে যশবন্ত সিনহা পান ২০৮ জনের সমর্থন। যার ভোটমূল্য ১,৪৫,৬০০। প্রথম ১০ টি রাজ্যের বিধায়কদের ভোটেও এগিয়ে ছিলেন দ্রৌপদী। দ্বিতীয় রাউন্ডে মোট বৈধ ভোট ছিল ১১৩৮। যার ভোটমূল্য ১,৪৯, ৫৭৫। তার মধ্যে দ্রৌপদী পান ৮০৯ ভোট যার মূল্য ১.০৫,২৯৯।
অন্যদিকেযশবন্ত সিনহা পান ৩২৯ ভোট যার মূল্য ৪৪,২৭৬। তৃতীয় রাউন্ডে কর্নাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা ও পঞ্জাবের বিধায়কের ভোট গণনা হয়। এই রাউন্ডের শেষে বৈধ ভোট ৩২১৯। ভোটমূল্য ৮,৩৮, ৮৩৯। এর মধ্যে দ্রৌপদী পান ২১৬১ ভোট। যার ভোট মূল্য ৫,৭৭,৭৭৭। অন্যদিকে যশবন্ত সিনহা পান ১০৫৮ ভোট। যার ভোটমূল্য ২,৬১, ০৬২। ফলে তৃতীয় রাউন্ডের শেষে মোট বৈধ ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেয়ে যান দ্রৌপদী মুর্মু। এর পরেই তাঁকে অভিনন্দন জানান বিরোঘী প্রার্থী যশবন্ত সিনহা।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা দিল্লিতে দ্রৌপদী মুর্মুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। ইতিমধ্যে দিল্লিতে উৎসব শুরু হয়ে যায়।
দ্রৌপদী মুর্মু ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার একজন আদিবাসী। প্রসঙ্গত, রামনাথ কোবিন্দও দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। সেই হিসেবেই বিজেপিগত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তাঁকে তুলে ধরেছিল। কিন্তু, তাঁর জমানায় দলিতদের ওপর একের পর এক হামলা হলেও কোবিন্দকে কোনও দিনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি। ন্যাশনাল ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে উত্তর প্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অত্যাচার বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এছাড়াও বিজেপি শাসিত হরিয়ানা ও গুজরাটেও অত্যাচার বেড়েছে। দলিতদের ওপর অত্যাচার করে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে উঁচু তলার মানুষ। তাই দলিত সম্প্রদায়ের লোকদের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা অসম্ভব হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশও মামলা নিতে চায় না। মামলা করলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে দলিতদের তা প্রত্যাহার করতে হয়।
ইন্ডিয়া টুডের একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিদিন দলিত সম্প্রদায়ের ছ’জন মহিলা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বিগত কয়েক বছরে দেশে দলিত নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। দেশের শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত ৬০ শতাংশ মানুষ কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের ৫৫ শতাংশই কৃষিকাজে জড়িত। দলিত পরিবারের শিশুদের ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশই অপুষ্টিতে ভোগে। একই সঙ্গে স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ জল ব্যবহারের সুযোগ পান ২০ শতাংশেরও কম মানুষ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রেও দলিতরাবৈষম্যের শিকার। দলিতরা দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ নামের সংগঠনের উচ্চবর্ণের হিন্দু শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ভয়ে সিটিয়ে থাকেন।গত পাঁচ বছরদলিত রাষ্ট্রপতি এসব বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন।