এক নজরে

Royal Bengal Tiger Gosaba: গোসাবায় জোড়া বাঘ দুই গ্রামে

By admin

January 01, 2022

কলকাতা ব্যুরো: বছরের প্রথম দিনেই জোড়া বাঘের উপস্থিতিতে রীতিমতো আতঙ্ক গোসাবায়। গত দু’দিন ধরে একটি বাঘ লাহিড়ীপুর থেকে সাতজেলিয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা দৌড় করিয়েছে বনদপ্তর ও গ্রামবাসীদের। সাতজেলিয়ায় খাঁচা পেতে যখন সেই বাঘ ধরার চেষ্টা চলছে শনিবার সন্ধ্যায়, ঠিক তখনই খবর এলো, কুমিরমারীতে গ্রামে ঢুকে পড়েছে একটি বাঘ। গ্রামের একটি কলাবাগানের মধ্যে সে ঘাঁটি গেড়েছে। সেই বাঘের ছবি সামনে আসার পরেই, জোর জল্পনা কুমিরমারিতে একটি নয়, দুটি বাঘ দেখা গিয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত দুটি বাঘের সত্যতা মেলেনি।

এই অবস্থায় একদিকে সাতজেলিয়া ও অন্যদিকে কুমিরমারির গ্রামে ঢুকে পড়া দুটি বাঘকে কিভাবে গ্রাম থেকে উদ্ধার করা যায়, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত কিছুটা দিশেহারা বনদপ্তর এর আধিকারিকরা। এদিকে এদিনই কুলতলিতে মাছ ধরতে গিয়ে তিনজন বাঘের হামলার শিকার হন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আবার এদিন সাতজেলিয়ায় সকালেই ওই বাঘের হামলায় এক বন কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন।ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কুলতলির গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়ে। দুদিনের মাথায় সেই বাঘ কব্জা করে বন দপ্তর। আবার মাসের শেষে কুলতলীর পিয়ালী এলাকায় নতুন বাঘের উৎপাত শুরু হয়। একের পর এক গ্রাম ঘুরে রীতিমতো বনদপ্তরকে নাকানিচোবানি খাওয়ায় সেই বাঘ। শেষ পর্যন্ত ছয় দিনের মাথায় তাকেও খাঁচা পেতে ধরা হয়। তার আগে গুলি ছুড়ে কাবু করতে হয় সেই বাঘটিকে।

এরই মধ্যে গোসাবায় নতুন বাঘের গ্রামে ঢুকে পড়ার খবর আসে। বছরের শেষে সেই বাঘ গভীর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে প্রথমে লাহিরিপুর গ্রামে ঢুকে পরে। শুক্রবার লাহীরিপুরে দীর্ঘ এলাকা জাল দিয়ে ঘেরা হয়। কিন্তু সেই এলাকায় বাঘের ছাপ পাওয়া গেলেও, শনিবার সকাল থেকে সেখানে আর তার হদিস মেলেনি। এদিন সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাতজেলিয়ায় বাঘের অস্তিত্ব মেলে। সেখানেও সারাদিন ধরে নদীর ধার দিয়ে জাল ঘিরে, খাঁচা পেতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে ধরার চেষ্টা চলে। কিন্তু রাত পর্যন্ত তার গর্জন শোনা গেলেও রয়াল বেঙ্গল ধরা দেয়নি।

তবে সেখান থেকে আরও কয়েক কিলোমিটার দূরে কুমিরমারিতে গ্রামে বাঘ ঢুকেছে বলে বিকেলেই খবর পাওয়া যায়। গ্রামবাসীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজখবর করে একটি কলাবাগানের মধ্যে তার অস্তিত্ব খুঁজে পায়। কিন্তু সেখানে বনদপ্তর এর কিছু কর্মী গেলেও গ্রামবাসীরা নিজেরাই তৎপর হয়েছেন। রাতে বনদপ্তর এর সঙ্গেই গ্রামবাসীরা মশাল জ্বেলে, ক্যানেস্তারা পিটিয়ে বাঘটিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। এমনকি দিনের বেলায় বনদপ্তর ব্যাটারি চালিত মাইকে বাঘিনীর গর্জন শুনিয়ে বাঘটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাতে ফল হয়নি। পর পর এত বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়ায় কারণ নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।

এত বাঘ পরপর কেন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে তা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। বনদপ্তর এর দাবি, জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কোন ভাবে জঙ্গলের মধ্যে বাঘেদের নিরাপত্তার অভাব হচ্ছে কিনা। নাকি অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে বাঘ গ্রামে চলে আসছে। যদিও এখন এসব প্রশ্ন এড়িয়ে বনদপ্তর এর চ্যালেঞ্জ দুই গ্রামের দুটি বাঘকে নিরাপদে উদ্ধার করা কারণ অতীতে সুন্দরবনের সাতজেলিয়া বা কুমিরমারির বাঘ সম্পর্কে খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে বনদপ্তরের আধিকারিকদের। তাই তারা দ্রুত যত বেশি সম্ভব কর্মীদের ওই দুই গ্রামে পাঠিয়ে, কোনভাবে অক্ষত অবস্থায় বাঘ দুটিকে উদ্ধার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে সেইভাবে পদক্ষেপ করছেন।